ডেস্ক রির্পোট:- নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন নিভছেই না। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম। একই অবস্থা সবজির বাজারে। নিত্যপণ্যের বাজারে এই অস্থিরতা নি¤œ ও মধ্য আয়ের ভোক্তাদের বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। পণ্যের দামের আগুনে পুড়ভে মানুষ। গরীবের আমিষ হিসেবে পরিচিত ডিমের হালি হাফ সেঞ্চুরি ছুঁয়েছে। পাড়া-মহল্লার দোকানেও ৫৫ টাকা হালি ডিম বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ টাকা, আর দুই সপ্তাহ আগে ৪০ টাকা। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি হালি ডিমের দাম ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। কমেনি সবজির দামও। এখন মাছ-গোশতের দাম বেশি। এমনকি ব্রয়লার মুরগির গিলা-কলিজি-পা-চামড়ার দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক ভাবে। এক সাপ্তাহ আগে এক কেজি গিলা-কলিজি-পা-চামড়ার দাম ছিল ২২০ টাকা থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে। গতকাল সেটা বিক্রি হয়েছে ২৬০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, শনির আখড়া ও ফকিরাপুল বাজার ঘুরে দেখা গেল, গত এক সাপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডজন ডিমের দাম ৪০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকা হয়েছে। বাজারে লাল ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা হালি। সেই হিসাবে এক ডিমের দাম পড়ছে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ এলেও আগের সেই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। মরিচ দামে ডবল সেঞ্চুরি করেছে।
শনিরআখড়া বাজারে সাপ্তাহিক বাজার করতে আসা গৃহকর্মী ফাতেমা নাজ বলেন, বাচ্চাকাচ্চাকে মাছ-গোশত খাওয়াতে পারি না। ঝোলভাত খাওয়ার জেদ করলে এক হালি ডিম কিনে রান্না করে দিলে খুশি হতো। এখন সেটাও কিনতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কদমতলী এলাকার ডিম বিক্রেতা মনির হোসেন জানিয়েছেন, আমরা যে দামে কিনি তার কিছু লাভ করে বিক্রি করি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন ডিমের উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কয়েকদিন আগেও প্রচ- গরমের কারণে খামারে অনেক মুরগি মারা গেছে। ফলে বাজারে ডিমের সরবরাহ হুট করে কমে গেছে।
জানা যায়, ঢাকায় ডিমের বড় কয়েকটি পাইকারি বাজার আছে। এর মধ্যে কারওয়ান বাজারসংলগ্ন তেজগাঁও রেলস্টেশন পাইকারি ডিমের বাজার, যাত্রাবাড়ি পাইকারি বাজার ও পুরান ঢাকার কাপ্তানবাজার। এই তিন বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার পাইকারিতে ১০০ বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১৮০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। যদিও প্রান্তিক খামারিরা ডিমের দাম কমা বাড়া নিয়ে তেজগাঁও আড়তমালিকদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, কিছুদিন আগে ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমিয়ে দেন আড়তমালিকরা। যে সময় সারাদেশে ডিম হিমাগারে মজুত হয়েছে। এখন দাম বাড়িয়ে তারা মুনাফা করছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, সারাদেশে মেসেজের মাধ্যমে তারা (তেজগাঁও আড়তমালিকরা) ডিমের দাম নির্ধারণ করে। হুট করে তারা দাম কমিয়ে দিয়ে খামারিদের থেকে ডিম নিয়ে হিমাগারে সংরক্ষণ করে, এরপর আবার দাম বাড়িয়ে এ সিন্ডিকেট মুনাফা লুটছে। ঢাকার আড়তগুলোতে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লাখ ডিম বিক্রি হলেও তারা সারাদেশে বিক্রিত ৪ কোটি ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে। প্রতিদিন তারা মেসেজ দিয়ে বাজারদর জানিয়ে দেয় সারাদেশে থাকা আড়তদারদের। তারা এখন ডিমের বাজারে সবচেয়ে বড় সিন্ডিকেট।
যাত্রাবাড়ি ও শনির আখড়া বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, গরুর গোশতের কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে এই সপ্তাহে। প্রতি কেজি স্থানভেদে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কম ছিল। এছাড়া সোনালি ও লেয়ার জাতের মুরগির কেজি স্থানভেদে ৩৫০ থেকে ৩৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির গোশত আগের মতোই ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে এখনও চড়া মাছের দাম। বাজারে অধিকাংশ মাছের দাম তেমন একটা কমেনি। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছ ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা, কাতলা ৩২০ টাকা, কালবাউশ ২৮০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, পাবদা ৫৪০ টাকা ও ইলিশ মাছ ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সবজির চড়া দাম প্রায় তিন-চার সপ্তাহ ধরে। এক কেজি বেগুনের দাম এখন ১০০ থেকে ১২০ টাকা। কাকরোল-বরবটিরও এমন দর। এমনকি সস্তা দামে পরিচিত পেঁপের কেজিও এখন ৮০ টাকা। আলুর সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও দাম কমছে না। ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে আলু। স্থানভেদে পাকা টমেটোর কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা ও মান ও জাতভেদে পটলের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ, আদা, রসুন আগের মতোই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম নতুন করে বাড়তে দেখা গেছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, যা আগের চেয়ে ৫ টাকা বেশি। এছাড়া আদা কিংবা রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকার নিচে মিলছে না। আদার দামও আগে মতোই বেশি।