শিরোনাম

রাঙ্গামাটিতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়ছে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৯৭ দেখা হয়েছে

রাঙ্গামাটি:- ম্যালেরিয়ার ‘হট স্পট’ পার্বত্য চট্টগ্রামে মৃত্যুহার কমে এলেও শূন্যের কোটায় নামেনি। ২০১৭ সালের পর খাগড়াছড়িতে তিন ও বান্দরবানে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে মশাবাহিত এ ভাইরাসে। তবে ২০১৭ সালের পর এ রোগে রাঙ্গামাটিতে কারো মৃত্যু না হলেও আক্রান্ত বেড়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, পার্বত্য জেলা তিনটি দেশের সীমান্তবর্তী হওয়ায় ভারত ও মিয়ানমারের ম্যালেরিয়া সংক্রমণ বেশি থাকে। এতে শহরাঞ্চলে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কমে এলেও ঝুঁকি বাড়ছে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে।

জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি-এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ১৫৮ জন ম্যালেরিয়া রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫০৩ জন পাওয়া গেছে রাঙ্গামাটিতে। বান্দরবানে ৪৬০, খাগড়াছড়িতে ৪০, কক্সবাজারে ১৩৮ ও চট্টগ্রামে পাওয়া গেছে ১৩ জন। এ সময় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে দুজন মারা গেছেন। ২০১৭ সালের পর রাঙ্গামাটি ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুশূন্য হলেও ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৩ সালে খাগড়াছড়িতে তিনজন মারা গেছেন। এছাড়া বান্দরবানে ২০১৭ সালে একজন, ২০১৯ সালে দুজন, ২০২০ সালে দুজন ও ২০২১ সালে চারজন এবং ২০২৩ সালে দুজন মারা গেছেন।

জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির রাঙ্গামাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্ভিল্যান্স মেডিকেল অফিসার ডা. এন্ড্রু বিশ্বাস বলেন, ‘রাঙ্গামাটির ১০টি ইউনিয়নে ম্যালেরিয়া রোগী পাওয়া গেলেও বিলাইছড়ির বড়থলি ও ফারুয়া, বরকলের আইমাছড়া ও বড় হরিণা এবং জুরাজড়ির মৈদং ইউনিয়নে রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্তবর্তী এ চার উপজেলায় মোট আক্রান্তের ৯০ শতাংশ রোগী পাওয়া যাচ্ছে। ২০১৭ সালে আক্রান্ত ৭৫ শতাংশ থাকলেও এখন ৯০ শতাংশ হয়েছে। সীমান্তের ওপারে ভারত ও মিয়ানমারে ম্যালেরিয়া নির্মূলে কার্যকর কর্মসূচি না থাকায় ওই দেশের প্রভাব ফেলছে বাংলাদেশেও। গত বছরও রাঙ্গামাটির সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় প্রায় ৬০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে, যারা অন্য দেশের বাসিন্দা। চিকিৎসার জন্যই তারা বাংলাদেশে এসেছে।’

তিনি জানান, ‘সীমান্তবর্তী ওইসব এলাকায় ওপারের মশাও এপারে আসে। এসব এলাকা ঘন বন ও অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়ায় মশার বিস্তার বাড়ছে। স্থানীয় অধিবাসীরা দিনের বেলায় যখন বনে কাঠ কাটতে কিংবা অন্যান্য কাজে যায়, সেখান থেকে তারা আক্রান্ত হয়। বলা যায়, মশা অনেকটা স্বভাব পরিবর্তনের ফলেও সীমান্তবর্তী এলাকায় ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।’

রাঙ্গামাটি জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে এ জেলার ১০ উপজেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী ছিল ৮ হাজার ২৮৭ জন। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী চার উপজেলা বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল ও বাঘাইছড়িতেই ছিল ৬ হাজার ১৮৯ জন; যা মোট আক্রান্তের ৭৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে জেলায় মোট আক্রান্ত রোগী ছিল ৩ হাজার ১৩ জন। সীমান্তবর্তী চার উপজেলায় ছিল ২ হাজার ৫৯২ জন, যা মোট আক্রান্তের ৮৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৬৬ জন। সীমান্তবর্তী চার উপজেলায় ছিল ৫ হাজার ৩৫৮ জন, যা মোট আক্রান্তের ৮৮ শতাংশ। ২০২০ সালে জেলায় আক্রান্ত হয়েছিল ১ হাজার ৩৯০ জন। সীমান্তবর্তী চার উপজেলায় ছিল ১ হাজার ২০৯ জন, যা মোট আক্রান্তের ৮৭ শতাংশ। ২০২১ সালে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫৫৪ জন। সীমান্তবর্তী চার উপজেলায় ছিল ১ হাজার ৪১০ জন, যা মোট আক্রান্তের ৯১ শতাংশ। ২০২২ সালে জেলায় আক্রান্ত হয়েছিল ৩ হাজার ২১৯ জন। সীমান্তবর্তী চার উপজেলায় ছিল ২ হাজার ৮৮৪ জন, যা মোট আক্রান্তের ৯০ শতাংশ। ২০২৩ সালে জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৭১৩ জন। সীমান্তবর্তী চার উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ২৪১ জন, যা মোট আক্রান্তের ৯০ শতাংশ।

সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা বলেন, ‘রাঙ্গামাটির সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোয় ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তবে মৃত্যু শূন্যে নেমে এসেছে। আমাদের তুলনায় পার্শ্ববর্তী দেশের চিকিৎসাসেবা অনেকটা অপ্রতুল। বিভিন্ন সময় তারা এদেশে মেডিকেল ক্যাম্প হলে চিকিৎসা নিতে আসে। তবে গত কয়েক বছর সীমান্ত সড়কের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরাও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন, যাদের বেশির ভাগই বাঙালি।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে হলে জীবাণু ও বাহক ধ্বংস করতে হয়। জীবাণু ধ্বংস করা সম্ভব হলে মশা কামড়ালেও ঝুঁকি থাকবে না। আবার জীবাণু ধ্বংস না হলেও যদি মশার বিস্তার রোধ করা যায়, সেক্ষেত্রে বাহকের অভাবে ম্যালেরিয়া ছড়ানোর সুযোগ থাকবে না।

এ ব্যাপারে বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘২০২৩ সালেও বান্দরবানে দুজন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। জেলার লামা, আলীকদমে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কিছুটা বেশি। পার্বত্য এলাকা এমনিতেই ম্যালেরিয়া ঝুঁকিপ্রবণ। চাইলেই স্বল্প সময়ের মধ্যেই ম্যালেরিয়া নির্মূল করা যাবে না। আক্রান্ত ওইসব এলাকার মানুষ কিছুটা অসচেতন ও গহীন জঙ্গল এলাকা হওয়ায় সেখানে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি বেশি।’বণিক বার্তা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions