টানা তাপপ্রবাহে মরছে পোলট্রি-গবাদিপশু

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
  • ২১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- চলতি মাসের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ বইছে। এর প্রভাব পড়ছে মানুষ ও পশু-পাখির ওপর। তীব্র তাপপ্রবাহে গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্রয়লার ও গরু মারা যাওয়ার কথা জানিয়েছেন খামারিরা। পাশাপাশি মুরগি ও গরুর ওজন কমে যাওয়া এবং ডিম ও দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।

গত বৃহস্পতিবার প্রান্তিক পোলট্রি খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানায়, ঈদুল ফিতরের পর ১০-১২ দিনে দেশে ১০ লাখের বেশি ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালি মুরগি মারা গেছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ছিল ব্রয়লার মুরগি। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ২০০ কোটি টাকার মতো। এরপর গত দুদিনে এ মৃত্যু আরো বেড়েছে বলে জানান খামারিরা।

এদিকে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) হিসাবে গত কয়েক দিনে তীব্র গরম, লোডশেডিং ও বাদলা রোগে দুই হাজার গরু মারা গেছে। এক হাজারের বেশি গাভী সাত-আট মাসে গর্ভপাত করেছে। গরু সুস্থ রাখতে খামারগুলোয় খরচ বেড়েছে অন্তত ২০ শতাংশ। এবার কোরবানি ঘিরে সারা দেশে ১ কোটি ২০ লাখের মতো পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে গরমে ১৫ দিনের ব্যবধানে ৯৯ শতাংশের বেশি পশুর ওজন কমে গেছে। গরু-মহিষের আকারভেদে ওজন কমেছে ৩০ থেকে ৭০ কেজি পর্যন্ত। প্রতিটি গাভী থেকে দুধ উৎপাদন কমেছে ২০-২৫ শতাংশ। ৫৫ হাজারের বেশি খামারি এ সংগঠনের সদস্য।

দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে সাতদিনে গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের উত্তর আনালেরতারি গ্রামে প্রতাপ ঘোষের চারটি বিদেশী জাতের গরু মারা গেছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছে খামারের বাকি গরুগুলোও। খামারে একাধিক ফ্যান লাগিয়ে, এমনকি চালে পানি ছিটিয়ে পশুর ঘর ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করলেও তাতে কাজ হয়নি। একই কথা জনিয়েছেন গাইবান্ধা সদরের উত্তর গিদারী গাছের ভিটা গ্রামের খামারি জোহা মিয়া। তিনি জানান, গত চারদিনে হিট স্ট্রোকে তার ছয়টি গরু মারা গেছে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের গোয়াইলবাড়ি গ্রামের খামারি আবু তালেব বলেন, ‘‌তীব্র গরমে আমার খামারের একটি ফ্রিজিয়ান গরু শনিবার খাওয়া বন্ধ করে দেয়। গতকাল গরুটি মারা যায়। গরুটির বাজারমূল্য অন্তত ৮৫ হাজার টাকা। তবে খামারের অন্যান্য গরু এখনো সুস্থ রয়েছে।’

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুদিন পর গতকাল চুয়াডাঙ্গায় কমেছে তাপ। জেলাটিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহীতে গতকাল তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। পাবনায় ৪১ দশমিক ৫, মংলায় ৪১, সাতক্ষীরায় ৪১ দশমিক ১ ও ঢাকায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

বর্তমানে যশোর ও রাজশাহী জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আর খুলনা বিভাগের বাকি জেলাগুলো এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা ও নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুরের বাকি অংশ এবং ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

বিডিএফএর সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ‘‌টেকসই খামার ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের ভাবতে হবে। আমাদের আবহাওয়ায় সহনশীল গরু লালন-পালন করতে হবে, যেন আবহাওয়ার কারণে ক্ষতি না হয়। গত কয়েক দিনে গরমের তীব্রতায় গরু-মহিষ খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের গরু। এক হাজারেরও বেশি গরুর সাত-আট মাসে গর্ভপাত হয়েছে। কোরবানি সামনে রেখে এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা খামারিদের জন্য খুব কঠিন। আধুনিক খামারিরা আগেভাগে প্রস্তুতি নিলেও প্রান্তিক খামারিদের অধিকাংশ জানেন না, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী করতে হবে।’বণিক বার্তা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions