চট্টগ্রামে ১৫ দিনে সড়কে ঝরল ৬০ প্রাণ,দুর্ঘটনার কারণ ও সুপারিশ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৮১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- প্রিয় সন্তান, স্বামী–স্ত্রী, স্বজন, প্রতিবেশী, সহকর্মী যে কেউ ঘর থেকে বেরিয়ে নিরাপদে আবার ফিরবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। রাস্তায় বেরুতেই যেন মৃত্যুর হাতছানি। নিহতদের স্বজনরা দাবি করছেন, দিনে দিনে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়া সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে অসময়ে অনেক স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটছে, থেমে যাচ্ছে অনেক পরিবারের গল্প। এ দুঃসংবাদ এখন যেন আমাদের নিত্যদিনের অঘটনে পরিণত হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মিছিলে প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় শোকাতুর পরিবারের বিলাপ আর আহাজারিতে ভারী হচ্ছে বাতাস।
ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনে যাতায়াতে দেশের সড়ক–মহাসড়কে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত এবং ১৩৯৮ জন আহত হয়েছেন। বিগত ঈদের চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১.২৫ শতাংশ, নিহত ২৪.০৮ শতাংশ, আহত ১৪৭.৪৩ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ সময়ে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় ২৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬০ জন। আহত হয়েছেন ১২৬ জন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবৎ পর্যবেক্ষণ করে আসছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ মানুষের বেশি যাতায়াত হয়েছে। সংঘটিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৪০.৫০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৪.২৮ শতাংশ ট্রাক–পিকআপ–কাভার্ডভ্যান–লরি, ৬.৫০ শতাংশ কার মাইক্রো জিপ, ৫.৯৬ শতাংশ নছিমন–করিমন–ট্রাক্টর–লেগুনা–মাহিন্দ্রা, ৬.১৪ শতাংশ অটোরিকশা, ১২.১১ শতাংশ ব্যাটারি রিকশা–ইজিবাইক–ভ্যান–সাইকেল ও ১৪.৪৬ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৬.৩১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৭.১১ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২২.৫৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা, ০.৫০ শতাংশ ট্রেন–যানবাহনে, ০.৫০ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে ও ৩ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩২.৫৮ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১০.০২ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৫০.৬২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৬.০১ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.২৫ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৫০ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঈদুল ফিতরে বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৯৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৫ জন নিহত, ২৪০ জন আহত হয়েছে; যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৯.৬২ শতাংশ, নিহতের ৪০.৫৪ শতাংশ এবং আহতের ৩০.৩৭ শতাংশ প্রায়। এছাড়া ৪০.৫০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৪.২৮ শতাংশ ট্রাক–পিকআপ–কাভার্ডভ্যান–লরি, ৬.৫০ শতাংশ কার মাইক্রো জিপ, ৫.৯৬ শতাংশ নছিমন–করিমন–ট্রাক্টর–লেগুনা–মাহিন্দ্রা, ৬.১৪ শতাংশ অটোরিকশা, ১২.১১ শতাংশ ব্যাটারি রিকশা–ইজিবাইক–ভ্যান–সাইকেল ও ১৪.৪৬ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, অবকাঠামো ভালো হওয়ায় যানবাহনের গতি বেড়েছে। গতিকে নিরাপদ করার মতো আইনি কাঠামো, দক্ষ চালক, মানসম্মত যানবাহনের অভাব রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সঠিক তথ্য–উপাত্তের অভাবে দুর্ঘটনার হার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কথা কেউ না বললেও সবাই জানান দুর্ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনা তদারকির দায়িত্বে বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ ও জেলা প্রশাসন থাকলেও কোনো দপ্তরেরই এ সমস্যা রোধে তাদের মধ্যে সমন্বয় নেই। চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলা পুলিশকে প্রতি মাসে সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে হয় এবং তা পাঠাতে হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।

সঠিক মনিটরিংয়ের অভাব ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোসহ প্রায় ৫০টি কারণে মূলত এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে নিরাপদ সড়ক চাই–এর (নিসচা) এক জরিপে উঠে এসেছে। নিসচার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর গড়ে ২ হাজারের উপরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় বছরে গড়ে ৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। সংশ্নিষ্টদের মতে, চালকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, যাত্রীদের অসতর্কতা, ট্রাফিক আইন না মানা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার করা, মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো এবং অসচেতনতার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।

সিএমপির উপ–পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক পশ্চিম) তারেক আহমেদ বলেন, আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং ড্রাইভারদের সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি ড্রাইভারদের মিনিমাম শিক্ষিত হতে হবে। পথচারীকেও রাস্তার নিয়ম কানুন মেনে পথ চলতে হবে। ড্রাইভারকে ট্রাফিক রুল মেনে চলতে হবে। জনসাধারণ যদি সড়কে সতর্কভাবে চলাচল করে এবং চালকরা যদি যানবাহন চালনায় সতর্কতা অবলম্বন করে তাহলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। আমরা সচেষ্ট আছি যাতে চালকরা ট্রাফিক রুল মেনে সতর্কতার সাথে গাড়ি চালায়। কোনো ধরনের ভুল করলে আমরা সাথে সাথে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। প্রতি মাসে চালক–হেলপারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চলছে।

দুর্ঘটনার কারণ ও সুপারিশ—–
যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল, মহাসড়কে রোড সাইন ও সড়কবাতি না থাকা, টার্নিং চিহ্ন না থাকা, সড়কে নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি ও ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা, উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো এসব দুর্ঘটনার কারণ। গতকাল সংস্থাটির সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়। খবর বিডিনিউজের।

এসব দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা, সড়কে আলোকসজ্জা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান, ধীরগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেন, চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে সমিতি।

এছাড়া ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা, সড়ক পরিবহন আইন যথাযথভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ, উন্নতমানের বাস নেটওয়ার্ক তৈরির পাশাপাশি বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও রোড সেইফটি অডিট করা ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বাতিল করার সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions