শিরোনাম
রাঙ্গামাটির সাজেকে দিনভর গুলিবিনিময়, ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করল প্রশাসন যতটা দেখায়, মোদী কি ততটা শক্তিধর? এবার বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী পাঠাতে ভারতের লোকসভায় প্রস্তাব হাসান মাহমুদের দোসর আমীর আলীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে ভূক্তভোগীদের আকুঁতি রাঙ্গামাটিতে পৌর মাঠ রক্ষায় নাগরিকদের মানববন্ধন খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের মামলা নিষ্পত্তি, উজ্জীবিত বিএনপি আগরতলায় বাংলাদেশের কনস্যুলার সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা ভারতীয় হাইকমিশনারকে জরুরি তলব সীমান্তে যেকোনো অপতৎপরতা রোধে বিজিবি সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে জেএসএস’র সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ইউপিডিএফ’র এক সশস্ত্র সদস্য নিহত

দুই শতাধিক ওষুধের দাম বেড়েছে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩১ মে, ২০২৪
  • ১১৪ দেখা হয়েছে

ডলারের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দিচ্ছে কোম্পানিগুলো।
একমি তাদের ৪০টি ওষুধের দাম বাড়িয়েছে।
বেড়েছে অ্যারিস্টোফার্মা, র‍্যাডিয়েন্ট, বিকন ফার্মা, ইনসেপ্টার ওষুধের দামও।
ওষুধের বিষয়ে সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির।

ডেস্ক রির্পোট:- নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে মানুষের দিশেহারা অবস্থা বেশ আগে থেকেই। এবার ওষুধ কেনার খরচও বাড়ল। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে একের পর এক ওষুধের দাম বাড়িয়ে চলছে কোম্পানিগুলো। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক ওষুধের দাম বেড়েছে বাজারে। এতে অন্যান্য খরচের পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয়ও বাড়ছে নাগরিকদের।

কিছু অসংক্রামক রোগ আছে, সেগুলোর জন্য রোগীকে সারা বছরই ওষুধ খেতে হয়। বিশেষ করে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগীদের সারা বছরই ওষুধের ওপর চলতে হয়। ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিতে এসব রোগীর ওপর খরচের চাপ বেড়েছে আরেক দফা।

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকায় এক বছর ধরে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয় রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা ইসমাইল হোসেনকে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি বেক্সিমকো ফার্মার বাইজোরান ৫+২০ মিলি ট্যাবলেট গ্রহণ করে আসছেন। ওষুধটির জেনেরিক হলো অ্যামলোডিপিন বিসাইলেট‍+ওলমেসারটান মিডোক্সোমিল। ইসমাইল হোসেন বলেন, আগে প্রতি ৩০টি ট্যাবলেটের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২৪০ টাকা থাকলেও তিনি ২২০ টাকায় কিনতেন। বর্তমানে তা ২৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

শুধু এই ওষুধ নয়, কয়েক মাসের ব্যবধানে বাজারে দুই শতাধিক ওষুধের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ওষুধের দোকানে কর্মরত ব্যক্তিরা। পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের নিচতলায় অবস্থিত মেসার্স এম এস মেডিকেল হলের ফার্মাসিস্ট আরিফুর রহমান বলেন, বাজারে ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। রাজধানীর বনশ্রী এলাকার ফাস্টহিল মেডিসিন কর্নারের মশিউর রহমান বলেন, গত তিন-চার মাসের ব্যবধানে বাজারে কমপক্ষে ২০ শতাংশ ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। ক্রেতারা ওষুধ কিনতে এসে প্রায়ই দুঃখ প্রকাশ করেন।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দি একমি ল্যাবরেটরিজের অ্যান্টিবায়োটিক ফেমিক্লেভ (জেনেরিক সেফুরিক্সিম‍+ক্লাভুলানিক অ্যাসিড) ৫০০‍+১২৫ মিলির একটি ট্যাবলেটের দাম আগে ছিল ৫৫ টাকা। বর্তমানে তা বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে। বাতের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত একই কোম্পানির ওষুধ আর্থ-এটিএস (জেনেরিক গ্লুকোস্যামিন সালফেট‍+কনড্রয়টিন) ৬০০‍+৭৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেটের দাম ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। রুসট্যাব (জেনেরিক রসুভাসটাটিন) ২০ মিলির ট্যাবলেটের দাম আগে ছিল ২৫ টাকা। বর্তমানে তা ৩০ টাকা করা হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক অ্যাজিন পেস ৩০ মিলির দাম ছিল ১৬০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৮৫ টাকা। এ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ফেমিসেফ ৭০ মিলির বোতলের দাম ২৮২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩২৫ টাকা করা হয়েছে।

ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে দি একমি ল্যাবরেটরিজের মহাব্যবস্থাপক (রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) জাকির হোসেন জানান, বাজারে তাঁদের ওষুধের দাম কম ছিল। মোট ৮৪০টি ওষুধের মধ্যে সম্প্রতি ৪০টির মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। তবে যে পরিমাণ দাম চাওয়া হয়েছিল, সে পরিমাণ বাড়ায়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

অ্যারিস্টোফার্মা কোম্পানির ৪০০ মিলিগ্রামের একটি অপটিমক্স (জেনেরিক মক্সিফ্লুক্সাসিন) অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেটের দাম ছিল ৫০ টাকা। এখন সেটির দাম বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। একই কোম্পানির অ্যাভোল্যাক সিরাপের দাম বাড়িয়ে ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হয়েছে। প্রতিটি অ্যাক্সিম ৫০০ মিলি+৫০ মিলি (জেনেরিক সেফুরক্সিম+ক্লুভানিক অ্যাসিড) অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেটের দাম আগে ছিল ৪৫ টাকা; বর্তমানে তা বেড়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে। একইভাবে র‍্যাডিয়েন্ট ফার্মার রেফুরক্স ৫০০ মিলির ট্যাবলেটের দাম ৫৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে কোম্পানিটি। এদের অনুসরণ করে বিকন ফার্মা, ইনসেপ্টাসহ অন্যরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত এম্পাগ্লিফ (জেনেরিক এম্পাগ্লিফ্লুজিন) ট্যাবলেটের দাম আগে ছিল ২৪ টাকা। বর্তমানে তা ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এভাবে একের পর এক ওষুধের দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম সফিউজ্জামান বলেন, ৮০ টাকার ডলার বেড়ে ১২০ টাকা হয়েছে। ডলারের প্রভাবে ওষুধের কাঁচামাল আমদানির ব্যয় বেড়েছে। ফলে বাজারে দাম বেড়েছে।

তবে ওষুধের দাম বাড়ার পেছনে আগ্রাসী বাণিজ্য ও চিকিৎসকদের কমিশন দেওয়ার প্রবণতাও দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে এক ডায়ালগে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওষুধের মোট বাজারের ২৯ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে প্রমোশনাল খাতে। এই ব্যয় মানুষের ঘাড়ে চাপছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আব্দুল হামিদ বলেন, বাণিজ্যিক পণ্যের দাম বাড়বে। তবে ওষুধ অন্যান্য নিত্যপণ্যের মতো না। ওষুধের বাজার শতভাগ সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে এবং প্রতিবছর যৌক্তিকভাবে দাম সমন্বয় করতে হবে। এটি করা গেলে আগ্রাসী বাণিজ্য বন্ধ হবে এবং প্রমোশনাল ব্যয় অনেক কমবে।

প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টের তথ্য অনুযায়ী, দেশে স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যক্তির পকেট থেকে ব্যয় হচ্ছে। এই অবস্থায় ওষুধের দাম বাড়ালে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ব্যয় অনেকটা বেড়ে যাবে।

দেশে ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন বলে মনে করে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে ঔষুধ প্রশাসন তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। কয়েকটি কোম্পানি অনেক প্রভাবশালী। তাদের টপকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ঔষধ প্রশাসনের নেই।

ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পরিচালক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘ওষুধের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে যাওয়ায় প্রায়ই ক্রেতারা আমাদের দোষারোপ করেন। যদিও দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে দোকানিদের কোনো ভূমিকা নেই।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজারে তেল, সাবান, গুঁড়া পাউডার থেকে শুরু করে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামই বেশি। ওষুধ এটির বাইরে নয়। তবে ডলারের কারণে কাঁচামাল আমদানির ব্যয় বাড়ায় ওষুধের ক্ষেত্রে দাম সমন্বয় করা হয়েছে।আজকের পত্রিকা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions