ডেস্ক রির্পোট:- জনগণের চেয়েও বড় শক্তিশালী গোষ্ঠী বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, কতিপয় বড় ধরনের মুনাফাখোরি গোষ্ঠী, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গেছে। শুধু বাজারকে নিয়ন্ত্রণ না, সরকারকেও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল চ্যানেল আইতে ‘আজকের সংবাদপত্র’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা’ উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, তা দিয়ে মানুষের তুষ্টি আসেনি এটা পরিষ্কার। যে শাসক দল ক্ষমতায় এসেছেন পুনরায় তারাও যে সন্তুষ্ট হয়েছেন সেটাও মনে হয় না। সেটা জনগণকে ভোট দেয়াতে আগ্রহ সৃষ্টি করার হোক, প্রর্থীদের ব্যাপারে আগ্রহ হোক। এমনকি নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হয়েছে সেটাকেও এই নির্বাচনের ভেতর দিয়ে খুব মনোযোগে আনা যায়নি। অর্থাৎ এটা দিয়ে বোঝা যায় যে, কতো ধরনের কাঠামোগত ত্রুটি ছিল। যেটার জন্য এটার (নির্বাচন) আসল লক্ষ্য সেইভাবে অর্জিত হয়নি।
তিনি বলেন, অর্থনীতি তো সমস্যায় আছে। একটা ছোট সমস্যার বড় সমস্যার মধ্যে এটা আছে।
তো ছোট সমস্যা, বড় সমস্যার মধ্যখানে যখন অর্থনীতি থাকে তখন আমরা বলি, এটার কি মসৃণ অবতরণ হবে, নাকি কঠিন অবতরণ হবে। প্লেনের যেমন সফট ল্যান্ডিং ও হার্ড ল্যান্ডিং থাকে যে ঝাঁকি কি বড় বেশি লাগবে, চাকা ভেঙে যাবে নাকি একটু ঝাঁকি দিয়ে আস্তে করে হয়ে যাবে। এখন সরকারের যে নির্বাচনের আগের কথায় মনে হচ্ছিল, তারা বহু ধরনের সংস্কার করবে বা অনেকগুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আটকে রেখেছে যাতে সেগুলোর কোনো যদি মনোগ্রাহী, জনগ্রাহী না হয় সেটাতে সংযত থেকেছে নির্বাচনের পরে এটা করবে। সরকারের পরিচিত অনেক মুখ বলেছেন, ডলারের সমস্যা মিটে যাবে, এলসির সমস্যা মিটে যাবে, ব্যাংকের সমস্যা হবে না, তেলের অভাবে লোডশেডিং থাকবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন ঘটনা হলো দুটো। এক. যে নির্বাচনটা হলো সেই নির্বাচনটা বা নির্বাচন তৎপরতা দিয়ে নতুন সরকার যে আসলো তারা কী এমন শক্তি নিয়ে আসলো যাতে এই কাজগুলো করার ক্ষমতা রাখে। বাহ্যত মনে হচ্ছে সেই শক্তি নিয়ে আসেনি। এটার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো ব্যাংক খাতের যে সংস্কারগুলো করার কথা এবং নিজেরা যেটা ঘোষণা করলো আমলাতান্ত্রিক উপায় সেটাও তারা রক্ষা করতে পারছে না তা এখন আমরা চোখের সামনে দেখছি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, জ্বালানি খাতের ক্ষেত্রেও ঠিক একই রকমভাবে হচ্ছে। যেখানে ভর্তুকি কমাচ্ছেন অথচ ক্যাপাসিটি চার্জ বন্ধ করতে পারছেন না। আমরা দেখতে পাচ্ছি শক্তিশালী কে। জনগণের চেয়েও বড় শক্তিশালী গোষ্ঠী বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে। কতিপয় বড় ধরনের মুনাফাখোরি গোষ্ঠী, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গেছে। শুধু বাজারকে নিয়ন্ত্রণ না, সরকারকেও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, আমরা যেটায় ধাক্কা খেয়েছি সেটা হলো নতুন সরকারের যে অবয়বটা (মন্ত্রিসভা) হলো সেটা দিয়ে বাজারকে সে কোনো আস্থা দিতে পারলো কিনা। দাতাগোষ্ঠীকে সে আস্থা দিতে পারলো কিনা? বিশেষ করে মন্ত্রিসভার সদস্যরা এইরকম একটি জটিল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার প্রত্যক্ষ দায়িত্বে থাকবেন, তাদের যে গুণাবলী, ব্যুৎপত্তি, অভিজ্ঞতা সেগুলো এই ক্ষেত্রে কতোখানি যুৎসই সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে এবং গত কয় মাসের ভেতরে সেই আশঙ্কাটা আরও সত্য হিসেবে আসছে। যতই আমরা বাজেটের দিকে যাবো তখন বাজেটে কী পদক্ষেপের ভেতরে সরকার এবার যাচ্ছে, নকশাটা কী? সেটা বোঝানোর মতো লোক আছে কিনা এটা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে। এটা হলে তো সরকারের নিজের যে নীতিমালা এবং সেটা যদি ভালোও হয় সেগুলোও কিন্তু আস্থার সংকটে পড়ে গেলে প্রতিষ্ঠা করা কষ্টকর হয়ে যাবে। নির্বাচনের পরে যে একটা নতুনভাবে শুরু হবে সেই সূচনাটা তো দেখলাম না।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, আমরা তিন ধরনের সংকটের ভেতরে আগাচ্ছি। এক বছর আগে শুধু যদি মূল্যস্ফীতির ব্যাপারে চিন্তিত থাকতাম; এখন মূল্যস্ফীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমাদের দায়-দেনা পরিস্থিতি। দায়-দেনা পরিস্থিতি এমন যে, আমরা আগে যেটা বলতাম কোনোদিন আমরা বিদেশের কাছে খেলাপি হইনি এই গর্বটা তো আর টিকছে না। কারণ পাঁচ বিলিয়ন ডলারের মতো আমরা দিতে পারছি না।
তিনি বলেন, লোডশেডিং এর বড় কারণ আমাদের তেল নাই। পৃথিবীর কোন দেশে আছে ২৫ হাজার মেগাওয়াট? আপনার সক্ষমতা কিন্তু আপনি ১২-১৩ হাজারের বেশি চালাতে পারছেন না। এটার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যে, ঝুঁকিটা শুধু দেনাটা বিদেশের টাকায় এটা না। দেনা তো দুই গুণ বেশি দেশের টাকায়। আপনি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছেন, ট্রেজারি বন্ড দিয়ে টাকা নিচ্ছেন। বিপিসির দায় শোধ করতে পারেন না দেখে দুই হাজার কোটি টাকার উপরে বন্ড দিয়েছেন। এগুলোর মাধ্যমে তো জাতীয় ঋণ বাড়ানো হয়েছে। তৃতীয়ত, বিদেশ থেকে যেটা ধার করেছেন সেটা পুরোনো ঋণ শোধ করছেন। অর্থাৎ ঋণ দিয়ে ঋণ শোধ করছেন। এর ফলে বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে রয়েছে। এই গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে যে উন্নতি দৃশ্যমান এর বড়টাই হলো সরকারি টাকায়। সরকার ঋণ করে এটার থেকে চালিয়েছে। কিন্তু সরকার কোনো কর বাড়াতে পারেনি। প্রবৃদ্ধি হলে তো বিনিয়োগ হওয়ার কথা। বিনিয়োগটাও হয়নি। প্রত্যক্ষ বিনিয়োগও হয়নি, বিদেশি বিনিয়োগও হয়নি। এখন প্রবৃদ্ধির ওপর ধাক্কা দিচ্ছে। সরকারি হিসাবেই এটা চার শতাংশ নেমে এসেছে। খুশির ব্যাপার এই, আইএমএফ’র চাপে তারা তিন মাস ধরে প্রবৃদ্ধির হিসাব করতে বাধ্য হচ্ছেন। আগে বছর শেষে একটা প্রবৃদ্ধির হিসাব দিয়ে দিতো। আমরা এটা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতাম। এখন সরকার তিন মাস পর করছে তার পক্ষে এটাকে অতিরঞ্জন করার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে, প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। যদি এই প্রবৃদ্ধির হার থাকে তাহলে সাড়ে ৭ শতাংশ অর্জন করা অসম্ভবই প্রায়। কারণ এখানে যদি ৪ শতাংশ হয়, পরবর্তী ৬ মাসে ১০ শতাংশ করতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১০ শতাংশ কোনোদিন প্রশ্নই উঠে না।
তিনি আরও বলেন, সরকার যদি ভালো থাকতো তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের ঢুকতে দেয় না কেন? বাংলাদেশ ব্যাংক আগে তথ্য-উপাত্ত সবচেয়ে ভালো দিতো। যেহেতু বিদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ওই হিসাব খুব স্বচ্ছ হয়। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকেও কিন্তু তথ্য-উপাত্ত ওয়েবসাইটে দেয়া বা প্রচার করার ক্ষেত্রে পিছুটান দিয়েছে। যদি আপনি তথ্য-উপাত্ত দিতে ভয় পান, দ্বিধা থাকে তাহলে তো ‘ডাল মে কুচ কালা!’ এটার উল্টো দিক চিন্তা করেন। আপনি বাজারকে তথ্য দিলেন না, নাগরিককে তথ্য দিলেন না, এই তথ্য যদি একচেটিয়া গোষ্ঠী পায় তাহলে তো সিন্ডিকেট কাকে বলে আপনি বুঝতে পারছেন। কতোখানি আমদানি হচ্ছে যদি না জানেন, বাজার যদি এই তথ্য না পায়, বাজার কীভাবে আস্থা পাবে এবং আপনার ভোক্তারা কীভাবে আস্থা পাবে। আমরা অর্থনৈতিক শাস্ত্রে এটাকে বলি অ্যাসিমেট্রিক ইনফরমেশন। অর্থাৎ তথ্যের প্রবাহটা খুব বৈষম্যপূর্ণভাবে বিষদৃশ্যভাবে হচ্ছে।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নিজের তথ্যের সঙ্গে অনেক সময় সাংঘর্ষিক কথা বলেন। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে কিছুদিন আগে, বাংলাদেশে বেকারত্ব তিন শতাংশের নিচে। অথচ সরকারের হিসাবে বলছে, ৪০ শতাংশ মানুষ কর্মে নেই, শিক্ষায় নেই, কোনো প্রশিক্ষণে নেই। তো যিনি ওই তথ্য আমাদের নেত্রীকে দিয়ে বলালেন নিঃসন্দেহে ভালো করে দেখেন নাই সংজ্ঞাটা কী।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, উন্নয়নের বয়ানটা কী? সরকার যেটা বলছে, সেটা সত্য? তাতে উপলব্ধি হলো, ওই বয়ান আংশিকভাবে সত্য হলেও বা পরিপূরণটাও সত্য হলেও আরেকটা সত্য আছে। সেটা হলো মধ্যবিত্ত কষ্টে আছে। কষ্টে নিম্নবিত্তরা স্কুলে না পাঠিয়ে মেয়েদের বাল্যবিয়ে দিচ্ছে, কোনো কোনো জায়গায় শিশুশ্রম সৃষ্টি হচ্ছে। তারা খাওয়া-দাওয়ার উপরে নিয়ন্ত্রণ করছে। পুষ্টিহীতায় ভুগছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্যের দিকে যেতে পারছে না। এই জিনিসগুলো তো সত্য। এই সংকট হলো, তথাকথিত দৃশ্যমান উন্নয়ন করতে চেয়েছেন। পৃথিবীর সব দেশেই এই অভিজ্ঞতা আছে। এটা বাংলাদেশ প্রথম করছে তা না। টার্কি থেকে শুরু করে আফ্রিকার বহু দেশ এগুলো করে। অন্যান্য দেশেও এগুলো করেছে। এসব করে তারা অসুবিধায় পড়ে। অসুবিধাটা কী? আপনি যেহেতু কর আহরণ বাড়াতে পারেন নাই; অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে করেন নাই। তখন এটাকে দায়দেনা শোধ করার জন্য যেই সময়টা দেয় এই প্রকল্পগুলো থেকে ওই অর্থ উপার্জন করতে পারবেন না। আপনি পদ্মা ব্রিজের টোল থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা আনতে পারেন। ওটা আপনার দুই থেকে তিন মাসের সুদের টাকা।
তিনি বলেন, এই সময়কালে যদি আপনি প্রকৃত বিনিয়োগ না বাড়াতে পারেন তাহলে কর আদায়ের ক্ষেত্রেও সমস্যা হবে। কর যারা দিতে পারে যাদের আয় হয়েছে তারা যদি এসব প্রকল্প থেকে আয় করে থাকে সে আয়টা তো পবিত্র না। তারা অতিমূল্যায়িত প্রকল্প থেকে করেছে। হাত বদলের থেকে করেছে। এগুলো থেকে যে আয়টা হয় সেটা করের ভেতরে আনা খুব কঠিন হয়। তারা বাংলাদেশের ভবিষ্যতে বিশ্বাস করে না। তারা দেশের থেকে টাকা বিদেশে পাচার করে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে, সঠিকভাবে দক্ষতার সঙ্গে জনমানুষের পক্ষে রাখতে হলে শক্তিশালী রাজনৈতিক ম্যান্ডেটসহ সরকার দরকার। যদি সরকারের রাজনৈতিক ম্যান্ডেটের ক্ষেত্রে দুর্বলতা থাকে তাহলে সে এই গোষ্ঠীকে মোকাবিলা করার শক্তি রাখে না। এজন্য আমি আপনার এখানে বলেছিলাম, নির্বাচন হয়তো একটা হবে কিন্তু ওই নির্বাচনের ভেতর দিয়ে এমন শক্তি নিয়ে আসবে যে ঋণ খেলাপিদের মোকাবিলা করতে পারবে?
