ডেস্ক রির্পোট:- ঝিনাইদহের বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়গুন নেছার বাড়ির ১০ বছরের পানির বিল এসেছে ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮৬৬ টাকা। এই বিপুল পরিমাণ পানির বিল নিয়ে চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন জয়গুন নেছা। কীভাবে এই পানির বিল সুদাসলসহ পরিশোধ করবেন তা ভেবে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এই বীরাঙ্গনা। ঝিনাইদহ শহরের কলাবাগানপাড়ার শহীদ গোলাম নবী সড়কের হাবিবুর রহমানের স্ত্রী জয়গুন নেছা। ২০১৯ সালে সরকার তাকে বীরাঙ্গনা খেতাব দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর হাতে জয়গুন নেছা পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। তার যুবতিকন্যা ও স্বামীকে হানাদার বাহিনী তুলে নিয়ে হত্যা করে। বৃদ্ধা জয়গুন নেছা জানান, তার বাড়িতে পয়েন্ট ৭৫ ব্যাসার্ধের পানি সরবরাহের লাইন রয়েছে। প্রতি মাসে তার বিল আসে ২৫৫ টাকা। কতোদিন আগে তার পানি সরবরাহের সংযোগ নিয়েছেন তা স্মরণ নেই তার।
তবে ১৫ বছর হবে বলে তিনি জানান। তার মধ্যে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি বিল পরিশোধ করেছেন। সেই হিসাব ধরলে গত ১০ বছরে তার পানির বিলের পরিমাণ ৩ হাজার ৬ শত টাকা হয়। এদিকে ঝিনাইদহ পৌরসভার পানির বিল সরবরাহ বিভাগের মো. রবিউল ইসলাম জানান, জয়গুন নেছার মূল পানির বিল ৩০ হাজার ১২০ টাকা। বাকি টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে যে সুদ হয়ে সেটা বিলের সঙ্গে যোগ হয়ে এই বিপুল পরিমাণ অংক দাঁড়িয়েছে। ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দীন জানান, ২০১৭ সালে এটুআই প্রজেক্টর সফটওয়ারের আওতায় বিল প্রস্তুত করা হয়। সেখানে যেভাবে সফটওয়ার তৈরি হয়েছে তাতে জয়গুন নেছার মূল বিলের সঙ্গে প্রতি মাসে ৮১ হাজার ৫৫৩ টাকা সুদ যোগ হচ্ছে। বছর বছর সেটা আবার চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। তিনি বলেন, এটা পৌরসভার কোনো ভুল নয়। তিনি আরও জানান, জয়গুন নেছা ২০১৪ সাল থেকে পানির বিল দেন না। তিনি সুদ ও আসল মওকুফের আবেদন করলে ভেবে দেখা হবে। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়গুন নেছার বিল নিয়ে কোনো অভিযোগ না থাকলেও তিনি জানান, পৌরসভায় গিয়ে তিনি পানির বিলের সুদ মওকুফের জন্য মেয়র সাহেবের খোঁজে কয়েকবার গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে না পেরে ফিরে এসেছেন। এরপর আর কার কাছে যাবেন তিনি তা ভেবে পান নাই। ফলে এখানে সেখানে ঘুরে ঘুরে আবার বাড়ি ফিরে আসেন। তিনি বলেন, সরকার আমাকে প্রতি মাসে যে ভাতা দেন তার মধ্যে থেকে ঋণ বাবদ ১৪ হাজার টাকা কেটে নেয়। প্রতি মাসে পান মাত্র ৬ হাজার টাকা। এই অল্প টাকা দিয়ে কোনোভাবে আমার সংসার চলে। তার মধ্য থেকে এই বিপুল পরিমাণ পানির বিল পরিশোধ করা আমার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই সুদের টাকা যদি পৌর কর্তৃপক্ষ মওকুফ করে আসল টাকা বিল পরিশোধ করার সুযোগ করে দেন তাহলে আমি দুবেলা খাই আর না খাই বিলটি পরিশোধ করে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম।