বিএনপিকে নিয়ে ‘ফেইক নিউজ’ উপজেলা নির্বাচন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৯৬ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ‘যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়া-পড়শির ঘুম নেই’ প্রবাদের মতো হয়েছে দেশের কিছু গণমাধ্যমের (!) অবস্থা। দেশ-বিদেশে মাঠের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু সরকারের অনুকম্পা ও সুবিধাভোগী কিছু মিডিয়া প্রতিদিন প্রচার করছে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কিছু মিডিয়ার এই ‘ফেইক নিউজ’ প্রচারে রহস্য কি? উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে দেশের সবচেয়ে বেশি জনসমর্থিত রাজনৈতিক দল বিএনপি কী ফেইক নিউজের কবলে পড়ে গেল? গত কয়েকদিন ধরে ‘উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিএনপি-জামায়াতের ৭০ নেতা’ ‘উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির স্থানীয় নেতারা অংশ নিচ্ছেন’ ‘সিদ্ধান্তহীনতায় বিএনপি, তবু প্রার্থী হচ্ছেন নেতারা’ ‘উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বগুড়া বিএনপির নেতারা!’ ‘বিএনপির ৪৫ জনের বড় অংশই ভোটে থাকছেন’ ‘নির্বাচনে অংশ নিতে মরিয়া বিএনপির নেতারা’ ‘বিএনপি নেতারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে: ওবায়দুল কাদের’ ‘উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে দূরত্ব বাড়ছে বিএনপির কেন্দ্র ও তৃর্ণমূল নেতাদের’ ‘উপজেলা নির্বাচন: মুখে কঠোর বিএনপি, প্রার্থী হচ্ছেন নেতারা’ ‘উপজেলা নির্বাচন: দলের নির্দেশনা অমান্য করে লড়ছেন সিলেটের নেতারা’ শিরোনামে খবর প্রচার করা হয়েছে। সত্যিই কী বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতারা কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন? অনুসন্ধান করে দেখা যায় সর্বোই মিথ্যা তথ্য। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ফেইক নিউজ’। গতকালও বিএনপির সিনিয়র নেতারা ‘উপজেলা নির্বাচন বর্জন’ এ কথা জানিয়েছেন। বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে নেই অথচ গণমাধ্যমগুলো ‘বিএনপি নেতারা ভোট করছেন’ এমন ‘ফেইক নিউজ’ ফলাও করে প্রচার করছে কেন?

রহস্য আর কিছু নয়, সরকারের নীতি নির্ধারকদের খুশি করার চেষ্টা! কিছু পেতে হলে তো তাদের খুশি করতে হবেই। সরকারের নীতি নির্ধারকরা আন্তর্জাতিক মহলকে দেখাতে চায় উপজেলা নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করেছে। সরকারের এই ‘চেতনা’ বুঝতে পেরে অনুগত মিডিয়াগুলো কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাহেব ও মোসাহেব’ কবিতার ‘সাহেব কহেন, চমৎকার! সে চমৎকার/ মোসাহেব বলে চমৎকার! সে হতেই হবে যে, হুজুরের মতে অমত কার’। বিএনপির পথ ধরে জামায়াতও উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দলটির ২২ জন নেতা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে স্বতন্ত্রভাবে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছিলেন। কেন্দ্রের নির্দেশনা পেয়ে তারা সেটা আর জমা দেননি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জেএসডি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, গণদল, নাগরিক ঐক্য, বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, এলডিপি, জাতীয় পার্টি (জাফর), এনপিপি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলনসহ বাম ঘরানা ও ইসলামী ধারার বেশির ভাগ দলই উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। ইসলামী ধারার যে সব দল আসন সমঝোতার লোভে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল তারাও প্রার্থী দেননি।

