কক্সবাজার:- এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে আশানুরূপ বুকিং হয়নি কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে। প্রতি বছর দুই ঈদে হোটেলগুলোতে প্রায় শতভাগ বুকিং থাকলেও এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে কেবল তারকা হোটেলগুলোতেই ২০ থেকে ২৫ ভাগ বুকিং হয়েছে, আর বাকি হোটেলগুলোতে বুকিং হয়েছে মাত্র ৫ থেকে ১০ ভাগ। এমন তথ্যই জানিয়েছেন কক্সবাজারের হোটেল মালিকরা।
হোটেল মালিকরা জানান, প্রতিবছর দুই ঈদ এবং থার্টিফার্স্ট’র ছুটিতে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এসময় হোটেল–মোটেলে শতভাগ রুম বুকিং থাকে। বর্তমানে কক্সবাজার শহরের পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও কটেজে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে। সেই তুলনায় এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে খুব কম রুমই বুকিং হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার হোটেল–মোটেল–গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার।
তিনি জানান, এবারের ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার হোটেল–মোটেল–গেস্ট হাউস মালিক সমিতির মালিকানাধীন মধ্যম মানের তারকাবিহীন হোটেলগুলোতে মাত্র ৫ থেকে ১০ ভাগের বেশি কক্ষ বুকিং হয়নি। তবে তারকা হোটেলগুলোতেই ২০ থেকে ২৫ ভাগ বুকিং হয়েছে বলে জানা গেছে। কক্সবাজারের তারকা হোটেলগুলোতে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা আছে। তবে তারকা হোটেলগুলোতে কেবল একদিনই ভাল বুকিং হয়েছে। অন্যান্য দিনগুলোতে উল্লেখযোগ্য বুকিং হয়নি বলে জানান হোটেল কক্সটুডের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আবু তালেব। তিনি বলেন, এবারের ঈদের ছুটিতে আগামী ২০ জুন বৃহস্পতিবার একদিনই কেবল সর্বোচ্চ ৪০% পর্যন্ত বুকিং হয়েছে। কিন্তু এর আগে–পরে অন্য দিনগুলোতে তেমন বুকিং হয়নি।
আবহাওয়ার অনিশ্চয়তার কারণেই এবারের ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারের হোটেল–মোটেলে কম বুকিং হয়েছে বলে মনে করেন কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টোয়াক) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান। তিনি বলেন, এবারের ঈদুল আজহা পড়েছে আষাঢ় মাসে ঘোর বর্ষার মধ্যে। ফলে অনেকেই আবহাওয়ার অনিশ্চয়তার কারণে আগাম কক্ষ ভাড়া করেনি। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত ঈদুল আজহার মতোই পর্যটকে টইটম্বুর হয়ে ওঠবে কক্সবাজার।
হোটেল ব্যবসায়ী কাসেম সিকদার জানান, গত ঈদুল আজহার ছুটিতেও হোটেলে কক্ষ বুকিং কম ছিল। কিন্তু ঈদের পর ঠিকই কয়েক লাখ পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে আসে। আর এতে হোটেল–মোটেলগুলোও ছিল প্রায় হাউসফুল।
কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকরা শহরের সমুদ্র সৈকত, বার্মিজ মার্কেট, শুটকিপল্লী, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফ সমুদ্র সৈকত ছাড়াও জাহাজে সেন্টমার্টিন দ্বীপে এবং স্পিডবোটে সোনাদিয়া দ্বীপে ভ্রমণে যান। আর কেউ কেউ ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, রামু বৌদ্ধ মন্দির ও মহেশখালী আদিনাথ মন্দির ছাড়াও কক্সবাজারের পার্শ্ববর্তী পার্বত্য বান্দরবান জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ভ্রমণে যান। তবে এখন সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে শহরের পার্শ্ববর্তী সোনাদিয়া দ্বীপে এবং বান্দরবানে এবার পর্যটকের ঢল নামতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজ আপেল মাহমুদ জানান, ঈদসহ বিশেষ বিশেষ ছুটিতে কক্সবাজারে কমবেশি পর্যটকদের চাপ থাকে। আর এ চাপের কথা মাথায় রেখেই এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতেও কক্সবাজারের রাস্তাঘাটে এবং পর্যটন স্পটসমূহে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল বাড়ানো হবে। এছাড়া শহরের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সৈকতে গ্রহণ করা হবে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কক্সবাজারে পর্যটকেরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীরা দায়িত্ব পালন করবে। দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পর্যটন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতও সক্রিয় করা হবে।