ডেস্ক রির্পোট:- পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ শনিবার রাত ৯টার পর ঘূর্ণিঝড় রিমালে রূপ নেবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান।
আজ আবহাওয়া অধিদপ্তরে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মডেল বিশ্লেষণ করে যেসব তথ্য পাচ্ছি, তাতে এটি আজ রাত ৯টার পর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ঝড়ের শক্তি বাড়ার আশঙ্কা আছে। যেহেতু সাগরের মাঝ বরাবর দিয়ে আসছে তাতে ডানে-বামে চতুর্দিকে সে শক্তি সঞ্চয় করতে পারছে। যদি ভারতীয় উপকূল ঘেঁষে আসত তবে শক্তি কম থাকত।’
আজিজুর রহমান আরও বলেন, ‘এটি এখন যে অবস্থায় আছে, সেখান থেকে আরও শক্তি সঞ্চয় করে সিভিয়ার বা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে আগামীকাল (রোববার) সকালে। বিভিন্ন মডেল আমাদের দেখাচ্ছে যে এটি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল উপকূল—পটুয়াখালীর খেপুপাড়া ও পশ্চিমবঙ্গের দ্বীপগুলোর মাঝ দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। আগামীকাল রোববার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে শুরু হবে সেটি।’
রিমালের অগ্রভাগের প্রভাব আগামীকাল দুপুরের পর থেকে উপকূলে বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন রকম হবে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই পরিচালক আরও বলেন, ‘আর এর প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা আছে দুই মিটার বা সাত ফুট পর্যন্ত। এটি বাড়তে পারে। যদি জোয়ার থাকে তখন ১০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। ভাটার সময় সাধারণ ঢেউ থেকে দুই মিটার পর্যন্ত বাড়বে। উপকূলের ওই সব এলাকায় ভাটা হয় সন্ধ্যা ৬টার পরে আর জোয়ার আসে রাত ১২টার পর।’
আজিজুর রহমান জানান, বর্তমান গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে সতর্কসংকেত বাড়ানো হবে। এখন ৩ নম্বর স্থানীয় সংকেত আছে, তখন ৫, ৬ বা ৭ করা হবে। যদি সিভিয়ার সাইক্লোন বা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়, তবে ৮, ৯ বা ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানো হবে।
রিমালের প্রভাবে সারা দেশে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হবে উল্লেখ করে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘২৪ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার জেলাতে বৃষ্টি বেশি হবে। এসব এলাকায় ভূমিধসের সতর্কবার্তা দেওয়া হবে।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল গভীর নিম্নচাপটি। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ঘনীভূত হতে পারে।
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত আছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের (চোখ) নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে অতিদ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।