এক ডিমের দাম ১৫ টাকা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪
  • ৭৬ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ঈদের সময়ে কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও ফের বাড়ছে ডিমের দাম। রাজধানীর বাজারে কোথাও কোথাও একটি ডিমের দাম পড়ছে ১৫ টাকা। গতকাল উত্তর বাড্ডার একটি দোকানে দুটি ডিম কিনতে চাইলে দোকানি ৩০ টাকা মূল্য দাবি করেন। এ হিসেবে ডজন পড়ে ১৮০ টাকা। তবে ওই দোকানেই ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। মিরপুরের কয়েকটি বাজারেও ৬০ টাকা হালিতে ডিম বিক্রি করতে দেখা যায়। হঠাৎ করে ডিমের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় কম আয়ের অনেকে বিপাকে পড়েছেন। যারা বেশি দাম দিয়ে মাছ বা মাংস কিনতে পারেন না তাদের অনেকে ডিম খেয়ে পুষ্টি চাহিদা মেটান।
প্রান্তিক পর্যায়ের ডিমের খামারিদের অভিযোগ যে দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে এর সুফল তারা ভোগ করছেন না। ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ডিম ব্যবসায়ী সমিতির দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেন প্রান্তিক খামারিরা। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিভিন্ন বাজারের ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে বাড়ছে ডিমের দাম।

বরং তারাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে লোকসানে ডিম বিক্রি করছেন বলে দাবি করেন। কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম এভাবে বাড়ছে কেন? ঈদের সময় ডিমের দাম ২ টাকা করে কমলেও এক সপ্তাহ পর দাম বেড়েছে দেড় টাকা করে। সোমবার একটি ডিম কিনতে ভোক্তাদের গুনতে হয় ১৫ টাকা।

ঢাকার তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ায় ডজন হিসাবে ১৬০ টাকায় এবং হালি হিসাবে ৫৫ টাকা দরে ডিম বিক্রি করেন দোকানি। কেউ একটি বা দুটি ডিম কিনতে চাইলে পিস নেয়া হয় ১৫ টাকা। মুদি দোকানি কবির উদ্দিন বলেন, ডিমের দাম আগের মতোই বেড়েছে। পাইকারিতে লাল ডিম ডজন প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায় আর সাদা ডিম ১৪০ টাকায়।

পাইকারি ডিম বিক্রেতা আরিফ বলেন, গত দুই দিনে ১০০ ডিমের দাম ৮০ টাকার উপরে বাড়ছে। আর প্রতি ডিমে বাড়ছে ৮০ পয়সার উপরে। ডজন হিসেবে বললে এখন বিক্রি করছি ১৫০ টাকা, আর দুই দিন আগে ছিল ১৪০ টাকা। দাম কারা বাড়াচ্ছে- এমন প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন, যারা খামারিদের থেকে কিনে, তারাই দাম বাড়ায়। ঈদের পর ডিমের চাহিদা বাড়ছে। দামও হু হু করে বাড়ছে।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, সব কিছুতে চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের দাম বাড়ে। কিন্তু ডিমের দাম বাড়ে সিন্ডিকেটের কারণে। করপোরেটদের তো হাত আছেই। কিন্তু প্রধান দায় ডিম সমিতির। তারা ঈদের পাঁচদিন দাম কমিয়েছিল। আর এই কম দামে ডিম সংগ্রহ করে রেখেছিল। এবার দাম বাড়িয়ে তাদের সংগ্রহ করা ডিম বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে। দিনের বাজার ঠিক আছে। ঘোষণা অনুযায়ী ডিম বেচাকেনা হয়। কিন্তু রাতের বাজারে খামারির কাছ থেকে আনা ডিমের দাম তারা বসিয়ে দেয়।

তেজগাঁও ডিম সমিতির সাধারণ সম্পাদক হানিফ মিয়া বলেন, আমরা কখনো ডিমের দাম নির্ধারণ করি না। এই দাম ক্রেতারা নির্ধারণ করে। কেনাবেচার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার একজন খামারি বলেন, তেজগাঁও ডিম সমিতি থেকে প্রতিদিন মোবাইলে মেসেজ আসে যে আজ এত টাকা করে ডিমের দাম। আজ বাড়ছে বা কমছে। সেই মেসেজ অনুযায়ী সরবরাহকারীরা আমাদের ডিম কেনে। মানে তারাই মেসেজ দেয়, তারাই কেনে। দামটা তো তারাই ঠিক করে। আমরাও তাই মেনে চলি। কারণ এর বাইরে আর কোথায় যাবো? তারা যা বলবে, সেটাই বাজার। যদি বলে আজ ১০০ টাকা কমছে, এটাই বাজার। নুরুল ইসলামের খামারে ৩৩০০ মুরগি আছে। প্রতিদিন সেখান থেকে গড়ে ২৭০০ ডিম পান তিনি।

ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, এসব কারসাজির বিষয়ে আমরা দুই বছর আগেই কাজ শুরু করে সেই কাজ শেষ করে রিপোর্ট জমা দিয়েছি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে। সব তো আমরা একা করতে পারবো না। দেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা চার কোটি। উৎপাদন হয় সাড়ে চার কোটি। সাড়ে পাঁচ কোটি মুরগি থেকে এই ডিম উৎপাদন হয় বলে জানিয়েছেন খামারিরা। বাজারে যে ডিমের চাহিদা রয়েছে তার ৮০ শতাংশ উৎপাদন করছে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান বা সহযোগিতা না থাকায় প্রান্তিক পর্যায়ে খামারিরা ডিমের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। ফলে দিন দিন খামারির সংখ্যা কমছে। ডিমের যারা সিন্ডিকেট আছে তারা ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণ করে। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, গত মাসের গরমে লাখ লাখ মুরগি মারা গেছে। আবার গরমের কারণে ডিমের প্রায় ৩০ শতাংশ উৎপাদন কম হয়েছে। এখন চাহিদা বাড়লেও উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বাড়ছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে অভিযোগ করেন এই ব্যবসায়ী।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions