ডেস্ক রির্পোট:- দুর্নীতি দমন কমিশনের দ্বিতীয় দফায় তলবে হাজির না হলেও চিঠি দিয়ে নিজের বক্তব্য দিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে দ্বিতীয়বারের মতো রোববার সকাল ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল। তবে তিনি উপস্থিত না হয়ে চিঠি দিয়ে নিজের বক্তব্য দেন বেনজীর আহমেদ। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন।
এদিকে আজ সোমবার বেনজীরের স্ত্রী ও দুই মেয়ের দুদকে হাজিরার দিন ধার্য আছে। তারাও আইনজীবীর মাধ্যমে জবাব পাঠানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত ২২ মে দুদকের এক নোটিশে বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন সেগুনবাগিচা সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে তলব করা হয়। পরে তার আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে অতিরিক্ত ১৭ দিন সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এবারও তিনি হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিত জবাব পাঠান।
এর আগে ২৮ মে বেনজীরের পক্ষে করা সময় বাড়ানোর আবেদনে বলা হয়, ‘৬ জুন কমিশন দপ্তরে আমাকে তলব করা হয়েছে। এই মুহূর্তে আমি সপরিবারে চিকিৎসা ও অন্যান্য ব্যক্তিগত প্রয়োজনে দেশের বাইরে অবস্থান করছি। তাছাড়া বক্তব্য প্রদানের জন্য কাগজপত্র, দলিল-দস্তাবেজ, রেকর্ড ও নথিপত্র খোঁজ করে জোগাড় করা দরকার।
দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর চাকরি জীবনে বিভিন্ন স্থানে বদলি হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট আয়কর অফিস এবং হিসাবরক্ষণকারী অফিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। তাছাড়া আমি দীর্ঘ তিন বছরের অধিককাল বসনিয়া ও কসোভো শান্তি রক্ষা মিশন এবং সর্বশেষ জাতিসংঘের নিউইয়র্ক সদর দপ্তর, যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ছিলাম। উল্লিখিত কর্মস্থলসমূহের বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র জোগাড় করা সময়সাপেক্ষ বিষয়।’ দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব ডকুমেন্ট সংগ্রহের জন্য সময় চাওয়া হয়েছিল সেসব ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে তার আলোকে জবাব পাঠিয়েছেন।
রোববার দুপুরে ব্রিফিংয়ে দুদক সচিব বলেন, ‘দুদকের কাছে বেনজীর আহমেদ মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কোনো আবেদন করেননি। গত বৃহস্পতিবার তিনি ও তার পরিবারের অবস্থান স্পষ্ট করে একটি চিঠি দিয়েছেন।’ তবে বেনজীর আহমেদের চিঠি দেওয়ার প্রক্রিয়াটি বৈধ কি না, দুদক এটি গ্রহণ করবে কি না-এমন প্রশ্নের উত্তরে খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, এটি অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার এখতিয়ার। বিষয়টি তিনি দুদক আইনে দেখবেন।
দুদক সচিব আরও বলেন, তিনি (বেনজীর) যথাসময়ে উপস্থিত হবেন কি না সে বিষয়ে আমাদের কিছু জানাননি বা অবগত করাননি। কমিশনে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য না দেওয়ায় অনুসন্ধান টিম আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া তার স্ত্রী ও কন্যারাও নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত না হলে তাদের বিষয়েও অনুসন্ধান টিম আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
আলাপকালে এক দুদক কর্মকর্তা জানান, সময় চেয়ে নতুন কোনো আবেদন না করায় বেনজীর আহমেদ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল বেনজীর, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।
জানা গেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেনজীর পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য নিশ্চিত হয় দুদক। এরপর গত ২৩ ও ২৬ মে দুদকের আবেদন আমলে নিয়ে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও কোম্পানির শেয়ার জব্দের (ক্রোক) নির্দেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। ওই আদেশের ফলে পুঁজিবাজারের ইলেকট্রনিক্স শেয়ার সংরক্ষণাগার সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা সব বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) ফ্রিজ করে রাখতে নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় হিসাবসমূহে শেয়ার ও অর্থ লেনদেন করা যাবে না।
আদালতের আদেশে দেখা গেছে, বেনজীর আহমেদের বিও হিসাব রয়েছে আইএফআইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও ড্রাগন সিকিউরিটিজ লিমিটেড নামের ব্রোকারেজ হাউজে। আর সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেড ও ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার স্ত্রী জিশান মির্জা, ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ডাইনেস্টি সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিও হিসাব আছে। বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ৫টি ব্রোকারেজ হাউজে বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা ৬টি বিও হিসাব পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হলো। আদালতের আদেশ মোতাবেক ওই হিসাবগুলোর ওপর অবরুদ্ধকরণ আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় অর্থ উত্তোলন করা যাবে না।
জানা গেছে, গত ২৬ মে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা ১১৯টি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। এগুলোর মধ্যে রাজধানীর গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, সাভারের একটি জমি ছাড়াও মাদারীপুরের ১১৪টি দলিলের সম্পত্তি রয়েছে। এর আগে গত ২৩ মে ৮৩টি দলিলে ক্রয়কৃত সম্পত্তি ক্রোক করা হয়। সেই সঙ্গে ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও তার সিকিউরিটিজের (শেয়ার) টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে বেনজীরের বিপুল সম্পদের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।