ডেস্ক রির্পোট:- জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে বিএনপি ও আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি কায়সার কামালকে সরকারের এজেন্ট, নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে অপরাধী বলেও অভিহিত করেছেন। গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বারের ১নং কক্ষে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন। তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে আমাকে বহিষ্কার করার কোনো ভিত্তি নেই। সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনের সময় আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের ভূমিকা তদন্তের দাবি জানান তিনি। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে অংশ নেই। সেই নির্বাচনে আমরা ১৪টি পদের মধ্যে ১২টিতে জয়ী হতাম। কিন্তু কায়সার কামাল বার নির্বাচনে সরকারের প্যানেলের পক্ষে কাজ করায় আমরা সভাপতিসহ চারটি পদে জয়ী হয়েছি। অব্যাহতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে আমাকে অব্যাহতি দেয়ার কোনো বৈধতা নেই। কোন ধারায় আমাকে বহিষ্কার করেছে সে বিষয়টিও উল্লেখ করা নেই।
কারণ এই ফোরামের কোনো গঠনতন্ত্র নেই। গঠনতন্ত্র ছাড়া সংগঠন থেকে এর আগে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের বহিষ্কারও সঠিক হয়নি। প্রায় আধাঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনে পুরো সময়ই ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামালের পরকীয়ার বিষয়সহ নানা বিষয় নিয়ে সমালোচনা করেছেন।
আমি বিএনপি করছি, বিএনপি করবো: ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আমি বিএনপি করছি, বিএনপি করবো। আমরা চাই না কুলাঙ্গাররা শহীদ জিয়ার বিএনপিতে থাকুক। বারের সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে খোকন বলেন, জনাব তারেক রহমান আমাদের প্যানেল ঘোষণা করেছেন। বিএনপি’র কার্যালয়ে সকলের উপস্থিতিতে এই প্যানেল ঘোষণা দেয়া হয়। তারেক রহমান তো বলেনি তোমরা ভোট গণনায় যেও না, সভাপতির দায়িত্ব নিও না। দায়িত্ব নিও না- এ কথা বলার কায়সার কামাল কে? যদি আমরা ১২ পদে জয়ী হতাম তাহলে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের আন্দোলন শক্তিশালী করতে পারতাম। আসলে উনার উদ্দেশ্য ছিল সরকারকে ওয়াকওভার দেয়া। ভোট গণনা শুরু হলে আমাদের প্যানেলের (নীল) সবাই যখন এগিয়ে ছিল তখন তিনি (কায়সার কামাল) আমাদের দলের কেউ যেন ভোট গণনায় না থাকি। তিনি কার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নিলেন? দলের নেতা তারেক রহমান নিজে আমাদের মনোনয়ন দিয়েছেন, প্যানেল ঘোষণা করেছেন। তিনি তো আমাদের ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে, গণনায় উপস্থিত না থাকতে বলেননি। বার নির্বাচনে আমরা সরকারের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু কায়সার কামালের ষড়যন্ত্রের কারণে সেই যুদ্ধে পুরোপুরি জয়ী হতে পারিনি। উনি নির্বাচনের সময় উপস্থিত না থেকে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। তারেক রহমানের ঘোষিত প্যানেলের বিরুদ্ধে তিনি অবস্থান নিয়েছেন।
কায়সার কামালকে অর্বাচীন উল্লেখ করে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, ‘উনি একজন আত্মস্বীকৃত অপরাধী। তিনি কীভাবে আইনজীবীদের নেতা হন? নৈতিক স্খলনের কারণে দ্রুত আইনজীবী ফোরাম থেকে তার সদস্যপদ থাকা উচিত না। সরকারের এই এজেন্টকে দল থেকেও বহিষ্কার করা উচিত। আমি মনে করি কায়সার কামালের ভূমিকা বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্যদের তদন্ত করা উচিত। প্রয়াত আইনজীবী টিএইচ খানের মতো আইনজীবীদের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম গড়ে তোলা হয়েছিল উল্লেখ করে বার সভাপতি বলেন, সেই সময়ের আইনজীবী ফোরামকে কায়সার কামাল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম করেছে। এখনো এই সংগঠনের কোনো গঠনতন্ত্র নেই। আমাকে গঠনতন্ত্রের কোন সেকশন বলে অব্যাহতি দিলেন, সে কথা চিঠিতে উল্লেখ নেই। যদি গঠনতন্ত্র না থাকে তাহলে কীভাবে আমাকে অব্যাহতি দেন? এই অব্যাহতির সিদ্ধান্ত আইনগত কার্যকারিতা নাই। তিনি বলেন, আমি আইনজীবী ফোরামের কোনো পদে থাকতে চাইনি। একদিন কায়সার কামাল আমাকে ফোন দিয়ে সিনিয়র সহ-সভাপতি রাখা হয়েছে বলে জানান। জবাবে আমি তাকে বারণ করেছি। এতে বলেছি আমাকে রাখলে যেন সদস্য পদে রাখা হয়। কিন্তু তিনি (কায়সার কামাল) ব্যক্তি স্বার্থে আমাকে ফোরাম থেকে অব্যাহতির চিঠি দিয়েছেন। মেজর জিয়াউর রহমানের সময় থেকে, ১৭-১৮ বছর বয়স থেকেই বিএনপি’র ছাত্র রাজনীতিতে ছিলাম, এখন বিএনপি করছি, ভবিষ্যতেও থাকবো। পদ-পদবি কোনো বিষয় না।
একপর্যায়ে তিনি কায়সার কামালের পরকীয়ার বিষয় উল্লেখ করে বলেন, জুনিয়র আইনজীবীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার কারণে ধরা পড়েছেন। তাকে পিটিয়েছে। আপনারা হয়তো অনেকে জানেন না। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় নৈতিক স্খলনের মামলা, গ্রেপ্তার, হাইকোর্টে মুচলেকা দিয়ে জামিন নিয়েছেন। কিন্তু তিনি মুচলেকার শর্ত ভঙ্গ করেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের আগে একটি সভা করেছিলেন, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে মাহবুব উদ্দিন খোকন সংবাদ সম্মেলনে কায়সার কামালের কাছে গোয়েন্দা সংস্থার ওই সদস্যদের নাম প্রকাশের দাবি জানান। এ ধরনের ব্যক্তিকে দলে রাখা যায় না উল্লেখ করে তিনি কায়সার কামালকে দল থেকে বের করে দেয়ার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত শনিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খোকনকে ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে চিঠি দেয়া হয়। তবে রোববার যখন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন আইজীবীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন তখন তার অব্যাহতির খবর চাউর হয়।