ডেস্ক রির্পোট:- পরমাণু ঋণাত্মক চার্জবিশিষ্ট ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক চার্জে চার্জিত হয়। আবার যারা ইলেকট্রন গ্রহণ করে, তারা ঋণাত্মক বা নেগেটিভ চার্জে চার্জিত হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে রচিত চলতি বছরের অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) বইয়ের ৩৬ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘তারা ঋণাত্মক বা পজিটিভ চার্জে চার্জিত হয়।’ হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় পানি উৎপন্ন হলেও একই বইয়ের ৯৩ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘হাইড্রোজন ও পানির বিক্রিয়ায় পানি উৎপন্ন হয়।’ প্লাটিপাস স্তন্যপায়ী প্রাণী হলেও ডিম পাড়ে। অথচ এই বইয়ের ১২৫ নম্বর পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় ছবির ক্যাপশনে লেখা আছে, ‘প্লাটিপাস মেরুদণ্ডী প্রাণী হলেও ডিম পাড়ে।’ ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ৩১ বইয়ের এমন ১৪৭টি ভুল রয়েছে। এসব ভুল সংশোধনের সুপারিশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি।
পাঠ্যবইয়ের ভুল-ত্রুটি নিয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি ‘পাঠ্যবইয়ে এবারও ভুলের ছড়াছড়ি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে কালবেলা। এরপর ভুল ও অসংগতি নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক ও সমালোচনা। একপর্যায়ে নতুন বইয়ের ভুলত্রুটি ই-মেইলে জানানোর অনুরোধ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনসিটিবি। তারপরই পাঠ্যবইয়ের ভুল অনুসন্ধানে নামে এনসিটিবির গঠন করা কমিটি। তারা ঈদুল ফিতরের পরে সংশোধনী পাঠাবে বলে জানায়। সে অনুযায়ী
ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে একটি তালিকা করা হয়েছে। এর আগে গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির চার বইয়ে ১৮৮ ভুল ও ৫৮টি অসংগতি চিহ্নিত করে। পরে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব বইয়ের ভুল বা অসংগতিগুলোর সংশোধনী দেয় এনসিটিবি।
গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। আর চলতি বছর বাস্তবায়ন করা হয় দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম চালু হবে। তবে চলতি বছরও পাঠ্যবই পরীক্ষামূলকভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তে উপযোগিতা যাচাই শেষে আগামী বছর থেকে এই শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই স্থায়ী করার কথা রয়েছে।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, পাঠ্যবইয়ের ভুল-ত্রুটি সংশোধনের জন্য প্রতিটি বইয়ের জন্য একজন বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা ভুলগুলো চিহ্নিত করে এনসিটিবির উচ্চপর্যায়ের কমিটির কাছে জমা দেন। সম্প্রতি এই কমিটি ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ৩১ বইয়ের ভুল ও সংশোধনীগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ভুলগুলোর সংশোধনী দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নবম শ্রেণির ১১ বইয়ে ভুল রয়েছে ৭৭টি; অষ্টম শ্রেণির ১০টি বইয়ে ৪৯টি; সপ্তম শ্রেণির ৫টি বইয়ে ১১টি; ষষ্ঠ শ্রেণির ৫ বইয়ে ১০টি। ভুলগুলোর মধ্যে বানান ভুলের পরিমাণই বেশি। এ ছাড়া কোনো কোনো বাক্য পুরোপুরি সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।
এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, এবার পাঁচটি পদ্ধতিতে বইগুলোর ভুল-ত্রুটি ও অসংগতি বের করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই সেটি শিক্ষার্থী পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। জানতে চাইলে এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান কালবেলাকে বলেন, পাঠ্যপুস্তকের ভুল-ত্রুটিগুলোর সংশোধনী দিয়ে একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটি মন্ত্রণালয় থেকে অধিদপ্তরগুলোতে যাবে। এর পরপরই অধিদপ্তর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেটি স্কুলগুলোতে পাঠিয়ে দেবে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ সেসব সংশোধনী সংশ্লিষ্ট শ্রেণি শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেবেন।
যেসব সংশোধনী আনা হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) বইয়ে আছে ৫৫০০ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা হবে ৫৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ের ১২ পৃষ্ঠায় আছে টাইসেপস ডিপস, যা হবে ট্রাইসেপস ডিপস। ২৬ পৃষ্ঠায় বায়ু দূষণের ফলে চর্মরোগ হয় বলা হলেও সংশোধনীতে সেটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এই শ্রেণির বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা বইয়ের ২৪ ও ৭২ পৃষ্ঠা থেকে ‘পৃথিবীতে যত মহাপুরুষ আছেন তাঁরা সকলেই শীলবান’ ও ‘রাজা বিম্বিসার বুদ্ধের চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট ছিলেন’ লাইন দুটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) বইয়ের ১৩৬ নম্বর পৃষ্ঠায় ছবির ক্যাপশনে ৯০ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমারেখার উল্লেখ থাকলেও এটি হবে পূর্ব দ্রাঘিমারেখা। একই শ্রেণির বিজ্ঞান (অনুশীলন বই)-এর কচ্ছপ ও খরগোশের দৌড় প্রতিযোগিতার গল্পে ৩ কিলোমিটার দৌড়ের কথা বলা হয়েছে। এর ফলে দৌড় প্রতিযোগিতার ফলাফলে সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে এটি সংশোধন করে ২৩ কিলোমিটার করা হয়েছে।
অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ২৩ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে প্রকৌশলী ফজলুর রহমান খান ১৯৮৩ সালের ২৭ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। পরে সেটি সংশোধন করে ১৯৮২ লেখা হয়েছে। একই বইয়ের ৫৩ ও ৫৭ পৃষ্ঠায় আঞ্চলিক বাংলায় ত্রয়োদশ সাল লেখা হয়েছে। সংশোধন করে সেখানে ১৩০০ সাল লেখা হয়েছে। বইয়ের ১২১ নম্বর পৃষ্ঠায় ভুলবশত বাঁয়ে ভিঞ্চির আঁকা বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘মোনালিসা’ লেখা হয়েছে। এটি সংশোধন করে ডানে লেখা হয়েছে। নবম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি বইয়ে ১৭৯ নম্বর পৃষ্ঠায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে ‘প্রগতিশীলতা’ বৃদ্ধির লক্ষ্যে লেখা হয়েছে, এটি সংশোধন করে ‘গতিশীলতা’ লেখা হয়েছে।