ডেস্ক রির্পোট:- জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য ২৬১টি নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি মাসের শুরুর দিকেই তিনি গাড়ির কেনার অনুমোদন দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দেশের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বিলাসবহুল এসব গাড়ি কেনার বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না অনেকে। তাদের ভাষ্য, ডলার সংকটের মধ্যে গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরকারের সরে আসা উচিত।
কর্মকর্তারা জানান, ২৬১টি গাড়ি কিনতে সরকারের ব্যয় হবে ৩৮১ কোটি টাকা। দেশে ডলার সংকটের মধ্যেই কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার সরকারি পদক্ষেপকে ভালো চোখে দেখছেন না অনেকেই। গত বছরের জুলাইয়ে গাড়ি কেনার প্রস্তাব উঠার পর গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে সরকার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। কিন্তু সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী গাড়ি কেনার বিষয়ে তার সম্মতি দেন। ফলে নতুন গাড়ি কিনতে আর কোনো বাধা থাকল না।
জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের জন্য মোটরযান কেনা বাবদ ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী নতুন গাড়ি কিনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আরও ৬১২ কোটি ৩৪ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় ৩৮১ কোটি টাকা দিতে রাজি হয়। ফলে গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে এখন ২৬১টি কেনার পথে হাঁটছে যানবাহন অধিদপ্তর।
জনপ্রশাসনের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো যানবাহন অধিদপ্তরের চাহিদাপত্র অনুযায়ী, ডিসিদের জন্য গাড়ি কেনা হবে ৯৬টি। এতে মোট খরচ হবে ১৪০ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার টাকা। ইউএনওদের ব্যবহারের জন্য কেনার প্রস্তাব ছিল ৩৬৫টি গাড়ি। এগুলোর দাম ৫৩২ কোটি ৩৩ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে ৪৬১ গাড়ি কেনায় সরকারের কাছে ৬৭২ কোটি ৩৪ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিয়েছে ৩৮১ কোটি টাকা। এখন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মাধ্যমে এসব গাড়ি কিনবে যানবাহন অধিদপ্তর।
কর্মকর্তারা বলেন, এমন সময়ে বিলাসবহুল গাড়ি চাওয়া হলো যখন বৈশ্বিক অস্থিরতায় দেশেও অর্থনৈতিক সংকট চলছে। বাজেট বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাতে সরকার নিজেই চলছে ধার-কর্জের মাধ্যমে। ব্যয় কমাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেট কার্যকরের দ্বিতীয় দিনেই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের অর্থ ব্যবহারে কিছুক্ষেত্রে বিধিনিষধ এবং কিছুক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এর আওতায় সরকারিভাবে সব ধরনের গাড়ি, বিমান ও জাহাজ কেনাকাটা বন্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভূমি খাতের অধিগ্রহণ বাবদ বরাদ্দ অর্থসহ আবাসিক, অনাবাসিক, অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দ অর্থ খরচ না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি সরকারি চাকরিজীবীদের সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ, কর্মশালা, সেমিনারে অংশগ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক ( সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রশাসনের জন্য গাড়ি কেনা অপরিহার্য হয় তাহলে তা কম বাজেটের মধ্যে অর্থাৎ সাশ্রয়ী মূল্যে কেনা হোক। বিলাসি গাড়ির কী দরকার? আমি পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে দেখেছি তাদের সরকারি কর্মকর্তারা অতি সাধারণ মানের গাড়ি ব্যবহার করেন। কিন্তু উল্টো বাংলাদেশে। এখানে ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার জন্য মোটা অংকের ঋণ দেওয়া হচ্ছে। আবার সরকারি দপ্তরের গাড়িও বেশি দামে কেনা হচ্ছে। প্রশাসনে গাড়ি বিলাস বেশিই দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অবশ্যই দেশের সংকট মাথায় রেখে কৃচ্ছ্বতার দিকে মনোনিবেশ করা জরুরি। সরকারকে অপ্রয়োজনীয় গাড়ি কেনা থেকে সরে আসা উচিত। না হলে দেশে অর্থনৈতিক সংকট আরও বাড়বে।
নাম প্রকাশে একজন দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গাড়ি কেনা খুবই জরুরি। কারণ মাঠ প্রশাসনে ব্যবহৃত ১৪-১৫ বছর বয়সী গাড়িগুলোর বিপরীতে এ ২৬১টি গাড়ি কেনা হবে। পুরাতন গাড়িগুলো অনেকটাই অকেজো। এগুলো দিয়ে ভালোভাবে কাজ চলছে না। ফলে আমাদেরকে বাধ্য হয়েই গাড়ি কিনতে হচ্ছে।
ডলার সংকটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী যখন সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তখন এসব বিলাসবহুল গাড়ি কেনা কতটুকু যৌক্তিক- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ডলার সংকট থাকলে কি প্রশাসনিক কাজ থেমে থাকবে? কর্মকর্তারা দেশের জন্যই কাজ করছেন। প্রশাসনিক কাজেই এসব গাড়ি ব্যবহৃত হবে। কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়।