ডেস্ক রির্পোট:- প্রতি মাসে তিন ঘণ্টার একটি সভা করেন। পুরো মাসে আর তেমন কোনো কাজই থাকে না। এমনকি টাওয়ারে সভা করা ছাড়া মাসে আর একবারের জন্যও পা পড়ে না। এ কাজের জন্য মাসিক সম্মানীর নামে আইআইইউসি টাওয়ার থেকে ১০ লাখ ৯ হাজার টাকা নিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান সাবেক এমপি অধ্যাপক আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুউদ্দিন নদভী।
১৫ তলা এই টাওয়ার চট্টগ্রামের বেসরকারি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসি) ট্রাস্টভুক্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। শুধু নদভী নন, ওই একটি সভায় উপস্থিত থেকে তাঁর স্ত্রী রিজিয়া সুলতানা চৌধুরী ৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা মাসিক সম্মানী নিচ্ছেন। আইআইইউসি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক কাজী দ্বীন মুহাম্মদ নিচ্ছেন ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এভাবে নদভী দম্পতির নেতৃত্বে সম্মানীর নামে টাওয়ার ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৬ জন মাসে ২৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা নিচ্ছেন। এই হিসাবে তিন বছরে সম্মানীর নামে তারা নিয়েছেন ১০ কোটি ১ লাখ টাকা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের অর্থ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীর ব্যয় ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করার সুযোগ নেই। কিন্তু মাসিক সম্মানী, উৎসব ভাতা, চিকিৎসা, জ্বালানি, মোবাইল ফোনের টাকা, এমনকি গাড়ি কেনার নামে ঋণ দেখিয়ে অর্থ নয়ছয়ের উৎসব চলছে।
২০১৫ সাল থেকে টাওয়ারের ১৫টি ফ্লোর ভাড়া দিয়ে মাসে সোয়া কোটি টাকার বেশি আয় হচ্ছে। এ আয়ের তিন ভাগের এক ভাগ টাওয়ার ব্যবস্থাপনা কমিটির নামে ব্যয় দেখানো হয়। ২১ জন স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী মূলত ট্রাস্টের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। কিন্তু চেয়ারম্যান নদভী টাওয়ার কমিটির নামে কিছুদিন পরপরই নিজেদের মাসিক সম্মানী ও অন্যান্য ভাতা বৃদ্ধি করেন। দেড় বছরে নদভীর স্ত্রী রিজিয়ার মাসিক সম্মানী তিনবার বাড়ানো হয়। কমিটির অন্য সবার একবার করে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত সম্মানী বাড়ানো হয়েছে।
সম্মানী, ভাতা, গাড়ির ঋণ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু রেজা নদভী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
টাওয়ার ব্যবস্থাপনা কমিটির কো-অর্ডিনেটর ও ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী দ্বীন মুহাম্মদ বলেন, গত জুনে টাওয়ার কমিটির মাসিক সভা হয়েছে। সবাইকে সম্মানী দেওয়া হয়েছে। এটি বৈধ না, অবৈধ এ নিয়ে মন্তব্য করতে পারব না।
টাওয়ারের নথিপত্রে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট টাওয়ার ম্যানেজমেন্ট কমিটির ১৩তম সভায় বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান নদভীর সম্মানী বৃদ্ধি করে ৭ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কো-অর্ডিনেটর দ্বীন মুহাম্মদকে ৪ লাখ টাকা, সদস্য ড. ইঞ্জিনিয়ার রশিদ আহমদ চৌধুরীকে ২ লাখ, সদস্য রিজিয়া সুলতানা চৌধুরীকে ২ লাখ, অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করায় দ্বীন মুহাম্মদকে আরও ৭০ হাজার, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ন কবিরকে ৪৫ হাজার, আফজাল আহমদকে ৪৫ হাজার, ড. মুহাম্মদ মাহী উদ্দীনকে ৪৫ হাজার, শফীউর রহমানকে ৪৫ হাজার, সরওয়ার আলমকে ১০ হাজার, জিয়াউর রহমানকে ১০ হাজার, মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমানকে ১৫ হাজার টাকা প্রতি মাসে সম্মানী দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় ২০২২ সালের ১৪ মার্চ নদভীর সম্মানী ৭ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ ৯ হাজার, দ্বীন মুহাম্মদের ৪ লাখ থেকে ৬ লাখ ৩০ হাজার এবং রিজিয়ার ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিজেরাই বাড়িয়ে নেন। সেই সঙ্গে নদভীর মাসিক জ্বালানি ভাতা ৫০ হাজার, মোবাইল ভাতা ৭ হাজার, ৬ লাখ ২২ হাজার টাকা করে বছরে দুটি উৎসব ভাতা, দ্বীন মুহাম্মদের মোবাইল ভাতা ৩ হাজার ও বছরে ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা করে দুটি উৎসব ভাতা, রিজিয়ার ২ লাখ ২২ হাজার টাকা করে দুটি উৎসব ভাতা ও মোবাইল ভাতা ৩ হাজার টাকা করা হয়। চেয়ারম্যান নদভী ও তাঁর স্ত্রী দেশে চিকিৎসার জন্য ২ লাখ ও বিদেশে চিকিৎসার জন্য সাড়ে ৩ লাখ টাকা বিল পাচ্ছেন।
এদিকে ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট তৃতীয়বার নদভীর স্ত্রী রিজিয়ার সম্মানী ২ লাখ থেকে বৃদ্ধি করে ৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা করা হয়। একই সঙ্গে নতুন করে ট্রাস্টির চার সদস্যকে টাওয়ার কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের মাসিক সম্মানী নির্ধারণ করা হয়। তাদের মধ্যে খালেদ মাহমুদ ১ লাখ টাকা, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর ১ লাখ, অধ্যাপক ফসিউল আলম ৫০ হাজার এবং অধ্যাপক আবদুর রহিম ২৫ হাজার টাকা নিচ্ছেন। এ ছাড়া টাওয়ারের ফান্ড থেকে ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট গাড়ি ক্রয়ের জন্য নদভী ৬৫ লাখ টাকা ঋণ নেন। সমকাল