রাঙ্গামাটি:- এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত পাহাড়ে ১০৭টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২ জনকে হত্যা, ১১৭ জনকে গ্রেপ্তার, ১২ জনকে সাময়িক আটকসহ ৬৭টি গ্রামের কমপক্ষে ৫ হাজার বম সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ এবং ৪৪৮ জন জুম্ম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন।
মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
গতকাল সোমবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ের সামগ্রিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। আওয়ামী লীগ সরকার টানা প্রায় ১৬ বছরের বেশি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকলেও পার্বত্য চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়গুলো বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি। চুক্তিটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পরিবর্তে সরকার আগের শাসকদের মতো ব্যাপক সামরিকায়ন করে দমন-পীড়নের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের নীতি গ্রহণ করেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ৭ এপ্রিল থেকে যৌথ বাহিনীর কেএনএফ-বিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এক শিশুসহ ১২ নিরীহ মানুষকে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্তঃসত্ত্বা, শিশুসহ ১১১ নিরীহ বম ও ত্রিপুরা গ্রামবাসীকে। অত্যাচারের ভয়ে ৪৭টি গ্রামের কমপক্ষে ১ হাজার পরিবারের (৫ হাজার জন) বম গ্রামবাসী অন্যত্র চলে গেছে। তাদের মধ্যে দুই দফায় কমপক্ষে ১৯২ জন প্রতিবেশী রাজ্যে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ভারতের মিজোরামে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত বম শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৩৩। যদিও বেসরকারি হিসাবমতে এ সংখ্যা ২ হাজারের বেশি বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে ১৬ জন, জুম ও বাগান-বাগিচা চাষে বাধা ও ক্ষতি করা হয়েছে ৪২ পরিবারকে এবং সীমান্ত সংযোগ সড়কের কারণে ২৪২ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে ‘সংরক্ষিত এলাকা’ উল্লেখ করে দখল করা হচ্ছে। কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আজাছড়ি ভাঙামুড়া পাড়া এলাকায় কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই দুই জুম্ম গ্রামবাসী উচ্ছেদের শিকার হয়েছে।সমকাল