৭ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নেয়া শমশের মোবিন চৌধুরী-অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের যৌথ নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপি, বিএনপির সাবেক নেতা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন মাজার কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারছে না। নগদ অর্থ আর এমপি-মন্ত্রী হওয়ার প্রলোভনে পড়ে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজের ভুলের জন্য নেতারা এখন হাপিত্যেস করছেন। শুধু কি এরাই? ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক দলগুলোর বেশির ভাগই উপজেলা নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি), হাসানুল হক ইনুর জাসদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার আগ্রহ নেই। বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা কোনো প্রার্থী দেয়নি। দীলিপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল, নজিবুল বশর মাইজভাঙ্গারীর তরিকত ফেডারেশন, ন্যাপ, গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগের উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দেয়ার সক্ষমতা নেই। রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টির কয়েকটি উপজেলায় পার্থীর দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জিএম কাদের) নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিলেও দলটি প্রার্থী দেয়ার মতো নেতা খুঁজে পাচ্ছে না। উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে আবেদন করতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুথ খুললেও মাত্র ৮টি ফরম বিক্রি হয়েছে। বিগত উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সাড়ে ৪শ’ উপজেলায় প্রার্থী দিলেও মাত্র ২টি উপজেলায় বিজয়ী হয়েছে।

অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বিএনপি হচ্ছে দেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। দলটির আহবানে সাড়া দিয়ে দেশের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ মানুষ ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিতে যাননি। হামলা-মামলা-জুলুম-নির্যাতনের মধ্যে দলটি সুসংগঠিত। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ অনেকটাই বিশৃংখল। ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেকড় পর্যায় পর্যন্ত নেতারা কেউ কাউকে মানছেন না। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনদের প্রার্থী না হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হলেও তৃর্ণমূলে কেউ সে নির্দেশ মানছেন না। ফলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কার্যত বিশৃংখল। এছাড়া টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় নতুন প্রজন্ম যেমন আওয়ামী লীগের দুর্নীতি, লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা, নেতাদের বিদেশে টাকা পাচার করে বাড়ি-গাড়ি ব্যবসাসহ লুম্পেন চরিত্র দেখছে; তেমনি বিএনপির নেতাদের নামে হাজার হাজার মামলা, পৈসাচিক জুলুম-নির্যাতনের চিত্র দেখছে। ব্যপক জনসমর্থিত বিএনপির সারাদেশে লাখ লাখ নেতাকর্মী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের একেক জনের বিরুদ্ধে একশ থেকে সাড়ে চারশ মামলা রয়েছে; কিন্তু রহস্যজনক কারণে কিছু নেতার বিরুদ্ধে মামলা একেবারে হাতে গোনা। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কিছু নেতার বিরুদ্ধে মামলাই হয়নি। আবার কিছু নেতার সঙ্গে দলের তেমন সম্পর্ক নেই। ওই সব নেতা ক্ষমতাসীনদের স্থানীয় নেতা, মন্ত্রী-এমপিদের অনুকম্পায় চলতেন-চলছেন। ওই সব নেতাদের কয়েকজন উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে মনোনয়ন পত্র কিনেছেন। সরকারের আজ্ঞাবহ কিছু গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী সরাইল উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন মাস্টার, ফরিদপুর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রউফ উন নবী ও যুবদলের সাবেক নেতা কে এম নাজমুল ইসলাম, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা বিএনপির সভাপতি নগেন্দ্র চন্দ্র সরকার, রাজশাহীর গোদাগাড়ী জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আমিনুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাজমুল আলম, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রমিজ উদ্দিন, নাঙ্গলকোট উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের সাবেক বিএনপি নেতা আশরাফ হোসেন ও ভোলাহাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবর আলী বিশ্বাস, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, পিরোজপুর ইন্দুরকানি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফায়জুল কবির তালুকদার, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেবুল মিয়া, যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা সফিক উদ্দিন, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শামসুর রশিদ, ফুলপুর পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমরান হাসান ও হালুয়াঘাটে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আবদুল হামিদসহ কিছু নেতা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এদের বেশির ভাগই বিএনপির সাবেক নেতা। এই সাবেকদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া দলে নিষ্ক্রিয় এমন কিছু নেতা মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, এসব নেতার বেশির ভাগের সঙ্গে দলের তেমন সম্পর্ক ন্ইে। এরা দল থেকে পরিত্যাক্ত। অথচ এসব নেতাকে বিএনপির নেতা হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। বিএনপি থেকে পরিত্যাক্ত, বহিস্কৃত এবং সাবেক কয়েকজন চতুর্থসারির নেতার নির্বাচনে অংশ নেয়া কী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া বোঝায়?ইনকিলাব

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions