দুই চিকিৎসকের ওপর হামলা,চট্টগ্রামে আজ প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের ঘোষণা চিকিৎসকদের

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
  • ২৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও মহানগরীর মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালের দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) চট্টগ্রামের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রাখবেন চিকিৎসকরা। সকাল ৬টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত ব্যক্তিগত চেম্বার, হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি, ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে নতুন রোগীর সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখার এ ঘোষণা দেয় চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা। তাদের পাঠানো গণমাধ্যমে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিএমএ যুগ্ম সম্পাদক ডা. মো. রবিউল করিম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, চট্টগ্রামের পটিয়া জেনারেল হাসপাতালে ঈদের আগের দিন রাতে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক রক্তিম দাশের ওপর হামলাকারী ছৈয়দ চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার ও আটক আসামির জামিন বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধসহ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার নেতৃবৃন্দরা।

গত ১৭ এপ্রিল পটিয়া ও ১৮ এপ্রিল দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রধান গেটে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশে বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীসহ বিভিন্ন সংগঠনের উপস্থিত বিভিন্ন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় বক্তারা বলেন, আমরা চিকিৎসকরা যখন অন্য পেশার ব্যক্তিরা ঈদ ও নববর্ষের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করার জন্য একসঙ্গে উপস্থিত থেকে উদযাপন করেন, তখন আমরা মানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রেখে জনগণের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি ছুটির দিনে গত ১০ এপ্রিল পটিয়া জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রক্তিম দাশ জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক সেই মুহূর্তে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সাইফুল্লাহ পলাশ নামের এক রোগীকে নিয়ে ছৈয়দ চেয়ারম্যানসহ তার স্বজনরা চিকিৎসা নিতে আসে। ডা. রক্তিম দাশ উক্ত রোগীর মুখের ভেতর রক্তক্ষরণ বন্ধ করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এক্স-রে করতে পাঠান।

ইতিমধ্যে জরুরি বিভাগে ১টি বাচ্চা শিশু শ্বাসকষ্টের রোগী ও একজন হৃদরোগের রোগী এসে চিকিৎসাসেবা নিতে আসে, ডা. রক্তিম দাশ উক্ত দুজন রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সময় সাইফুল্লাহ পলাশের এক্স-রে সহ তার স্বজন, বন্ধু ও ছৈয়দ চেয়ারম্যান এক্স-রে রিপোর্ট নিয়ে এসে সাইফুল্লাহ পলাশকে মুখের ভেতর ক্ষতস্থানে তাৎক্ষণিক সেলাই দেওয়ার কথা বলেন। ডা. রক্তিম দাশ অন্য দুজন শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে তাদেরকে অপারেশন থিয়েটারের সামনে বিছানায় রেখে ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে বলেন। অপেক্ষার কথা শুনে ছৈয়দ চেয়ারম্যান এবং সাইফুল্লাহ পলাশের ভাই মুকুলের নেতৃত্বে ডা. রক্তিম দাশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হামলা করে চিকিৎসককে মারাত্মকভাবে আহত করেন।

পরবর্তীতে ডা. রক্তিম দাশকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।
উক্ত ঘটনায় চিকিৎসকের ওপর হামলাকারী ছৈয়দ চেয়ারম্যানসহ ১০/১২ জনকে আসামি করে পটিয়া থানায় হাসপাতালটির নির্বাহী পরিচালক এস এম খাদেমী বাহাদুর বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম এবং পৌর মেয়র আইয়ুব বাবুল আসামিদের প্রত্যক্ষভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে মামলা না নেওয়া এবং আসামিদের গ্রেপ্তার না করার জন্য পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। মামলা রুজু হওয়ার পর আসামি ছৈয়দ চেয়ারম্যান সংসদ সদস্যের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে নববর্ষের অনুষ্ঠান উপভোগ করলেও পটিয়া থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার না করে আসামি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান।

বিএমএ, চট্টগ্রাম শাখা ও অন্যান্য পেশাজীবী চিকিৎসক সংগঠন, বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতি ডা. রক্তিম দাশের হামলাকারী ছৈয়দ চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য আসামি ও হামলাকারী বাকী আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হওয়ায় মানবতার সেবায় কর্ম চিকিৎসকরা নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা দিতে পারলে চিকিৎসার অভিযোগে চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে হামলা বন্ধ করার লক্ষ্যে সুরক্ষা আইন প্রনয়নে জনগণের স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হবে।

উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশে বিএমএ চট্টগাম শাখার সাধারন সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ফয়সল ইকবাল চৌধুরী পটিয়া জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রক্তিম দাশের ওপর হামলাকারী ছৈয়দ চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিএমএ, চট্টগ্রাম শাখা, স্বাচিপ, চট্টগ্রাম, অন্যান্য পেশাজীবী চিকিৎসক সংগঠন ও বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতি ও অন্যান্য অ্যাসোসিয়েশনের গত ১৭ এপ্রিল যৌথ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ২০ এপ্রিল শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেছেন চিকিৎসকেরা।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত সকল প্রকার প্রাইভেট প্র্যাকটিস (ব্যক্তিগত চেম্বার, হাসপাতালে নুতন রোগী ভর্তি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নতুন রোগীর সেবা) বন্ধ থাকবে। বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক এ পূর্ব দিনের ভর্তি রোগীর চিকিৎসাসেবা চলবে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পূর্বের রোগীর রিপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া যাবে, কোনো প্রকার নতুন রোগী এন্ট্রি বা সেবা দেওয়া যাবে না।

এ ছাড়াও ২১ এপ্রিল রবিবার এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফর উপলক্ষে ২১ এপ্রিল রবিবারের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করা হয়।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলেন, আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। মেডিক্যাল সেন্টারে ডাক্তার শিবলুর ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের জামিন বাতিলে আপিল করেছি আমরা। আমরা চাই আদালত আমাদের প্রতি সুবিচার করবেন। ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হলে আগামী মঙ্গলবারের পর আমরা আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করব। যদি এরমধ্যে আমাদের দাবি পূরণ হয়ে যায় তাহলে কর্মসূচি প্রত্যাহার করব কিনা সিদ্ধান্ত নেব।

এর আগে ২০ এপ্রিল চট্টগ্রামের সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসকরা। যদিও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার (২১ এপ্রিল) ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালনের কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফর উপলক্ষে একদিন আগেই কর্মবিরতি পালন করেন তারা।

আরো জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল রাতে পটিয়া হাসপাতালের এই ঘটনার রেশ না কাটতেই গত ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালে এনআইসিইউতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রিয়াজ উদ্দিন শিবলুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ডা. রিয়াজ বর্তমানে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা স্থিতিশীল হলেও এখনো তিনি শঙ্কা মুক্ত নয়। তাছাড়া এ ঘটনায় হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মারাত্মকভাবে জখম হয়েছেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions