শিরোনাম

মধুখালীতে মন্দিরে আগুন——- বিভিন্ন ইসলামী দলের নিন্দা প্রতিবাদ অব্যাহত,২ সহোদর হত্যাকাণ্ডে মুসলিম উম্মাহ ব্যথিত ও মর্মাহত

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৮২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- সম্প্রতি মধুখালীতে মন্দিরে আগুনের ঘটনা কেন্দ্র করে উগ্র হিন্দুদের হাতে ২ মুসলমান শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুরো মুসলিম উম্মাহ ব্যথিত ও মর্মাহত। বর্বরোচিত এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। নিহত ও আহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অন্যথায় যে কোন উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই তার দায়ভার বহন করতে হবে। মধুখালীর মন্দিরে আগুনকে কেন্দ্র করে উগ্র-সন্ত্রাসীদের পিটুনীতে দু’সহোদর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিভিন্ন ইসলামী দলের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। পৃথক পৃথক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
পীর সাহেব চরমোনাই : ফরিদপুরের মধুখালীর মন্দিরে আগুন দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উগ্রবাদিদের গণপিটুনিতে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত ও পাঁচজনকে আহত করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই। গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে আমীর বলেন, সম্প্রতি একটি বিশেষ সম্প্রদায় দেশে গোলযোগ বাধিয়ে দেশকে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতেই এধরনের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। অতীতেও দেখা গেছে বিভিন্ন মন্দিরে হামলার ঘটনায় যারা জড়িত তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক।
মুফতী রেজাউল করীম বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দেশ । এ দেশের অধিবাসীদের ধর্মীয় বিশ্বাসে বৈচিত্র থাকলেও আবহমানকাল থেকেই নিজেদের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে যার যার ধর্ম পালন করে আসছে। কিন্ত ১৯ এপ্রিল ফরিদপুরের মধুখালীর এক মন্দিরে আগুনের ঘটনায় কেবলমাত্র সন্দেহ করে দুই সহোদর মুসলমান শ্রমিককে হত্যা ও পাঁচজনকে আহত করার জঘন্যতম ঘটনা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। ইসলামী আন্দোলনের আমীর আরও বলেন, মধুখালী থানার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের কালী মন্দিরে ওই দিন সন্ধ্যায় আগুন লাগে। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত জানা যায়নি। ওইদিন সন্ধ্যায় মন্দিরে প্রদীপ জ্বালানোর প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই সেখানে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তখন মন্দিরের পাশে নির্মাণাধীন বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র সাতজন শ্রমিক ছিলেন। কিন্তু তাদেরকে কেউ আগুন দিতে দেখেনি বা তাদের আগুন দেয়ার হীন উদ্দেশ্য থাকতে পারে এমন সন্দেহ করার কোনো যৌক্তিক কারণ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপরও শুধুমাত্র সন্দেহ করে তাদের ওপর বর্বর ও নিষ্ঠুর হামলায় পিঠিয়ে হত্যা করেছে। যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ২ মুসলমান শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুরো মুসলিম উম্মাহ ব্যথিত ও মর্মাহত। চিহ্নিত এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় যে কোন উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই তার দায়ভার বহন করতে হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা মানসুরুল হাসান রায়পুরী ও মহাসচিব মাওলানা ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম এক বিবৃতিতে সংখ্যালঘু উগ্র-হিন্দুদের বর্বরোচিত হামলায় দু’নিরীহ সহোদরের মর্মান্তি হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মধুখালীর কালীমন্দিরে আগুন দেয়ার অভিযোগে নির্মাণ শ্রমিক আপন দুই ভাইকে নৃশংসভাবে যারা হত্যা করেছে অবিলম্বে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর বসবাস। ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে যুগ যুগ ধরে মানুষ সহঅবস্থান করছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদেরকে উগ্রতা পরিহার করে সংযত হতে হবে। না হয় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটবে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের সম্প্রীতির যে প্রশংসা রয়েছে এই সব অনাকঙ্খিত ঘটনার কারণে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা বহির্বিশ্বে ক্ষুন্ন হবে। জমিয়ত নেতৃবৃন্দ বলেন, অন্য ধর্মীয় উপাশনালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে না। মুসলমানদের বিরুদ্ধে বদনাম ও অপবাদ জুড়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মন্দিরে আগুন দেয়া হয়েছে কী না তা’খতিয়ে দেখতে হবে। তারা দু’ই সহোদরের হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত দোষী হিন্দুদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং নিহত ও আহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণষ দেয়ার জোর দাবি জানান।
খিদমাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন : খিদমাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী বলেন, মধুখালীতে নিরীহ মুসলমানদের হত্যার ঘটনায় সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের আবহমানকাল থেকে চলে আসা সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট হবার আশঙ্কা রয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এসব নিরীহ শ্রমিক মন্দিরের আগুন নেভাতে গিয়েছিল, তাদেরকে সন্দেহের বশীভূত হয়ে অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। যে কোন বিপদ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে দলমত ও ধর্ম নির্বিশেষে সবাই এগিয়ে আসে সেই অতীতকাল থেকেই। কারা পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে তাদেরকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তিনি নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুচিকিৎসার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
খেলাফত আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা: বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার আমির আলহাজ আতিকুর রহমান নান্নাু মুন্সি মধুখালীতে উগ্র-হিন্দুদের হাতে দু’ই সহোদর হত্যাকাণ্ডে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বলেন, মন্দিরে আগুনের ঘটনায় দলমত নির্বিশেষে সবাই ঘৃণা করে। কোনো ধর্মীয় উপশনালয়ে আগুন দেয়া হামলা করা মুসলমানরা সমর্থন করে না। কিন্ত মন্দিরে আগুন দেয়ার সন্দেহে নিরীহ দু’ই সহোদরকে নির্বিচারে পিটিয়ে হত্যা করা হিন্দু ধর্মাবলম্বিরাও সমর্থন করে না। কোনো প্রকার প্রমাণ ছাড়াই নিরীহ মুসলমান শ্রমিকদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত উগ্র-হিন্দুদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে ফাঁসি দিতে হবে। তিনি বলেন, মুসলমানরা শান্তির ধর্মের অনুসারী। অন্য ধর্মের ওপর আঘাত করা মুসলমানদের কাজ নয়। তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার জোর দাবি জানান।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি : সম্প্রতি ফরিদপুরের মধুখালিস্থ মন্দিরে আগুনের ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে দুই মুসলিম তরুণকে প্রকাশ্যে উগ্র হিন্দুদের হাতে নির্মম হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর আল্লামা ছরওয়ার কামাল আজিজি ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার। এক যুক্ত বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, কোন ধরণের প্রমাণ ছাড়া শুধু মাত্র সন্দেহের বশবতী হয়ে দুইজন নির্মাণ শ্রমিককে বর্বরোচিত কায়দায় পিটিয়ে মেরে ফেলার এই দুঃসাহস কোন ভাবেই বরদাশত করা যায় না। মন্দিরে আগুন দেয়া বা ভিন্ন ধর্মের উপর আক্রমণ বা আঘাত ইসলামের শিক্ষা নয়। বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর হিন্দুদের প্রতি কোন বৈরী আক্রমণাত্মক মনোভাব নেই এবং ছিলও না। আমরা হিন্দু মুসলিম এর সহাবস্থান ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী । একটি কুচক্রী মহল দেশ বিরোধী সুযোগ সন্ধানী মহল দেশের নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে বারবার এই ধরণের অপ্রিয়কর ঘটনার পাঁয়তারা করছে। এদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। বিরানব্বই ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীর এই দেশে দুই মুসলিম তরুণকে এভাবে বিনাদোষে পিটিয়ে মেরে ফেলার এই দুঃসাহস যারা দেখিয়েছে তাদেরকে কোন ছাড় দেয়ার প্রশ্নই আসে না। নেতৃদ্বয় অবিলম্বে এই লোমহর্ষক ঘটনার দায়ী খুনীদের চিহ্নিত করে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হলে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হবার আশঙ্কা রয়েছে। দু’ই সহোদর হত্যাকাণ্ডের জড়িতদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হলে সরকারকে কঠিন মাশুল দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন তারা।
ইসলামী ঐক্য আন্দোলন : ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের দুই মুসলিম সহোদর ভাইকে পিটিয়ে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এক যুক্ত বিবৃতি দিয়েছেন ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমীর অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মাদএরশাদ উল্যাহ ভূঁইয়া, নায়েবে আমীর প্রিন্সিপাল মুহাম্মাদ শওকাত হোসেন, মাওলানা মুহাম্মাদ রুহুল আমীন, ড. মাওলানা মুহাম্মাদ এনামুল হক আজাদ ও সেক্রেটারী জেনারেল মোস্তফা তারেকুল হাসান। নেতৃবৃন্দ বলেন, শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে উগ্র হিন্দুত্ববাদকে প্রমোট করার চেষ্টা এদেশের তৌহিদী জনতা কোনভাবেই মেনে নেবে না। একটি স্বাধীন দেশে, সভ্য সমাজে; অমানবিক ও অন্যায় ভাবে পিটিয়ে মানুষ মারা হলো আর সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকবে তা কি করে হয়। সরকারকে অবশ্যই এই জঘন্য ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে ফাঁসি দিতে হবে। সরকারের প্রতি আহ্বান; তদন্তের মাধ্যমে বিচার করে খুনিদের ফাঁসিতে ঝুলাতে হবে। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডে এদেশের তৌহিদী জনতার মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্ট করেছে। একই মায়ের দুইজন সন্তান এভাবে মারা হলো, প্রশাসন কি করে। সরকার কেন মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারছেন না। তাহলে কি বলা যায় সরকার ব্যর্থ। নাকি দাদা বাবুদের ভয়ে থরথর। এটা বাংলাদেশ, ভারত নয়; শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিশ্বের মডেল বাংলাদেশ। এখানে ঘোলা পানিতে কেউ মাছ শিকারের চেষ্টা করলে তা’বরদাশত করা হবে না। তাই সরকারের প্রতি আহ্বান, মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে হলে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং উক্ত পরিবারকে উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তা না তাহলে তৌহিদী জনতা দূর্বার আন্দোলন করে তুলতে বাধ্য হবে। তারা এসব ব্যাপারে শান্তিপ্রিয় সকল দেশপ্রেমিক নাগরিককে সজাগ দৃষ্টি রাখার অনুরোধ জানান।ইনকিলব

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions