শিরোনাম
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা-সংঘর্ষ: ৩ শিক্ষার্থী নিহতের দাবি কর্তৃপক্ষের শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র যাত্রাবাড়ী, ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন বান্দরবানের রুমায় নিহত কেএনএফ’র তিন সদস্যের মরদেহ উদ্ধার রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে বাংলাদেশ-সুইডেন পলিটেকনিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে আওয়ামীপন্থীদের অপসারণ করে জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি রাঙ্গামাটির লংগদুতে জেলা পরিষদের সদস্য মিনহাজ মুরশীদ ও হাবীবকে সংবর্ধনা রাঙ্গামাটিতে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা: ৬৭৬ রোগীর চিকিৎসা রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ পুনর্গঠনে তীব্র ক্ষোভ জনমনে: বিতর্কিত নিয়োগ বাতিলের দাবি আওয়ামী লীগ পাহাড়ে বিভাজনের রাজনীতির জন্য দায়ী : ওয়াদুদ ভূইয়া

মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ও সাংবাদিকতার দায়

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
  • ১১৫ দেখা হয়েছে

রোবায়েত ফেরদৌস:- সাংবাদিকতা পৃথিবীজুড়েই ক্ষমতাসীনদের যে কোনো অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে যেমন সোচ্চার, তেমনি যে কোনো ধরনের বড় অপরাধ ও দুর্নীতি প্রকাশে অবিচল। গোটা পৃথবীতেই এমনটি হয়ে থাকে এবং এটিই হওয়া উচিত। একজন বিখ্যাত ব্যক্তি সংবাদের একটি সংজ্ঞা দিয়েছিলেন– সংবাদ হচ্ছে তা, যা কেউ না কেউ গোপন রাখতে চায় বা আটকে রাখতে চায়। কিন্তু সাংবাদিকতার কাজ হলো তা সামনে নিয়ে আসা। সাংবাদিকতা বইয়ের শুরুতে আমরা যেটা পাই, তা হলো– পৃথিবীর সব সরকারই মিথ্যা বলে। সরকার এবং বড় প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণ থেকে তথ্য লুকিয়ে রাখতে চায়। এতে তাদের সুবিধা। কিন্তু সাংবাদিকতা সত্য প্রতিষ্ঠা করে এবং হাটে হাঁড়ি ভাঙে।

সাংবাদিকতার এই কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম বা মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আমরা হিসাব পাই, গত বছর সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কতজন নিহত হয়েছেন, কতজন আহত হয়েছেন, কতজনের জেল-জরিমানা হয়েছে। যদিও এভাবে সাংবাদিকদের কেউ রুদ্ধ করতে পারে না।

এবারের মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের প্রতিপাদ্য বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ– ‘পরিবেশ বিপন্নের সময়ে সাংবাদিকতা’। দেশে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ আমরা দেখছি। ঢাকাসহ দেশবাসী যখন তাপপ্রবাহের প্রভাব খুব ভালোভাবে টের পাচ্ছে, তখন এই দিবসের প্রতিপাদ্যের যৌক্তিকতা আমরা খুঁজে পাচ্ছি। গত শীতের মধ্যে আমরা দেখেছি, ক’দিন খুব শীত পড়েছে। এর সঙ্গে পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের গভীর সম্পর্ক আছে। রাষ্ট্র ও সরকারগুলো পরিবেশের বিষয়টি খুব বেশি আমলে নিচ্ছে না। ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বলেছিলেন, এনজিওগুলো নাকি আমাজনে আগুন দেয়!

বাংলাদেশে আমরা দেখেছি, মানুষের প্রতিবাদ, আন্দোলন, মানববন্ধন এবং পরিবেশবাদীদের সব উদ্বেগ উপেক্ষা করে ইউনেস্কোর বিশ্বঐতিহ্যের অংশ আমাদের যে সুন্দরবন, সেখানে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। পৃথিবীর সরকারগুলো যে উন্নয়ন পরিবেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়, তথাকথিত এমন উন্নয়নেই মনোযোগী। আমরা বলছি, এমন উন্নয়ন চলতে পারে না। উন্নয়ন মানে শুধু কারখানা করা নয়, বিদ্যুৎকেন্দ্র করা নয়, মেট্রোরেল কিংবা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করা নয়। উন্নয়নের প্রধান শর্ত হলো, আপনি পরিবেশ ঠিক রাখছেন কিনা। যদি ঠিক রাখেন তবেই সেটা টেকসই উন্নয়ন হবে। আগামী প্রজন্মের জন্য আপনি কী রেখে যাচ্ছেন? গাছপালা কেটে যদি এখন আপনি উন্নয়ন করেন, আর আগামী প্রজন্ম যদি পানির জন্য হাহাকার করে, তীব্র শীত বা গরমে যদি তারা কষ্ট পায়, তবে সেটা কীভাবে টেকসই উন্নয়ন হয়! পরিবেশসম্মত উন্নয়ন জরুরি।

এখানে সাংবাদিকতা কী করতে পারে? এবারের মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের দাবি অনুসারে, আমরা যে ভয়ংকর পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছি, সেখানে সোচ্চার হওয়া। ঢাকার পাশের বুড়িগঙ্গার অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গিন। দুর্গন্ধের কারণে সেখানে যাওয়া যায় না। আমাদের অন্যান্য নদীও দখল-দূষণে বিপর্যস্ত। ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পরিশোধন না করেই পয়ঃবর্জ্যসহ যাবতীয় ময়লা আমরা নদীতে সরাসরি ফেলছি। বর্ষাকালে আমরা দেখছি একটু বৃষ্টিতেই ঢাকা শহর ডুবে যায়; নৌকা চলাচলের মতো অবস্থা তৈরি হয়। এবারের তীব্র তাপপ্রবাহের অন্যতম কারণ, আমাদের গাছ নেই। অবাধে শহরের গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। গাছ কেটে বিশাল ভবন করার নাম কি উন্নয়ন? সাতমসজিদ রোডে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যখন গাছ কাটছিল তখন আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমি নিজে সেখানে ছিলাম। সুলতানা কামাল, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ নাগরিকরা এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। আমাদের তারা কথা দিয়েছিল– নতুন গাছ লাগানো হবে। কিন্তু গাছ লাগাতে আমরা দেখছি না। তা ছাড়া এমন গাছ লাগানো হয়, যেগুলো বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য উপযোগী নয়। এয়ারপোর্ট রোডে এমন গাছ লাগানো হয়েছিল। বাংলাদেশের পরিবেশ, মাটি, জলবায়ু অনুসারেই গাছ লাগাতে হবে।

সাংবাদিকের কাজ হলো পরিবেশ রক্ষায় সরকার, সিটি করপোরেশন, নদী রক্ষা কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি স্মরণ করিয়ে দেওয়া; পরিবেশ, নদী, বন ইত্যাদি রক্ষায় তাদের কাজ তুলে ধরা; সরকার ইশতেহার অনুসারে কাজ করছে কিনা; পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ কোথায় হচ্ছে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে তা তুলে ধরা সাংবাদিকের কাজ। এসব প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে যারা নীতিনির্ধারক, তাদের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি করা; পরিবেশ কিংবা জলবায়ু খাতের বরাদ্দ ঠিক খাতে ব্যয় হচ্ছে কিনা তাও তুলে ধরা। আমরা দেখেছি, জলবায়ু ফান্ড এসেছে বিদেশ থেকে, সেটা সঠিক জায়গায় খরচ হয়নি; রাজনৈতিক নেতাকর্মী সেই অর্থ পেয়েছেন। এমনকি এমন জায়গায় ব্যয় হয়েছে, যেখানে উল্টো পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে। তাঁত উন্নয়নের নামে অর্থ এসেছে অথচ আদমজী মিল বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকাসহ সারাদেশে আমাদের জলাশয়গুলো দখল হয়ে যাচ্ছে।

পরিবেশ রক্ষা করা এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচানো সাংবাদিকদের অন্যতম গুরুত্বের জায়গা হওয়া উচিত। বিশ্বব্যাপী এটি যে গুরুত্ব পাচ্ছে– এবারের মুক্ত গণমাধ্যম দিবসই তার প্রমাণ। আমরা ইট, কাঠ, পাথর খেতে পারব না। আমাদের ধানি জমি লাগবে। সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধারে আমরা আন্দোলন করেছি। সেখানে তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড করার পাঁয়তারা চলছে। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, তিন ফসলি জমিতে স্থাপনা করা যাবে না। অথচ প্রতিবছর বেপজা থেকে ইপিজেড করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে আদিবাসী সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর তিনজনকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। সেখানে প্রায় পাঁচ হাজার বিঘা জমিতে ফসলের পরিবর্তে অন্য কিছু হলে পরিবেশের ক্ষতি হবে, ফসল মার খাবে, মানুষের খাদ্যের সংকট হবে। আমরা মোংলা বন্দরে গিয়েছি। সেখানে দেখেছি, ড্রেজিংয়ের নামে তিন ফসলি ধানি জমিতে পলি ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। সেটি ঠেকাতে তার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি।

পরিবেশ রক্ষার এই আন্দোলন-সংগ্রামের খবরগুলোও সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হওয়া দরকার। অপরাধ, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয় সংবাদমাধ্যমে যতটা গুরুত্ব পায়, পরিবেশ অতটা পায় না। সে জন্য এবারের মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আমি বলব– পরিবেশ, জলবায়ুকে গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করা দরকার। নীতিনির্ধারকদের চোখে আঙুল দিয়ে তাদের ভুল-ত্রুটি দেখিয়ে দিতে হবে। তাতে আমাদের নদী বাঁচবে, সুন্দরবন বাঁচবে, পরিবেশ বাঁচবে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে পারব। পৃথিবীকে বাঁচানোর দায়বদ্ধতা থেকেও সাংবাদিকদের এ দায়িত্ব পালন করতে হবে।

রোবায়েত ফেরদৌস: অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions