ডেস্ক রির্পোট:- ফলের প্রধান মাস জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়। এ সময়ে আম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস, তরমুজ ও পেয়ারা বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু এসব দেশীয় সুস্বাদু ফল পরিপক্ব হওয়ার আগেই বাজারে আসছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার আশায় বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করে ফল পাকিয়ে বিক্রি করছে। যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক হুমকি। এসব অপরিপক্ব ফল খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে বলে জানালেন চিকিৎসক ও কৃষি কর্মকর্তারা।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০ মে থেকে মোজাফফর লিচু, ২৭ মে থেকে বোম্বাই ও চায়না লিচু পাড়ার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৫ মে থেকে গুটি আম, ২৫ মে থেকে রানিপছন্দ এবং ৩০ মে থেকে ক্ষীরশাপাতি আম পাড়ার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
অথচ তার আগেই দিনাজপুরের হিলি বাজারের বিভিন্ন স্থানে লিচু বিক্রি করতে দেখা গেছে। দাম বেশি তাই অধিক মুনাফার আশায় অপরিপক্ব লিচু বেচাকেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকালে হিলির চুনহাটির মোড়ে লিচু বিক্রি হতে দেখা যায়। এর আগের দিন পুরাতন সোনালি ব্যাংক মোড়ে লিচু বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতিরিক্ত মুনাফার আশায় মোজাফফর ও মাদ্রাজি লিচু আগেভাগেই গাছ থেকে পেড়েছেন চাষিরা। তারা বাগান থেকে কিনে বিক্রি করছেন। ১০০ মাদ্রাজি লিচু ৩০০ এবং মোজাফফর ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে এই ফল বিক্রি করছেন তারা।
কোথাকার লিচু জানতে চাইলে চুনহাটির মোড়ের লিচু বিক্রেতা সবুজ হোসেন বলেন, ‘পাঁচবিবি উপজেলার চাষিরা বাড়তি লাভের আশায় এসব লিচু গাছ থেকে পেড়েছেন। এখনও ভালোভাবে রঙ আসেনি। পরিপক্ব হয়নি। হালকা লাল রঙ হয়েছে। নতুন ফল হিসেবে বাজারে চাহিদা থাকায় ১০০ লিচু ১৮০ টাকা দরে কিনেছি। এর সঙ্গে পরিবহনসহ বিভিন্ন খরচ মিলিয়ে বাজারে ৩০০ টাকায় শ’ বিক্রি করছি।’
লিচুগুলো রসালো হলেও এখনও পুরোপুরি মিষ্টি হয়নি উল্লেখ করে এই বিক্রেতা আরও বলেন, ‘বলা যায়, কিছুটা টক-মিষ্টি। মৌসুমি ফল হিসেবে অনেকে কিনছেন। ৫০০ লিচু এনেছিলাম, ইতোমধ্যে ৩০০ বিক্রি হয়ে গেছে। বাকিগুলোও বিক্রি হয়ে যাবে। তবে যারা কেনার আগে খাচ্ছেন, টক হওয়ায় তারা কিনছেন না।’
সবুজের কাছ থেকে ৫০ পিস লিচু ১৫০ টাকায় কিনেছেন হিলি বাজার এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম। বাজার দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ চুনহাটির মোড়ে লিচু দেখে চোখে পড়লো উল্লেখ করে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মৌসুমের নতুন ফল হিসেবে ছেলেমেয়ের জন্য ৫০ পিস ১৫০ টাকায় কিনলাম। দেখতে তো ভালোই মনে হচ্ছে। রঙ কিছুটা লাল। মিষ্টি নাকি টক, তা খেয়ে দেখিনি। মৌসুমি ফল হিসেবে কিনলাম।’
চিকিৎসকরা বলছেন অপরিপক্ব লিচুতে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে, সেক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনা কতটা ঠিক এমন প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল বলেন, ‘স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি আমার মনে ছিল না। তাহলে কিনতাম না।’
মৌসুমের প্রথম ফল বাজারে দেখে কিনতে ইচ্ছে হলো উল্লেখ করে হিলির সিদ্দিক হোসেন বলেন, ‘কেনার আগে এক পিস খেয়ে দেখেছি। টক লাগলো। আঁটি এখনও শক্ত হয়নি। এতে বোঝা যায়, পরিপক্ব হয়নি। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে জেনে কিনিনি। বেশি লাভের আশায় এসব লিচু বাজারে নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকে না জেনে কিনছেন, এক্ষেত্রে আমাদের সচেতন হতে হবে।’
এখনও লিচু পরিপক্ব হয়নি, আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে উল্লেখ করে হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বলেন, ‘আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে পরিপক্ব লিচু বাজারে আসতে পারে। বর্তমানে বাজারে যেসব লিচু পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো খেলে মানুষের পেটে সমস্যা হতে পারে। সে কারণে সচেতনতার কোনও বিকল্প নেই। সেইসঙ্গে অপরিপক্ব লিচু বিক্রি বন্ধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে অভিযান চালাতে হবে। তখনই অপরিপক্ব ফল বিক্রি বন্ধ হবে।’
অপরিপক্ব লিচুতে কতটা স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক ইলতুতমিস আকন্দ বলেন, ‘অপরিপক্ব লিচুতে অ্যানজাইম থাকে। খালি পেটে খেলে তীব্র গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। সাধারণত লিচু গাছে অরগানো ফসফরাস কোম্পাউন্ট নামের এক ধরনের কীটনাশক স্প্রে করা হয়। এই কীটনাশক প্রয়োগের পর নির্ধারিত সময়ের আগে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। আবার ভরা পেটে খেলে কিডনির সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত লাভের আশায় বাগান মালিকরা এসব লিচু বিক্রি করছেন। তবে এটি খাওয়া ঠিক নয়। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হবে। শিশুদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর।’বাংলা ট্রিবিউন