ডেস্ক রির্পোট:- সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আন্দোলন শুরু করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার ভোর হতেই ‘আমার ভাই নিহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগানে মুখরিত হতে থাকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল। সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ মাহবুবুর রহমানের কক্ষসহ বেশ কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা।
হল চত্বর এলাকায় দেখা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে স্লোগান দিয়ে বের হয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এবং হলের সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। তবে তারা নির্লিপ্ত ভূমিকায় রয়েছেন।
এরই মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করছে। আপনারা এই কাজটিকে অব্যাহত রাখুন এবং সবাই সংঘবদ্ধ থাকুন। যদি কোথাও কোনো বাধা আসে তাহলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা মোকাবিলা করব। এখন থেকে হল পরিচালনা করবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।’
এর আগে গতকাল মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকা বিনতে হোসেনসহ ১০ জন ছাত্রলীগ নেত্রীকে টেনে হিঁচড়ে বের করে দেন শিক্ষার্থীরা।
পরবর্তীতে ছাত্রলীগের নেত্রীরা হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নিলুফার পারভীনের কাছে আশ্রয় নেন। প্রাধ্যক্ষের বাংলোতে গিয়ে ‘রোকেয়া হল ছাত্রলীগ ও রাজনীতিমুক্ত করা হলো’ ঘোষণা সংবলিত স্বাক্ষরসহ লিখিত নেন শিক্ষার্থীরা। আজ সকাল ৮টার মধ্যে হল ছাত্রলীগ নেত্রীদের হল ত্যাগের আল্টিমেটাম দেন ছাত্রীদের বাকি চার হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
পরে রাত ৩টার সময় শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় শিক্ষার্থীরা হল শাখা ছাত্রলীগের চিহ্নিত নেতা-কর্মীদের হল থেকে বের করে দেন এবং তাদের কক্ষ ভাঙচুর করেন। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হল গেটে এসে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীরা জানায়, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হল থেকে চলে যায়। শিক্ষার্থীরা তাদের কক্ষ ভাঙচুর করে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতারা বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ করে।
এ সময় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পাঁচটি নির্দেশনা প্রদান করে বিজ্ঞপ্তি দেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহিম।
নির্দেশনাগুলো হলো—শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে স্থায়ীভাবে সকল প্রকার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলো; কোনো বহিরাগত হলে অবস্থান করতে পারবে না; শিক্ষার্থী কোনো প্রকার ক্ষতির (শারীরিক ও মৌখিক) সম্মুখীন হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে; প্রশাসনিকভাবে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সিট বণ্টনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং হলের সকল ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শুধু শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল নয়, মধ্যরাতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে হাজী মুহম্মদ মহসীন হল ও মাস্টারদা সূর্যসেন হলেও।
শিক্ষার্থীদের তোপের মুখের ভয়ে স্যার এ এফ রহমান হল, অমর একুশে হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, বিজয় একাত্তর হল ও কবি জসীমউদ্দিন হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হল ছেড়ে চলে গেছেন বলে হলগুলোর একাধিক শিক্ষার্থী আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন।
শিক্ষার্থীদের এ অবস্থানের কারণে হল ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে অন্তত ২০ জন ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, শিক্ষার্থীরা যেভাবে অবস্থান নিচ্ছে, যে কোনো সময় তাদের ওপর হামলা হতে পারে। এ কারণে তারা আপাতত সরে গেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের এক শীর্ষ পদপ্রত্যাশী বলেন, ‘ফজরের পর হল ছেড়ে চলে আসছি। কী হয় জানি না।’
এ বিষয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন বলেন, ‘হলে আসলাম। এখন পর্যবেক্ষণ করতেছি। পরে আপডেট জানাব।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমানকে মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।আজকের পত্রিকা