দুদকের মুখোমুখি হচ্ছেন না বেনজীর

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪
  • ১৩০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদে মুখোমুখি হচ্ছেন না ‌পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ রবিবার দিন ধার্য রয়েছে। তবে দ্বিতীয় দফায়ও তিনি দুদকের তলবে হাজির হচ্ছেন না। প্রথম দফায় সময়ের আবেদন করলেও দ্বিতীয় দফায় এখনো তিনি সময়ের আবেদন করেননি।

অবশ্য দুদকের আইনে সময় চেয়ে দ্বিতীয়বার আবেদনের সুযোগ নেই। এমন পরিস্থিতিতে শিগগিরই তাঁর ঠিকানায় সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পাঠানো হবে। এরপর ২১ কর্মদিবস এবং পরে সময়ের আবেদন করলে আরো ১৫ কর্মদিবস সময় পাবেন তিনি। তবে বিদেশে অবস্থান করায় বেনজীর যেমন দুদকের নোটিশ গ্রহণ করতে পারবেন না, তেমনি দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতেও ব্যর্থ হবেন।

বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে কমিশনের তদন্তকারী দল তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুদক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বেনজীর আহমেদ সম্পদ বিবরণী দাখিল না করলে দুটি মামলা হবে। দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করার জন্য হবে ‘নন-সাবমিশন’ মামলা, আর বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের যেসব অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে আরেকটি ‘অবৈধ (জ্ঞাত আয়বহির্ভূত) সম্পদ অর্জনের’ মামলা হবে।

দুদক আইনে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ১০ বছর এবং নন-সাবমিশন মামলায় তিন বছরের সাজার বিধান রয়েছে।

জানতে চাইলে দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, বেনজীর আহমেদ জিজ্ঞাসাবাদে না এলে তাঁকে আর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সময় দেওয়া হবে না। তবে অনুসন্ধান চলতে থাকবে। অনুসন্ধান শেষে অনুসন্ধানকারী দল কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর কমিশনের অনুমতিক্রমে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

বেনজীর পর্তুগালে, পরিবার দুবাইয়ে

গত ৩১ মার্চ ও ২ এপ্রিল কালের কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের পরপরই স্ত্রীর চিকিৎসার নামে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমায় বেনজীর ও তাঁর পরিবার। সেখান থেকে তারা ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পের অধীনে বেনজীরের কেনা মালয়েশিয়ার বাড়িতে গিয়ে ওঠে। এরপর মালয়েশিয়া থেকে সপরিবারে চলে যান দুবাই। সেখানে পরিবারের সদস্যদের রেখে তিনি পর্তুগালে পাড়ি জমান বলে জানা গেছে।

সপরিবারে দুদকে তলব

গত ২৮ মে বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জাসহ তাঁদের দুই মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে চিঠি দেয় দুদক। চিঠিতে ৬ জুন বেনজীর আহমেদ এবং ৯ জুন তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জা, মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির থাকতে বলা হয়। আরেক মেয়ে জাহরা জেরিন বিনতে বেনজীর নাবালিকা হওয়ায় তাকে তলব করা হয়নি। তবে প্রথম দফায় দুদকের ডাকে হাজির হননি বেনজীর আহমেদ। তিনি হাজির না হয়ে ১৫ দিন সময়ের আবেদন করেন। কমিশন তা মঞ্জুর করলে সে অনুসারে আজ রবিবার (২৩ জুন) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে ফের দুদকে তলব করে চিঠি দেওয়া হয়। একইভাবে সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে ২৪ জুন (আগামীকাল সোমবার) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।

বেনজীরের সম্পদ জব্দে হ্যাটট্রিক

দুদেকর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত তিন দফায় বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সর্বশেষ তৃতীয় দফায় গত ১২ জুন বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা আরো আটটি ফ্ল্যাট এবং ২৫ একর (৬০.৫ কাঠা) ২৭ কাঠা জমি জব্দের (ক্রোক) আদেশ দিয়েছেন আদালত। এই ফ্ল্যাটগুলোর অবস্থান ঢাকার বাড্ডা ও আদাবরে। জমি নারায়ণগঞ্জ, বান্দরবান ও উত্তরায়। একই সঙ্গে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বেসরকারি সিটিজেন টেলিভিশন ও টাইগার ক্রাফট অ্যাপারেলস লিমিটেডের শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশও দিয়েছেন আদালত।

দ্বিতীয় দফায় গত ২৬ মে একই আদালত বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে থাকা মাদারীপুরে ২৭৬ বিঘা জমি এবং বেনজীর পরিবারের নামে থাকা গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন। একই দিন বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও তিনটি বিও হিসাব এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। সাভারের কিছু জমিও রয়েছে একই আদেশের আওতায়।

আর প্রথম দফায় গত ২৪ মে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক স্বজনের নামে থাকা ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি ক্রোক বা জব্দের আদেশ দেন। একই দিন বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে থাকা ২৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট), চারটি ক্রেডিট কার্ড ও ছয়টি বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধের আদেশ দেন।

 

বেনজীর পরিবারের সম্পদ অনুসন্ধান শুরু যেভাবে

সর্বপ্রথম জাতীয় একটি দৈনিকে‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ এবং ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে গত ৩১ মার্চ ও ২ এপ্রিল পৃথক দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন দুটি প্রকাশের পর দেশে-বিদেশে ব্যাপক সাড়া পড়ে। মূলত এর পরই দুদক বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে গত ২১ এপ্রিল বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। পরদিন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন এক সংবাদ সম্মেলনে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরুর তথ্য জানান। তিনি বলেন, ১৮ এপ্রিল কমিশন সভায় এই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের আইজি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাব এবং র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাঁদের মধ্যে বেনজীরও ছিলেন।কালের কন্ঠ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions