দেশে যৌন নিপীড়নের শিকার ২৫ লাখ শিশুর রিপোর্ট যুক্তরাষ্ট্রের হাতে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০২৪
  • ৭২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ইন্টারনেট ব্যবহারের অবাধ সুযোগে শিশুরা বুঝতে পারছে না কীভাবে তারা ফাঁদে পা দিচ্ছে। বিশ্বাস করে যাকে–তাকে ছবি পাঠাচ্ছে। আবার নিজেরাই না বুঝে যেখানে–সেখানে ছবি পোস্ট করছে। সেসব ছবি সম্পাদনা করে ব্যবহার করা হচ্ছে পর্নোগ্রাফিতে।

গত বছর বাংলাদেশ থেকে এ ধরনের শিশু যৌন নিপীড়ন–সংক্রান্ত ২৪ লাখ ৯১ হাজার ৩৬৮টি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেনে (এনসিএমইসি)।

বিশ্বের যেসব দেশ থেকে শিশুদের যৌন হয়রানি সম্পর্কে যত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে।

এনসিএমইসিতে সন্দেহজনক শিশু যৌন নিপীড়ন সম্পর্কে বাংলাদেশ থেকে পুলিশ, বেসরকারি সংস্থা, মানবাধিকার সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগসহ নানা উৎস থেকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।

বুধবার (১২ জুন) সকালে রাজধানীতে সেন্টার ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন স্টাডিজ (সিডব্লিউসিএস) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘স্টেকহোল্ডার মিটিং টু প্রমোট চাইল্ড রাইটস অব সেক্সুয়ালি অ্যাবিউসড, এক্সপ্লয়টেড অ্যান্ড ট্রাফিকড চিলড্রেন উইথ মিডিয়া পারসোনেল’ (যৌন নির্যাতন, নিপীড়ন ও পাচারের বিরুদ্ধে শিশু অধিকার উন্নয়নে সভা) আয়োজন করা হয়।

শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য রেড হার্ট ক্যাম্পেইন সম্পর্কে জানানো হয় সভায়।

অনুষ্ঠানে মূল তথ্য উপস্থাপন করেন সিডব্লিউসিএসের নির্বাহী সদস্য সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফরিদা ইয়াসমীন।

তিনি জানান, এনসিএমইসিতে সন্দেহজনক শিশু যৌন নিপীড়ন সম্পর্কে বাংলাদেশ থেকে পুলিশ, বেসরকারি সংস্থা, মানবাধিকার সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগসহ নানা উৎস থেকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে গত বছর মোট ৩ কোটি ২০ লাখ রিপোর্ট এনসিএমইসিতে গেছে।

এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখান থেকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে ১১ লাখ ৩২ হাজারের বেশি।

এ ছাড়া থাইল্যান্ড, নাইজেরিয়া, ফ্রান্স ও ডমিনিকান রিপাবলিক রয়েছে যথাক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে। গত বছর ইন্টারনেট ওয়াচ ফাউন্ডেশন ইন্টারনেট থেকে শিশুর যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি–সংক্রান্ত ২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৫২টি ইউআরএল অপসারণ করার জন্য কাজ করেছে। ওই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৯২ শতাংশ ক্ষেত্রে শিশুরা নিজেরাই নিজেদের ছবি তুলেছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ ক্ষেত্রে শিশুদের বয়স ৭ থেকে ১০ বছর।

আলোচনায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল যোগাযোগ শিশুদের অবাধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অনলাইন গেমের জগতে বিচরণের সুযোগ করে দিয়েছে। অপরাধীদের তাদের পরিচয় গোপন করে শিশু ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ করে দিয়েছে। শিশুরা এখন এমন সব মানুষের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করতে পারছে, যা আর কোনো উপায়ে সম্ভব নয়। এ অবস্থায় শিশুদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ঝুঁকিতে আছে এবং কোনো শিশুই অনলাইনে বিপদমুক্ত নয়। অপরাধীরা শিশুদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে নানা রকমের কৌশলের আশ্রয় নেয়। তারা অনলাইন প্রোফাইল থেকে শিশুদের আগ্রহের বিষয়বস্তু জেনে নেয় এবং প্রোফাইলের সেসব তথ্যের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এই সম্পর্কের মাধ্যমে তারা শিশুদের অশ্লীলতাও শেখায়। শিশুদের সুরক্ষার জন্য সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯, চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ১০৯ নম্বরে কল করার চর্চা শুরু করার ওপর জোর দেন বিশিষ্টজনরা।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সিডব্লিউসিএসের সভাপতি অধ্যাপক ইশরাত শামীম বলেন, প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে শিশুদের বেড়ে উঠতে হচ্ছে; কিন্তু শিশুরা নিরাপদ ইন্টারনেট যেন ব্যবহার করতে পারে, সেদিকে নজর বাড়াতে হবে। অনেক শিশু বলেছে, মা–বাবা তাদের সময় দেন না। তাদের খেলার জায়গা নেই। ইন্টারনেটে তারা কোনো সমস্যায় পড়ে মা–বাবাকে জানালে উল্টো বকা খায়। তিনি বলেন, অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে আইনের কার্যকর ব্যবহারের পাশাপাশি সব পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। অভিভাবকদের শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যেন শিশুরা সবকিছু জানায়। শিশুরা যেন নিজেদের ছবি বা তথ্য অনলাইনে অন্য কাউকে না পাঠায়, তা নিয়ে শিশুদের বোঝানোর বিষয়ে মা–বাবাকে আরও সচেতন হতে হবে।

সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সিডব্লিউসিএসের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নুসরাত সুলতানা।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions