ডেস্ক রির্পোট:- ‘দেশের রাজনীতি ঠিক নেই বলেই অর্থনীতির ভয়ংকর অবস্থা’ বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে গ্রন্থ প্রকাশনার এক অনুষ্ঠানে দেশের বর্তমান অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে তিনি এ রকম মন্তব্য করেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শুধু অর্থনীতির বিষয়ে কথা বললে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান হবে না। এখানে রাজনীতির বিষয়টা সবচেয়ে বড়।
রাজনীতি ঠিক না হলে অর্থনীতি ঠিক হবে না… এটা তো আপনারা দেখতেই পারছেন… ভয়ংকর অবস্থা। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যদি সঠিক না হয় অর্থনীতি ঠিক হবে না। রাজনীতিটা মেইন।’
‘অর্থনীতির এই টেকনিক্যাল কথা-বার্তা… গ্রোথ রেইট ৫ পয়েন্ট ৫ হলো না ৫ পয়েন্ট ৭ হলো, তারপর ইনফুয়েশন ৮ দশমিক ২ হলো না ৮ দশমিক ৩ হলো… এগুলো ভেতরে কচকচানি করলে তো সমস্যার সমাধান হবে না।
মূল সমস্যা হলো, আমাদের ইনস্টিটিউশনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, রাজনীতিটাও অনেকটা ধ্বংসের পথে এবং সেখানে অর্থনীতি কিভাবে ঠিক থাকবে?”
সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যে রাজনীতিতে ছাত্রজীবনে পজিটিভ রাজনীতি, ভালো রাজনীতি, মানুষের কল্যাণে রাজনীতি যদি না করেন, তবে কিন্তু ভবিষ্যতে ভালো মানুষও হবেন না। ভ্যালুজ কিছু থাকতে হয়। আমাদের সময়ে কিছু ভ্যালুজ ছিল। মাহবুব উল্লাহ ভাইয়ের তো ছিলই।
সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন, অনেক কিছু হতে পারতেন।’
‘আমরাও করেছি, আমার বন্ধু আলমগীর (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর)-ও সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন। একেবারে করেছেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে ভ্যালুজগুলো বারে বারে তাড়া করত। এখনো আমাদেরকে এটা তাড়িত করে।
মানুষের জন্য চিন্তা, সাধারণ মানুষের জন্য চিন্তা- এসব চিন্তার জন্য এখনো আমাদের তাড়িত করে।’
ওই সময়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘অপর দিকে ওই সময়ে আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব ছিল, যারা আমাদের মার দিয়েছে। আমাকেও একবার উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। এনএসএফ নিয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে সহযোগী যারা তারা এখন প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ। তারা এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। নাম বলব না। আপনারা অনেকেই জানেন। তারা এখন আমাদের সঙ্গে তর্ক করে- তোমরা কী করেছ?
‘অত্যন্ত দুঃখ লাগে, বন্ধু মানুষ তো। অনেক সময় এবোর্ট করতে পারি না। কিন্তু ইতিহাস তাদের ক্ষমা করেছে কি না জানি না। মনে হয় না ক্ষমা করেছে। মানুষ নিশ্চয়ই তাদের ক্ষমা করে নাই।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে অর্থনীতিবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহফুজ উল্লাহর লেখা আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘আমার জীবন আমার সংগ্রাম’-এর প্রকাশনা উপলক্ষে এই আলোচনাসভা হয়। ৫৯২ পৃষ্ঠার গ্রন্থটির প্রকাশ করেছে ‘বাঙ্গালা গবেষণা’।
অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে বসে আলোচনা শোনেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, নাজমুল হক নান্নু, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মীসহ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে লেখক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর ছোট ভাই প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আখতার হোসেন খান।