কোটা নিয়ে কেন এই বিতর্ক?

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪
  • ৯৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। কয়েক বছর ধরে সে অনুযায়ী কোটাবিহীন নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এতে চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়েছে। মেধাবীদের আগ্রহ বেড়েছে সরকারি চাকরিতে। কিন্তু একটি রিটের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি হাইকোর্ট কোটা বাতিলের পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করে কোটা পুনর্বহালের নির্দেশ দেন। এরপর থেকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে। কোটা বহালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে নানা কর্মসূচি। এ বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান চেয়ে আগামী ৩০শে জুন পর্যন্ত আল্টিমেটামও দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আপিল করেছে। আদালত আগামী ৪ঠা জুলাই পর্যন্ত কোটা পুনর্বহাল রেখে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন।

চাকরিপ্রত্যাশীরা বলছেন, ৫৬ শতাংশ কোটা অযৌক্তিক। অনেক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যও কোটা প্রথাকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অসম্মানজনক বলে মনে করছেন।

কেউ কেউ আবার মনে করেন কোটা না থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মান। সব মিলিয়ে কোটার পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানা যুক্তি। যদিও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধারা অনগ্রসর জনগোষ্ঠী না। তাই তাদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা রাখা সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তারা বলেন, নারী, প্রতিবন্ধী, দলিত, চা-শ্রমিকসহ পার্বত্য ও উপকূলীয় এলাকার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা রাখা যেতে পারে। তবে তা কোনোভাবেই ১০ থেকে ১২ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত না। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন।

চাকরিপ্রত্যাশীরা বলছেন, আমরা শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না। আমাদের আন্দোলন কোটার বিরুদ্ধে। সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা বহাল থাকতে পারে। এর বেশি কোটা আমরা মেনে নেব না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বৈষ্যমের শিকার হচ্ছে। যারা প্রতিবন্ধী ও উপজাতি আছেন শুধু তাদের কোটা দেয়া যেতে পারে। মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যভাবে সম্মানিত করা যেতে পারে। সংবিধানের আইনকে অমান্য করে বিভিন্ন কোটা সুবিধা দেয়া হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্র সর্বোচ্চ সম্মানে সম্মানিত করুন। কিন্তু তার নাতি-পুতি কেন বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে? কোটা বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিন সরকার বলেন, কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা প্রয়োজনে আরও কঠোর হবে। বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবি আদায় করে ঘরে ফিরবে ছাত্রসমাজ। তিনি বলেন, আমরা আগামী ৩০শে জুনের মধ্যে এই কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিলের আল্টিমেটাম দিচ্ছি। যদি ৩০ তারিখের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা না হয় তাহলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো।
এদিকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় আপাতত বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। এ বিষয়ে আগামী ৪ঠা জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত। রোববার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।

অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটাকে বৈষম্য বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অনেকে। মুক্তিযোদ্ধার নাতি ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী খালিদ মহিউদ্দিন রায়হান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবিসহ দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, নিউজে দেখলাম ২০১৮ সালে যেই কোটা সিস্টেম বাতিল করা হয়েছিল, সেটা আদালত আবার বহাল করার রায় দিয়েছেন। একটা চাকরির পরীক্ষায় ৫৬ শতাংশ শুধু কোটার ভিত্তিতেই নিয়োগ হবে, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা! ভাবা যায় এটা কী পরিমাণ বৈষম্য! একজন মুক্তিযোদ্ধার বংশধর হিসেবে আমি মনে করি, ১৯৭১ সালে এই দেশের মুক্তিযোদ্ধারা একটি বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করছিল। যেকোনো চাকরি পরীক্ষায়, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কোনো যোগ্য প্রার্থীকে বঞ্চিত করে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য কাউকে সুযোগ দেয়াকে আমি সম্পূর্ণরূপে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি বলে মনে করি। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে মনে-প্রাণে চাই, যেকোনো ধরনের কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ বন্ধ হোক, কোটাপ্রথা বাতিল হোক, যোগ্যরাই সব জায়গায় সুযোগ করে নিক। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, প্রায় ৭ মাস শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে যে কোটা পদ্ধতি রহিত করা হয়েছিল, সেটি আদালতের মাধ্যমে পুনর্বহাল করাটা ছাত্রসমাজের সঙ্গে সরকারের সরাসরি প্রতারণা।

অন্যদিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ২০১৮ সালের অবৈধ পরিপত্র বাতিলের এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এই বিজয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিজয়।

শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সরকার সার্বিক দিক বিবেচনা করে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু আদালত রিটের প্রেক্ষিতে সেটি বহালের নির্দেশনা দিয়েছেন। এটা নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে এটা ঠিক। বিষয়টি আদালতেরও নজরে এসেছে বলে মনে করি। ইতিমধ্যে সরকারও বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য চেম্বার আদালতে আপিল করেছে। আমি মনে করি ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে কোটা নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে। কোটা থাকলে কীভাবে থাকবে বা কত শতাংশ থাকবে তা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, আমাদের সংবিধানে কোটার বিধান রয়েছে। সেটি নারী, প্রতিবন্ধী ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য। সরকার এদের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু এখানে জেলা কোটা কোনোভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। আবার মুক্তিযোদ্ধারাও অনগ্রসর না। যেটি সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমি রায়টা দেখি নাই। কী বিবেচনায় কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা বলতে পারছি না। কিন্তু এখানে লিগ্যাল কারণটা অস্পষ্ট। আমাদের এখানে নারী, প্রতিবন্ধী, চা-শ্রমিক, দলিত, উপকূলীয় ও পাবর্ত্য এলাকার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা রাখা যেতে পারে। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের জন্য আমরা বিশেষ সুবিধা রাখতে পারি। তবে সেটি কোনোভাবেই ১০ থেকে ১২ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত না। মানবজমিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions