ডেস্ক রির্পোট:- দেশের কর্মক্ষেত্রে কতজন বৈধ এবং অবৈধ শ্রমিক কাজ করছেন-এ বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। পুলিশের আইজিকে এ নির্দেশ তামিল করতে বলা হয়েছে।
আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ তথ্য জানিয়েছেন রিটের পক্ষের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন। রিটে সরকারপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জোনরেল তুষার কান্তি রায়।
এর আগে বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে কতজন বৈধ ও অবৈধ শ্রমিক কাজ করছেন এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন রিগ্যান। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে ১০ লাখের বেশি অবৈধ বিদেশী শ্রমিক বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কাজ করছেন। এর ফলে এ দেশের নাগরিকরা যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ‘অবৈধ বিদেশী খেদাও আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন এ তথ্য দেন।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন বলেন, যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু গত দেড় দশকে বাংলাদেশে বেকার সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। দেশে বর্তমানে বেকারত্বের হার ১২ শতাংশ, যা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এদেশের নাগরিক কর্মসংস্থান খুঁজতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুবরণ করছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশে কর্মরত অবৈধ বিদেশীরা ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর ১০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এ দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ হওয়ায় তারা ট্যাক্স ও ভ্যাট প্রদান না করে দেশের টাকা পাচার করছে। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হচ্ছে আর মানবাধিকার ও জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে। তারপরও আমাদের রাষ্ট্র বা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
সংগঠনটির সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মহসিন রশিদ জানান, আমরা প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাচ্ছি। যারা আমাদের এজেন্সিগুলোতে কাজ করেন তাদের বড় দায়িত্ব হচ্ছে এই দেশটা রক্ষা করা। বাংলাদেশের জন্য যা করা দরকার সেটাই আপনাদের করতে হবে। আপনারা এগিয়ে আসেন, আমাদের সঙ্গে যোগ দিন। সহায়তা করুন।
তিনি বলেন, আপনারা দেখছেন কত বিদেশি এখানে অবৈধভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বৈধভাবে যারা কাজ করছেন তাদের নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। অবৈধ বিদেশী শ্রমিকের কারণে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের সমস্যা হচ্ছে। আমরা চাই অবিলম্বে সরকার তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে আমাদের বেকার সমস্যা দূর করবে।
উল্লেখ্য, অন্তত: ৫ লাখ ভারতীয় বাংলাদেশে চাকরি করছেন-মর্মে জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যাদের অধিকাংশই অবৈধ। প্রতিবেদনগুলোতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি চাকরির বাজারে এখন ভারতীয়দের দাপট। বিশেষ করে তারা পোশাক, বায়িং হাউজ, আইটি এবং সেবা খাতে প্রাধান্য বিস্তার করে আছেন। ভারতের পরপরই শ্রীলঙ্কা ও চীনের অবস্থান। দেশে কর্মরত মোট বিদেশীর অন্তত অর্ধেক হচ্ছে ভারতীয়।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি ২০২০ সালে এক প্রতিবেদনে জানায়, দেশে কর্মরত মোট বিদেশী দুই লাখ ৫০ হাজার। তাদের মধ্যে বৈধ ৯০ হাজার। বাকিরা অবৈধভাবে বাংলাদেশে কাজ করছেন। যারা বৈধভাবে আছেন তাদের মধ্যে ৫০ ভাগ কোনো ওয়ার্ক পারমিট না নিয়ে ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে কাজ করছেন। এই বিদেশীরা বছরে ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাচার করছেন। টিআইবি বাংলাদেশে বিদেশীদের হিসাব করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ২০১৮ সালে দেয়া ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বৈধ বিদেশীর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যা বহুগুণ বেশি।
সংবাদমাধ্যমের তথ্য মতে. বাংলাদেশে দুটি তৈরি পোশাক কারখানার মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে নানা কারণে পোশাক খাতে ভারতীয়দের অবস্থান শক্ত। এর মধ্যে পোশাক খাতে জিজাইনসহ আরো কয়েকটি বিষয়ে দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। পোশাকের বায়িং হাউজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ভারতীয়রা। ফলে পোশাক কারাখানাগুলো বায়ার পেতে তাদের কারখানায় মার্কেটিং এবং হিসাব বিভাগেও ভারতীয়দের নিয়োগ দিয়ে থাকে। তাদের মতে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে ১ লাখেরও বেশি ভারতীয় কাজ করেন। বায়িং হাউজে এই সংখ্যা আরো আরো বেশি।
এর বাইরে আইটি খাতেও ভারতীয়দের দাপট। আরো অনেক সেবা খাত আছে যেখানে ভারতীয়রা কাজ করেন। এমনকি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম, বিজ্ঞাপন, কনসালটেন্সি এসব খাতেও ভারতীয়রা রয়েছেন। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে কম করে হলেও পাঁচ লাখ ভারতীয় কাজ করে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু তাদের অধিকাংশেরই কোনো ওয়ার্ক পারমিট নেই। তারা ট্যুরিস্ট ভিসায় আসেন। তাদের বেতন অনেক বেশি। ট্যুরিস্ট ভিসায় যারা কাজ করেন তাদের আয়করা পুরো অর্থই হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার হয়ে যায়।