ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) এবং বিভিন্ন নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির একজন সহকারী পরিচালকসহ আরও ১০-১২ জন কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। পিএসসি তাঁদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁদের কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পিএসসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই কর্মকর্তাদের পল্টন থানায় করা প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় আটক দেখানো হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পিএসসির পুরো পরীক্ষা-প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে কীভাবে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনা যায়, এ বিষয়ে সরকারের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে।
এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় গ্রেপ্তার পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর ছেলে ও ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া নেতা সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সাইম হোসেনের জামিন গতকাল নামঞ্জুর করেন আদালত।
জানতে চাইলে গতকাল বুধবার পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় পিএসসির অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। এসব ঘটনায় আরও যেসব কর্মকর্তা জড়িত, তাঁদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে নজরদারিতে রেখেছে বলেও জানতে পেরেছি।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গত সোমবার সিআইডি ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে ছয়জনই পিএসসিতে কর্মরত। তাঁদের মধ্যে উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীও রয়েছেন। তাঁরা এক যুগে বিসিএসসহ অন্তত ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কোটা-প্রশ্নফাঁস-রাজনীতি: সরকারি চাকরিতে তিন কাঁটাকোটা-প্রশ্নফাঁস-রাজনীতি: সরকারি চাকরিতে তিন কাঁটা
তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডির কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, পিএসসির অধীনে কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই এই চক্রের সদস্যরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে টাকা নিতেন। ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস করে চক্রটি। চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার আগের রাতে চুক্তিবদ্ধ চাকরিপ্রার্থীদের অজ্ঞাত স্থানে রেখে ওই প্রশ্নপত্র ও তার উত্তর দেন।
তদন্তকারীরা বলছেন, এ পর্যন্ত পিএসসির যত প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, সেগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছেন ভেতরের কর্মকর্তারা। সরাসরি প্রশ্ন প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত না থেকেও কীভাবে তাঁরা প্রশ্ন সংগ্রহ করেছেন, তা ভাবিয়ে তুলেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, ফাঁস করা প্রশ্ন গণহারে না ছেড়ে তা বিক্রি করতে পিএসসির তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মাধ্যমে একটি চক্র গড়া হয়। এরা নির্বাচিত প্রার্থীদের কাছে ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন দিতেন। প্রশ্নগুলো যেন বাইরে না যায় সে জন্য বাসা ভাড়া করে প্রার্থীদের তিন-চার দিন ধরে প্রশ্নোত্তর মুখস্থ করিয়ে পরীক্ষার হলে পাঠাতেন। উত্তর প্রস্তুত করতে সাহায্য নিতেন বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদেরও। তবে পুরো ঘটনার সঙ্গে পিএসসির কর্মকর্তারা জড়াতেন না। তাঁরা শুধু প্রশ্নের সেটগুলো পিএসসি থেকে বের করতেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পিএসসির পদস্থ চার কর্মকর্তা প্রশ্নপত্র ফাঁসে সরাসরি জড়িত না থাকলেও পুরো বিষয়টি জানতেন। তাঁরা নিজেদের মুখ বন্ধ রাখতে লাখ লাখ টাকা নিতেন। ওই চারজনসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নজরদারিতে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে, নাকি অভ্যন্তরীণ তদন্তের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পিএসসির আরও বেশ কিছু কর্মকর্তার নাম পাওয়া গেছে। যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পিএসসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদককে তদন্তের নির্দেশ
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার পিএসসির দুই উপপরিচালক আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, ডেসপাচ রাইডার খলিলুর রহমান ও অফিস সহকারী সাজেদুল ইসলামকে গত মঙ্গলবার পৃথক পাঁচটি প্রজ্ঞাপনে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পিএসসি। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দিয়েছে পিএসসি।
আবেদ আলীর ছেলেসহ তিনজনের জামিন নামঞ্জুর
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সাইম হোসেনের জামিন গতকাল নামঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম।
মঙ্গলবার সৈয়দ আবেদ আলীসহ ছয়জন দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে এ মামলায় পিএসসির তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।আজকের পত্রিকা