ডেস্ক রির্পোট:- শূন্যপদ না থাকলেও যুগ্মসচিব ও উপসচিব পদে শিগগিরই আসছে বড় পদোন্নতি। প্রশাসনে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে মোট পদ সংখ্যার চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি। জনবল কাঠামো পুরোপুরি অনুসরণ করতে গেলে চার স্তরের সব কর্মকর্তা নিয়মিত পদোন্নতি পান না। যোগ্য কর্মকর্তাদের যথাসময়ে পদোন্নতি প্রদানের জন্যই পদের চেয়ে বেশিসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সূত্রেমতে, জনপ্রশাসনে আগামী নভেম্বরে যুগ্মসচিব এবং সেপ্টেম্বরে উপসচিব পদে পদোন্নতি মিলতে পারে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যুগ্মসচিব পদে এবার বিসিএস ২৪তম ব্যাচ ও উপসচিব পদে ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে গণ্য করতে যাচ্ছে পদোন্নতির জন্য সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)। এজন্য আগের বঞ্চিত অর্ধশত কর্মকর্তাসহ প্রায় ৭০০ জন কর্মকর্তার প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করবেন এসএসবি’র সদস্যরা।
এ বিষয়ে নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের (এপিডি) অতিরিক্ত সচিব মো. নাজমুছ সাদাত সেলিম বলেন, এবার পদোন্নতির ক্ষেত্রে যুগ্মসচিব পদে বিসিএস ২৪তম ব্যাচ ও উপসচিব পদে ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে গণ্য করা হবে।
সবশেষ ২০২৩ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর যুগ্মসচিব পদে বড় পদোন্নতি দেয় সরকার। ২২১ জন উপসচিব ও সম পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্মসচিব করা হয়। তার আগে ২০২২ সালের ২রা নভেম্বরে ১৭৫ জন উপসচিবকে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্মসচিব করা হয়েছিল। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ১১ই নভেম্বর ২৪০ কর্মকর্তাকে সরকারের উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এর আগের বছরের (২০২২ সাল) ১লা নভেম্বর উপসচিব পদে ২৮০ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি কর্মচারী বাতায়ন জিইএমএস’র তথ্যমতে, যুগ্মসচিব পদে বর্তমানে ৭৭৮ জন কর্মরত রয়েছেন। আর উপসচিব পদে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৭০৩ জন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী নভেম্বরে যুগ্মসচিব ও সেপ্টেম্বরে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হতে পারে।
‘সরকারের উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২’-এ বলা হয়েছে, যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ও ৩০ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডারের উপসচিব পদে কর্মরতদের বিবেচনায় নিতে হবে। বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে কমপক্ষে ৫ বছর চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা বা উপসচিব পদে কমপক্ষে ৩ বছর চাকরিসহ ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে কোনো কর্মকর্তা যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হন। এ বিধিমালা অনুযায়ী উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নিতে হয়। এ ছাড়া উপসচিব পদে পদোন্নতি পেতে সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পাঁচ বছর চাকরিসহ কমপক্ষে ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।
এদিকে, পদোন্নতি হলেও পদোন্নতি পাওয়া বেশিরভাগ যুগ্মসচিবকে আগের কর্মস্থলে ইনসিটু হিসেবে থাকতে হবে বলে জানা গেছে। স্থায়ী পদ না থাকায় এমনিতেই অনেক যুগ্মসচিবকে নিচের পদে কাজ করতে হচ্ছে, তার মধ্যে নতুন করে পদোন্নতি দেয়া হলে তাদের কর্মস্থলে পাঠানোর সুযোগ থাকবে না। তাই পদোন্নতি পাওয়া যুগ্মসচিবদের ইনসিটু হিসেবে আগের কর্মস্থলেই থাকতে হবে। জানা গেছে, প্রশাসনে যুগ্মসচিবের পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে বর্তমানে ৭৭৮ জন কর্মরত রয়েছেন। আর উপসচিবের ১ হাজার ৭৫০টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৭০৩ জন।
এদিকে, চলতি বছরে গত ২২শে এপ্রিল জনপ্রশাসনে ১২৭ জন যুগ্ম সচিবকে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত সচিব করা হয়েছে। সূত্রমতে, অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত পদ ১৩৫টি। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৪১০ জন। অর্থাৎ অনুমোদিত পদের তিনগুণ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এবার নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিসিএস ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় নেয়া হয়। এ ছাড়া অন্য সময়ে পদোন্নতি না পাওয়া কয়েকজন কর্মকর্তাকেও পদোন্নতি দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় দুই মাস আগে অতিরিক্ত ও উপসচিব পদে পদোন্নতি দিতে প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এসএসবি’র একাধিক বৈঠকের পর নির্বাচনী ব্যস্ততার কারণে সেটি চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। নতুন সরকার গঠনের পরপরই পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশী একজন উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম অনেক চড়া। সরকারও নানা রকম আর্থিক চাপে রয়েছে। নতুন পে-স্কেলও দিতে পারছে না। মানুষের সাংসারিক খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। এ কারণে পদোন্নতি হলে কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা হয় বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
সাধারণত, উপসচিব হওয়ার ৩ বছর পর কর্মকর্তারা গাড়ি কেনার জন্য সরকার থেকে বিনা সুদে ঋণ পান। সেই গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও কর্মকর্তারা প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা পান। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই সুবিধা বহাল থাকে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে তৎকালীন সামরিক শাসক এইচএম এরশাদের আমলের ‘এনাম কমিটির’ সুপারিশ ও সরকারি জনবল কাঠামো অনুযায়ী বর্তমানে মাঠ প্রশাসন পরিচালিত হচ্ছে। সেই জনবল কাঠামো অনুযায়ী বেশিরভাগ মন্ত্রণালয় পরিচালনা হচ্ছে। পরবর্তীতে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কিন্তু পুরনো মন্ত্রণালয়গুলোতে জনবল কাঠামোর খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। এই সময়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও ওইগুলোতে অস্থায়ীভিত্তিতে কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রায় ৪০ বছর আগের জনবল কাঠামোয় চলছে সরকারি প্রশাসন। এর ফলে মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অপরিকল্পিতভাবে পদ সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রশাসনের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ফলে নতুন জনবল কাঠামোর পরিকল্পনার কথা সামনে আসছে।মানবজমিন