ডেস্ক রির্পোট:- কোটা আন্দোলনের নিহতদের শিক্ষার্থীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বুধবার গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। এদিন বাদ যোহর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে এই গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে সারাদেশে এই গায়েবানা জানাজা করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
মঙ্গলবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল গায়েবানা জানাজা পালন করবে। এরপরে যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বসে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবেন।
স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কর্মসূচিকে ব্যহত করার জন্য এধরণের কর্মসূচি নিয়ে থাকে, সেভাবেই সেটা তারা নিয়েছে। যাতে ছাত্ররা আন্দোলন করতে না পারে। আমরা বিশ্বাস করি, এই আন্দোলনকে সহজে বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা (সরকার) যেসমস্ত কথা বলেন যার সঙ্গে সত্যের কোন সম্পর্ক নেই। যখন আমাদের সন্তাদের হত্যা করে তখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলো নিশ্চুপ থাকতে পারি না। আগামীকাল গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
আর প্রয়োজন হলে দেশবাসীকে নিয়ে আমরা আরও বড় আন্দোলনে যাবো।
মির্জা ফখরুল বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এ পর্যন্ত ৬ জন নিহত হয়েছে। আমাদের ছাত্রদের হত্যা করা হয়েছে। আমরা এসব ঘটনার আগেও তীব্র নিন্দা জানিয়েছি।
যুগপৎ আন্দোলনের রাজনৈতিক দলগুলোর যৌথ বিবৃতি: এই বিবৃতি সংবাদ সম্মেলনে পাঠ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, গত ৪৮ ঘন্টায় চিহ্নিত সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে যেভাবে দেশব্যাপী সহস্রাধীক ছাত্র-ছাত্রীদের আহত হবার ঘটনা ঘটেছে, অনেকে গুরুতর আহত অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। আমরা মনে করি, এই সমুদয় ঘটনার পুরো দায়-দায়িত্ব সরকার ও সরকারি দলের। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যেভাবে উস্কানি সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ছাত্রলীগকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ যৌক্তিক আন্দোলন মোকাবেলা করার নির্দেশনা নামে দেয়া হয়েছে তা গত ২ দিনের সমগ্র ঘটনার ক্ষেত্র তৈরী করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এই পরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের তীব্র প্রতিবাদ করে বলতে চাই যে, দমন-নিপীড়ন ও সহিংসতা চালিয়ে সরকার আজ এই পরিস্থিতি তৈরী করেছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, এখনও পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত শতাধিক সরকার দলীয় স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওয়াত আনা হয়নি। আমরা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের’ গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি পূরণে কার্যকরী ও বিশ্বাসযোগ্য উদ্যোগ নেয়ার পরিবর্তে ছাত্র তরুণদের এই আন্দোলনে সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত যেভাবে ঠান্ডায় মাথায় পরিকল্পিতভাবে বলপ্রয়োগ করা হয়েছে এবং সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগসহ তাদের বিভিন্ন সংগঠন ও আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর হাতে যেভাবে প্রায় সারা দেশে হামলা, আক্রমণ ও গুলিবর্ষণ করা হয়েছে, গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ৭জনকে হত্যা হয়েছে এই ঘটনায় আমরা ক্ষোভ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
ফখরুল বলেন, আমরা আজ পুলিশের গুলিতে ও ছাত্রলীগের স্বশস্ত্র হামলায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের জন্য আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। আমরা নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনাও জ্ঞাপন করছি। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সাংবাদিক আহত ও নির্যাতিত হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে কোটা ব্যবস্থার ন্যায্য ও যৌক্তিক সংস্কারের দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই যে, হত্যা, দমন-নিপীড়ন করে অতিতের কোন স্বৈরাশাসক যেমন শেষ রক্ষা করতে পারেনি বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারও দমন-নিপীড়নের এই পথে শেষ রক্ষা করতে পারবে না। এছাড়া দেশবাসীকে ছাত্র সমাজের এই ন্যায্য ও গণতান্ত্রিক দাবির পক্ষে সোচ্চার হতেও উদ্দাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব ড. আবু ইউসুফ সেলিম উপস্থিত ছিলেন।