জগদীশ তংচঙ্গ্যা,রাঙ্গামাটি:- নিজের স্বপ্নের গড়া প্রতিষ্ঠান আর প্রাণ প্রিয় কোমলমতি ছাত্র- ছাত্রীদের নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে এভাবে মনের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
হ্যাঁ, বলছিলাম পার্বত্য চট্টগ্রামে কিংবদন্তিতুল্য তঞ্চঙ্গ্যা জাতির গৌরব, বহু পুস্তক রচয়িতা, কীর্তিমান চিত্রশিল্পী, স্বীকৃতি প্রাপ্ত গীতিকার, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মজীবী এবং রাঙ্গামাটি চারুকলা একাডেমির অধ্যক্ষ, প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মান্যবর গুণীজন শ্রী রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যার কথা। যাঁর জন্ম শুক্রবার ২৩ জৈষ্ঠ্য ১৩৪৭ বঙ্গাব্দ, ৬ জুন ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে বিলাইছড়ি উপজেলায় ১২২ নং কুতুবদিয়া মৌজার বড়রোয়া/ বরপাড়া গ্রামে। পিতাঃ শিকল চান তঞ্চঙ্গ্যা ( মহাজন) ও মাতাঃ তন্যাপুরী তঞ্চঙ্গ্যা।
যাঁর সৃষ্টিকর্মের অনন্য এক উদাহরণ ১৯৭৯ সালে একক প্রচেষ্টায় গড়া ” রাঙ্গামাটি চারুকলা একাডেমি” নামে শিশু কিশোরদের চারু ও কারুশিল্পের তত্ত্বজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে আরও বিভিন্ন পৌরাণিক ও ঐতিহ্যবাহী বাহারি জিনিসের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন “চারুকলা একাডেমি মিনি জাদুঘর”।
চারুকলা প্রতিষ্ঠানটি সৃষ্টির পর থেকে বর্তমান অবধি চলমান রয়েছে অত্যন্ত গৌরবের সাথে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে নিজের ছাত্র-ছাত্রীরা লাভ করেছে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, স্বর্ণপদকসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা।
নীরবে কাজ করে যাওয়া প্রচার বিমুখ নিলোর্ভ ও ধীশক্তিমান এই মানুষটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা না পেলেও চারুশিল্পে অসামান্য অবদানের জন্য পেয়েছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, বান্দরবান কতৃক আজীবন সম্মাননা, বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান থেকে বহুবার গুণীজন সম্মাননা ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি কতৃক গুণীজন সম্মাননা।
তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইসমূহের মধ্যে চিত্রা-১৯৮৬, তঞ্চঙ্গ্যা জাতি- ২০০০, গীত পোই- ২০০৪, চারুকলা অনুশীলন-২০১১, আত্মচরিতাবলী-২০১২, আলোকিত তঞ্চঙ্গ্যা ভিক্ষু-২০১৮ উল্লেখযোগ্য।
বহুবিধ কর্মে দক্ষ, বৈচিত্র্যময় জীবনের অধিকারী এ কর্মবীরের বর্তমান বয়স চুরাশির ছুঁই ছুঁই। এখন আর আগের মত প্রানবন্ত সজীবতা নেই।
হাঁটতে-চলতে কষ্ট হয় বার্ধক্যের কারণে। সাহায্য নিতে হয় লাঠির উপর। তারপরও থেমে নেই নিজের শৈল্পিক হাত আর রংতুলি। এখনো ক্লাস নেন নিজের কোমলমতি ছাত্র- ছাত্রীদের। কেউ গেলে তুলে ধরেেন নিজের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের কথা, নিজের অভিজ্ঞতার কথা।
বহুগুণে গুণান্বিত এই মানুষটির সর্বদা সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।