ডেস্ক রির্পোট:- প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট থাকলেও ভোটার উপস্থিতি নিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে নেই নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় নির্বাচনের পর এবারের উপজেলা নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক কম ভোটার উপস্থিতি নিয়ে বেশ চিন্তিত কমিশন। এমন প্রেক্ষাপটে ভোটের ব্যাপারে দিন দিন মানুষের এমন অনাগ্রহের কারণ খুঁজে পরবর্তী ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত ৮ মে বুধবার অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। ভোটারদের এমন হতাশাজনক উপস্থিতির অনেক কারণের কথা বলা হলেও মূল কারণ হিসেবে ‘একতরফা’ ভোটকেই দায়ী করা হচ্ছে। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের মতো বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এবারের উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করেছে।
ফলে ক্ষমতাসীনদের নিজের মধ্যে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন নিয়ে তেমন আগ্রহ বা উচ্ছ্বাস দেখাননি ভোটাররা। তবে রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের বিষয়ে কমিশনের খুব বেশি কিছু করার ক্ষমতা নেই বলে মনে করেন ইসি সংশ্লিষ্টরা। সংবিধান ও আইনি বাধ্যবাধকতা মেনেই প্রতিটি নির্বাচন যথাসময়ে আয়োজন করছে কমিশন। এর পরও উপজেলা নির্বাচনে সর্বনিম্ন ভোটের হার নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে কমিশন। সেজন্য পরবর্তী ধাপগুলোয় তা যতটা সম্ভব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে কমিশনের তরফ থেকে।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা শনিবার খুলনায় এক মতবিনিময় সভায় বলেছেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া প্রথম ধাপে উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এতে নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট। তবে প্রথম ধাপের চেয়ে পরবর্তী ধাপের নির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কাজ করছে কমিশন। প্রার্থীদের দায়িত্ব ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা। আর নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ভোটারদের নিরাপত্তা বিধান ও নির্বিঘ্নে ভোটদানের পরিবেশ সৃষ্টি করা।
সূত্র আরও জানায়, প্রথম ধাপের ভোটের পরদিন বৃহস্পতিবারই নির্বাচন কমিশনের মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সারা দেশের মাঠ কর্মকর্তারা যোগ দেন। সেখানে নানা প্রসঙ্গের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক বিশ্লেষণ চলে। মাঠ কর্মকর্তাদের বক্তব্যেও উঠে আসে প্রসঙ্গটি। এ সময় ইসি সচিব জাহাংগীর আলম জানান, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরবর্তী পর্যায়গুলোতে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তী পর্যায়ের নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে নির্বাচনী কার্যক্রম আরও গতিশীল করার বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে প্রচার আরও জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইসি সূত্র জানায়, ভোটের দিন রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবন থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং অন্য কমিশনাররা। ভোট মনিটরিং করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত টিমের সদস্যরাও। সকাল থেকে প্রায় সারা দেশে ভোটার উপস্থিতির করুণ চিত্র উঠে আসে। তবে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও বিভিন্ন উপজেলায় সংঘাত-সহিংসতায় জড়ান প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। এতে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেন কমিশনের কর্তারা। ভোট শেষে সার্বিক পরিস্থিতির মূল্যায়নে বসে পড়েন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। কমিশনের হিসেবে এ ধাপে ভোটের হার ছিল ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। এতে অন্য সবার মতো নির্বাচন কমিশনও ‘অসুখী’ মনোভাব প্রকাশ করেছে। ভোট পড়ার এই হারকে ‘কম’ আখ্যা দিয়ে সেজন্য মোটা দাগে পাঁচটি কারণও চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হলো, বৈরী আবহাওয়া, অনেক রাজনৈতিক দলের ভোটে অংশ না নেওয়া, জনপ্রিয় প্রার্থীর অভাব, ধান কাটার মৌসুম এবং সাধারণ ছুটি থাকায় শ্রমিকরা নিজ এলাকায় চলে যাওয়া।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের মোটা দাগে এ পাঁচ কারণের কথা জানান। যদিও ভোটের দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ছিল বলে জানান ইসি সচিব। আর ভোট গ্রহণ শেষে সিইসি গণমাধ্যমে জানান, কোনো কোনো এলাকায় বৃষ্টিবাদল এবং মানুষ ধান কাটতে ব্যস্ত থাকায় ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, ১৩৯টি উপজেলার মধ্যে ২২টিতে ইভিএমে ভোট হয়েছে। এসব উপজেলায় ভোট পড়ার হার ৩১ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর ব্যালট পেপারে ভোট হওয়া বাকি ১১৭ উপজেলায় ভোটের হার ৩৩ দশমিক ২২ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে ৭৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। এ ছাড়া রাঙামাটির কাউখালীতে ৭০ দশমিক ৫৩ শতাংশ ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৬৬ দশমিক ১৮ শতাংশ ভোট পড়ে। আর সর্বনিম্ন ১৭ শতাংশ ভোট পড়েছে বগুড়ার সোনাতলায়, চট্টগ্রামের মিরসরাই ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায়। এ ছাড়া ঢাকার নবাবগঞ্জে ১৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ১৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ ভোট পড়ে।
এর আগে ২০১৯ সালে পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছিল। আর ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে ৬১ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে। সে হিসাবে গত এক দশকের মধ্যে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে ভোটের হার এবারই সবচেয়ে কম।
তপশিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় নির্বাচন এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬০টি উপজেলায় ২১ মে, তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলায় ২৯ মে ও চতুর্থ ধাপে ৫৬টি উপজেলায় ৬ জুন ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি, তৃতীয় ধাপে ২১টি ও চতুর্থ ধাপে দুটি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে।