ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশ জন্মের পর থেকেই প্রতিবেশী দেশ ভারত একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস উপলক্ষে ভাসানী অনুসারী পরিষদ এই সভার আয়োজন করে।
সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বরাবরই লক্ষ্য করেছি যে, বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পর থেকেই আমাদের প্রতিবেশী, যার কাছে আমাদের স্বাধীনতায় তাদের ভূমিকার জন্য আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি সব সময়। তার পরেই আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশকে একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার জন্য সব সময় তারা তাদের সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে।’
এ সময় বর্তমান সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘শুধু ফারাক্কা বাঁধ নয়, গঙ্গার পানি নয়, বাংলাদেশের ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে তারা সব সময় গড়িমসি করেছে এবং তারা এই সমস্যার সমাধান করেনি, করছেও না। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে এই যুক্তি, করছি, এই হয়ে যাবে, এখন ভালো অবস্থা আছে, এই করে করে কিন্তু সরকার কাটিয়েছে। এই ব্যর্থতার মূল কারণ হচ্ছে-যে সরকার এখন আছে, সেই সরকার পুরোপুরিভাবে একটা নতজানু সরকার। তারা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে প্রকৃত অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ তারা তাদের (ভারতের) কাছে অত্যন্ত দুর্বল।’
দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের অভিযোগ এনে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘ফারাক্কা-তিস্তা এবং অন্যান্য অভিন্ন নদীগুলোর সমস্যার সমাধান কী করে হবে? কারণ তারা (আওয়ামী লীগ) তো দখলদারি করছে এখানে। তারা তো একটা বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতা দখল করে আছে। আজকে এমন একটা সরকার দখলদারি নিয়ে ক্ষমতায় বসে আছে, যাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে, তারা তাদের স্বার্থ এবং তাদের প্রভুদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য জনগণের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।’
বাংলাদেশের মানুষকে তার অধিকার আদায়ের জন্য নিজেকেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে হারিয়ে ফেলেছি। সেই গণতান্ত্রিক অধিকারকে ফিরে পাওয়ার জন্য আমরা সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। এখন বহু রাজনৈতিক দল একসঙ্গে সংগ্রাম করছি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য। এ জন্য আমাদের অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। আমাদের অনেক নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে।’
ফারাক্কা দিবসকে ‘আন্দোলন-সংগ্রামের প্রতীক’ আখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আজকে সারা বাংলাদেশের মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের যে লক্ষ্য, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, সেই লক্ষ্যে যদি আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি, অবশ্যই আমরা সেখানে জয়লাভ করব।’
‘এই সরকার জনগণের সরকার নয়’-এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কোনো নির্বাচনই তারা করে না। কারণ তারা জানে, নির্বাচন করলে তাদের একটা ভূমিধস পরাজয় হবে, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। সে জন্য বিভিন্ন কৌশলে তারা এখানে নির্বাচন দেখিয়ে তারা ক্ষমতায় টিকে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের সব উন্নয়ন, যেটা বলা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণভাবে একটা মিথ। এটা কোনো উন্নয়ন নয়। শুধুমাত্র এই সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য একটা গোষ্ঠী তৈরি করা হচ্ছে, যে গোষ্ঠী এই তথাকথিত উন্নয়ন থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়।’
বাংলাদেশে মাফিয়া রাষ্ট্র তৈরি করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এখনকার সরকারের মদদপুষ্ট যেসব ব্যবসায়ী আছেন, তারা সবাই তথাকথিত সরকারের গুণকীর্তন গায়। একটামাত্র উদ্দেশ্য, এই সরকার টিকে থাকলে তারা তাদের লুণ্ঠন, বিদেশে টাকা পাচার করে সম্পদ তৈরি, তারা সেগুলো করতে পারবেন।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহসহ আরও অনেকে অংশ নেন।