ডেস্ক রির্পোট:- পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিকে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি বলে মনে করছে দেশের সম্প্রচার সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)।
এক বিবৃতিতে বিজেসি বলছে, সকল শ্রেণী-পেশা ও সার্বিক জনস্বার্থে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ যখন ক্রমাগত উন্নত করা জরুরি, তখন কোনো একটি পেশার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে ঢালাওভাবে টার্গেট করে এমন বিবৃতি- সমাজে হুমকির সংস্কৃতি তৈরি করবে বলে মনে করে বিজেসি। বিজেসি’র মতে, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ও সমাজের দর্পণ গণমাধ্যমকে যদি এভাবে দেখা কিংবা টার্গেট করা হয় তাহলে দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহিষ্ণু নীতির মিশনকে দুর্বল করা হয়। কারণ গণমাধ্যমের কাজ অনিয়ম, দুর্নীতি, বিচ্যুতিকে তুলে ধরা, সকল ক্ষেত্রে ক্ষমতা কিংবা ক্ষমতাবানদের প্রশ্ন করা, জনপরিসরে, জনস্বার্থে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা।
বিজেসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠিতে পুলিশের মুক্তিযুদ্ধকালীন আত্মত্যাগ ও দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়াসহ নানা কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশের ভালো কাজের মূল্যায়ন সব সময় প্রতিবেদন আকারে সাংবাদিকরা প্রচার করে থাকেন। করোনাকালে পুলিশের মানবিক কর্মসূচি গণমাধ্যমের কারণেই দেশবাসী জানতে পারে। ভালো খবরের পাশাপাশি দুর্নীতি-অনিয়মের অনুসন্ধান এবং ক্ষমতার অপব্যবহার উন্মোচন করাও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার কাজ।
বিভিন্ন সময়ে পুলিশ বাহিনীর কর্তা ব্যক্তিরা বলেছেন, “ব্যক্তির দায় কোনদিন প্রতিষ্ঠান নেবে না”। কিন্তু পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এই চিঠির মাধ্যমে কি ব্যক্তির দুর্নীতির দায় প্রতিষ্ঠানের ঘাড়ে তুলে নেয়া হয় না? প্রশ্ন তোলা হয়েছে বিজেসির বিবৃতিতে। বিজেসি মনে করে, যেসব সাবেক ও বর্তমান পুলিশ সদস্যের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছে- তা যদি অসত্য হয়, দালিলিক প্রমাণ যদি না থাকে, তাহলে দেশের আইন অনুযায়ী ঐ ব্যক্তি প্রেস কাউন্সিলে যেতে পারেন। যেখানে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন ও গণমাধ্যমের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আইনসম্মত পন্থা আছে।
তা না করে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ঢালাওভাবে সব প্রতিবেদনকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলা স্বাধীন সাংবাদিকতা ওপর হস্তক্ষেপের শামিল।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এ চিঠির বিষয়ে উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিজেসি। প্রতিবেদন বন্ধ নয় বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ঘোষিত ‘শূন্য সহিষ্ণু নীতি’ বাস্তবায়নের জন্য বাহিনীর সহযোগিতা আশা করে বিজেসি।
সম্প্রতি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ‘অঢেল’ সম্পদ নিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন।
আদালতের নির্দেশে বেনজীর, তার স্ত্রী ও মেয়েদের নামে থাকা শত শত বিধা জমি, একাধিক ফ্ল্যাট জব্দসহ প্রায় তিন ডজন ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়। বেনজীরসহ তার স্ত্রী ও মেয়েদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক ডাকলেও হাজির না হয়ে সময় চেয়েছেন তারা। এরি মধ্যে পুলিশের আরো কর্মকর্তা ও কনস্টেবলের ‘অস্বাভাবিক সম্পদ’ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এই অবস্থার মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানায় পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। শুক্রবার পুলিশ ক্যাডার সার্ভিসের এই সংগঠনটির সভাপতি ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে ‘অতিরঞ্জিত’ ও ‘নেতিবাচক’ উল্লেখ করা হয়। ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে অতিরঞ্জিত রিপোর্ট প্রকাশ ও প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের আংশিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঢালাওভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত অতিরঞ্জিত রিপোর্টের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এই বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। এই দুই সংগঠনও পুলিশ ক্যাডারদের বক্তব্যকে ‘স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি’ বলে মনে করছে।