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত আমলাতান্ত্রিকভাবে এসেছে সেটাও সঠিকভাবে আসেনি। সেটাকে কার্যকর করতে পারছে না এবং উল্টো নতুন করে ওই গোষ্ঠীরাই আবার এই ব্যাংকগুলোকে নিবে। এবং যারা টাকা নিয়ে চলে গেছে তাদের টাকা হয়তো আপনি মাফ করে দিবেন।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ এমন একটা জায়গা যেখানে বুদ্ধির অভাব নেই, বিবেচনার অভাব নেই, বিশ্লেষণের অভাব নেই। কিন্তু এগুলোকে আমরা কার্যে পরিণত করতে পারছি না। কার্যে পরিণত করার জন্য যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দরকার, যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব স্বাধীন স্বাবলম্বী হওয়া দরকার সে রাজনৈতিক নেতৃত্ব অনেক নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাদের কাছে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যাদের অনুগ্রহে আপনি ক্ষমতায় থাকেন। যাদের অর্থায়নে আপনি ক্ষমতায় থাকেন। এই অনুগ্রহ দেশে থাকে বিদেশেও আছে। তখন আপনি নির্বাচনী ইশতেহারে যে কথাটা লিখেছেন সেটাকে বাস্তবায়ন করতে পারেন না। এটিই নাগরিকদের সবচেয়ে বড় দুঃখের জায়গা।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সব সময় সার্বভৌম হতে হয়। সেই সার্বভোমত্বের ভিত্তিটা হলো জনগণের ম্যান্ডেট। জনগণের ম্যান্ডেটের ক্ষেত্রে যদি কোনো ধরনের সংশয় আসে তাহলে সরকারকে দুর্বল করে দেয়। সেই দুর্বলতার কারণে তাকে বিভিন্ন ধরনের স্বার্থগোষ্ঠীর সঙ্গে আপস করতে হয়। সেই আপসটা সার্বিকভাবে যে মূল্যবোধের কথা বলে, যে চেতনার কথা বলে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। এটা শেষ বিচারে অর্থনৈতিক সমস্যা না, বাংলাদেশে এটা রাজনৈতিক সমস্যা। এটা এক ধরনের রাজনৈতিক বৈধতার সমস্যা। এটা সাংবিধানিক বৈধতা না। সাংবিধানিক বৈধতা আছে। কিন্তু যদি রাজনৈতিক ও নৈতিক বৈধতা পরিষ্কার না থাকে তাহলে শত্রুকে মোকাবিলা করতে পারেন না। দেশের ভেতরেও পারেন না, নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য সীমান্তের ওপারেও পারেন না। তখন এমন সিদ্ধান্তের ভেতরে যেতে হয়, যেই সিদ্ধান্তটা পরবর্তী প্রজন্মের উপর গিয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, মাথাপিছু একলাখ টাকা ঋণ করতে ৫০ বছর লেগেছে। আর তার তিন বছরে হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। কত তীব্রতার সঙ্গে এখন ঋণ করছি। এই ঋণ তো আপনি আমি শোধ দেবো না। এই ঋণ আমাদের পুত্র-প্রপৌপত্ররা শোধ করবে। এটাকে আমরা বলি, আন্তঃ প্রজন্মের বৈষম্য সৃষ্টি করা। এটাকে সমাধান করতে হবে।
তিনি বলেন, রাজনীতি বিরাজনীতিকরণের চরম ব্যবস্থার ভেতরে এসেছে। এটা উপজেলা নির্বাচন, জেলা পরিষদ নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচন এমনকি দলের মধ্যে আলোচনাও বাংলাদেশের মতো একটা প্রাণচঞ্চল, গণতন্ত্রকামী, সামনের দিকে অভিসারী, ইতিবাচক জাতি, সেই জাতিকে কীরকম ম্রিয়মান করে ফেলছেন। যেটা এই সরকারের শক্তি হতে পারতো। আমার কাছে অদ্ভুত লাগে। সরকার নিজের ভালোটা নিজে কীভাবে বোঝে না।মানবজমিন