ডেস্ক রির্পোট:- আওয়ামী লীগের এমপি আনোয়ারুল আজিমকে হত্যায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। বাংলাদেশি নাগরিক জিহাদ হাওলাদারের নামও এসেছে এই হত্যাকাণ্ডে। একইসঙ্গে হত্যার পর মরদেহ টুকরো করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জিহাদ হাওলাদার পেশায় একজন কসাই। কলকাতার বনগাঁ থেকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। শুক্রবার জিহাদ হাওলাদারকে ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে বারাসাতের আদালত।
বিবিসি বাংলাকে সিআইডি’র এক শীর্ষ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জানিয়েছেন জিহাদ হাওলাদার অবৈধভাবে ভারতের মুম্বইতে বাস করতেন। তার আদি বাসস্থান খুলনা জেলার দিঘলিয়া থানার অন্তর্গত বারাকপুরে। এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আকতারুজ্জামান দু’মাস আগে জিহাদকে কলকাতায় নিয়ে এসেছিল। বৃহস্পতিবার জিহাদকে আটক করে একটানা জেরা করা হয়। তারা নিহত আনোয়ারুল আজিমের দেহ কলকাতা সংলগ্ন কোনো এলাকায় ফেলে দিয়ে থাকতে পারে, সেটা জানার চেষ্টা করা হয়।
নিহত এমপি’র দেহাংশের খোঁজে সিআইডি বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতা পুলিশ এলাকার অন্তর্গত পোলেরহাট থানার কৃষ্ণবাটি সেতুর কাছে বাগজোলা খালে তল্লাশি চালায়।
নিউটাউন এলাকার যে ফ্ল্যাটে আজিমকে খুন করা হয়, সেই আবাসিক কমপ্লেক্সের সামনে দিয়েই এই খালটি বয়ে গেছে। তবে সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি বলেই সিআইডি জানিয়েছে। শুক্রবার সকালে কাপড় দিয়ে জিহাদ হাওলাদারের মুখ ঢেকে তাকে বারাসাতের আদালতে নিয়ে যায় সিআইডি। দুপুরে তার ১২ দিনের সিআইডি রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
বিবিসি বাংলাকে সিআইডি’র ওই শীর্ষ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে খুনের পরে কীভাবে দেহ লোপাট করা হয়েছিল, তার ভয়ঙ্কর বর্ণনা দিয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদ সিআইডি’র জেরায় স্বীকার করেছেন যে আকতারুজ্জামানের নির্দেশে ওই ফ্ল্যাটে সে এবং আরও চারজন বাংলাদেশি নাগরিক এমপি আনারকে শ্বাসরোধ করে খুন করে। সিআইডি’র ওই কর্মকর্তা বলেন, হত্যা করার পরে মৃতদেহ থেকে চামড়া ছাড়িয়ে শরীরে মাংস আলাদা করে নেয় তারা। শরীরের মাংস এমনভাবে টুকরো করা হয় যাতে তাকে চেনা না যায়। মাংস খণ্ডগুলো পলি প্যাকেটে ভরা হয়। হাড়ও ছোট টুকরো করা হয়। এরপরে ফ্ল্যাট থেকে প্যাকেটগুলো বার করে বিভিন্নভাবে কলকাতার নানা জায়গায় ফেলে দেয়া হয়।
সিআইডি সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করার পর জিহাদকে ভাঙড়ের একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আজিমকে খুনের পর সেখানেই দেহাংশ ফেলা হয়েছে বলে জেরায় উঠে এসেছে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে সেখান থেকে কোনো দেহাংশই মেলেনি। তাই শুক্রবার জিহাদকে দেহাংশ উদ্ধারের প্রয়োজনেই হেফাজতে চাইতে পারে সিআইডি।
এদিকে আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন বলছে, গোয়েন্দারা এখনো নিহত আজিমের কোনো দেহাংশ খুঁজে পাননি। ফলে গ্রেপ্তারকৃতদের জেরা করে যা তথ্য মিলেছে, তার উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে তদন্তকারীদের। এক্ষেত্রে, অভিযুক্তরা কোনো ভাবে তদন্তকারীদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে। সেই সূত্রেই জিহাদকে হেফাজতে প্রয়োজন।
সিআইডি সূত্রের খবর, হানিট্র্যাপের শিকার হয়েছিলেন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য। শিলাস্তি রহমান নামের এক মহিলাকে সামনে রেখে তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল। নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নিউটাউনের ওই আবাসনে। তারপর সেখানে তাকে খুন করা হয়। ধৃত জিহাদের বিরুদ্ধে খুনের জন্য অপহরণ, তথ্য নষ্ট করা, ভুল তথ্য দেয়া, খুন এবং অপরাধের চক্রান্ত করার ধারা যোগ করা হয়েছে।
এই ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ এখনো পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিআইডি’র একটি দল বৃহস্পতিবারই ঢাকায় এসেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের এখানেও জেরা করা হবে। সিআইডি জানতে পেরেছে, খুনের অন্তত দু’মাস আগে মুম্বই থেকে কলকাতায় আনা হয়েছিল কসাই জিহাদকে। তিনি জেরার মুখে স্বীকার করেছেন, প্রথমে আজিমকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। তার পর দেহ কাটা হয় টুকরো টুকরো করে। হাড় এবং মাংস আলাদা করা হয়। চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে তাতে হলুদ মাখান অভিযুক্তরা। যাতে বাইরে কেউ জিজ্ঞাস করলে বলা যায়, রান্না করার জন্য মাংস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই দেহাংশ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে এখনো পর্যন্ত জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।