ডেস্ক রির্পোট:- দুর্নীতি আমাদের সকল অর্জনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাত থেকে অফিস আদালতকে মুক্ত রাখার কথা বললেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিদায়ী বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ। তিনি বলেন, একজন বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী কীভাবে কোটি কোটি এমনকি শত কোটি টাকার মালিক হন, তা দেশবাসীকে হতবাক করে। তাই এগুলোকে রোধ করতে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে। বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে দেয়া বিদায় সংবর্ধনায় আব্দুল হাফিজ এসব কথা বলেন।
বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ বলেন, সময়ের বিবর্তনে অপরাধের ধরন প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে যা আমাদের সন্তানদের ভয়াবহ অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অভিভাবকদের বিভিন্নমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। পারিবারিক সম্প্রীতি, সংস্কৃতি, দীর্ঘদিনের লালিত মূল্যবোধ ইত্যাদিতে ভাঙচুর করা হচ্ছে। কিশোর গ্যাং প্রসঙ্গে এই বিচারপতি বলেন, কিশোর গ্যাং এর উত্থান ঘটেছে। মাদক, সামাজিক অনাচারসহ অস্ত্রের প্রতিযোগিতা, হুমকি ও আশঙ্কার বিস্তার ঘটেছে। আর এগুলো আমাদের টেকসই উন্নয়ন, শান্তি, প্রসারিত ভালোবাসা, ধৈর্য ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নীতি-নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে মুহূর্তেই বড়লোক হওয়ার মানসিকতা আমাদের বড় বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সৃজনশীলতা, ক্ষমাশীলতা, দয়াশীলতা, ভালোবাসা, জ্ঞান, দক্ষতা, অনুসন্ধিৎসা, পাপকে ঘৃণা করা, ন্যায়বিচার, মহত্ত্ব, অন্তর্দৃষ্টি ইত্যাদি ভালো গুণাবলী দেশবাসীর মাঝে সৃষ্টিতে উৎসাহ যোগাতে হবে।
মিথ্যা মামলার ভার বহন করছে বিচার বিভাগ
মিথ্যা মামলা ও দুর্নীতি সম্পর্কে বিচারপতি হাফিজ বলেন, সম্পদ-সম্পত্তি, অপরাধ, নারী ও শিশু নির্যাতন ও অধিকার বিষয়ে প্রতিনিয়ত মিথ্যা মামলা দায়ের হচ্ছে। প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিচার বিভাগকে এর ভার বহন করতে হচ্ছে। দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়ে এটা মিথ্যা মামলা নির্ধারিত হয়তো বা ঠিকই হচ্ছে কিন্তু এতে আদালতের প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে। মিথ্যা মামলা ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী শত কোটি টাকার মালিক
বিচারপতি হাফিজ বলেন, দুর্নীতি আমাদের সকল অর্জনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দুর্নীতির ব্যাপকতা অনেক। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাত থেকে অফিস আদালতকে মুক্ত রাখতে হবে। একজন বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী কীভাবে কোটি কোটি এমনকি শত কোটি টাকার মালিক হন তা দেশবাসীকে হতবাক করে। তাই এগুলোকে রোধ করতে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলে দেশ উপকৃত হবে। মানুষ অযাচিত বিপদ থেকে রক্ষা পাবে।
১৯৫৭ সালের ১লা জুন জন্ম নেয়া বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজের বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ (শুক্রবার)। সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বৃহস্পতিবার তার শেষ কর্মদিবস। প্রথা অনুসারে, এই বিচারপতিকে বিদায়ী সংবর্ধনা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এই বিচারপতির কর্মময় জীবন তুলে ধরে বক্তব্য দেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। বিদায়ী সংবর্ধনায় বিচারকক্ষটি আইনজীবীদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ ছিল। বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ ১৯৫৭ সালের ১লা জুন জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি অনার্স ও এলএলএম ডিগ্রি নেয়ার পর ১৯৮২ সালে ঢাকা জজ কোর্টে এবং ১৯৮৫ সালের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন আব্দুল হাফিজ। ২০০৩ সালের ২৭শে এপ্রিল তিনি অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্টে নিয়োগ পান। এরপর ২০০৫ সালের ২৭শে এপ্রিল তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন। গত ২৫শে এপ্রিল বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন।