ডেস্ক রির্পোট:- তীব্র গরমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় জনজীবন যখন অস্থির হয়ে উঠেছে, তখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কিছু জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসলেও সেটি খুব বেশি স্থায়ী হবে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
গত কয়েক বছর যাবত দেখা যাচ্ছে, বৈশাখ মাসের এই সময়টিতে তাপমাত্রা এ রকম থাকে এবং এবারো সেটির ব্যতিক্রম হয়নি।
এপ্রিল মাসে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মনে উদ্বেগও বাড়ছে। সাধারণত দেখা যায়, গরম বাড়লে বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দেয়।
এমন অবস্থায় আবহাওয়া অধিদফতর যে পূর্বাভাস দিচ্ছে সেটি গরম নিয়ে দুশ্চিন্তা আরো বাড়িয়ে তুলছে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, আগামী ২০ এপ্রিলের পরে গরমের তীব্রতা আরো বৃদ্ধির পূর্বাভাস করা হচ্ছে।
আগামী ২০ তারিখের পর বিভিন্ন জায়গায় গরমের ব্যাপ্তি আরো বাড়বে,’ আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।
দেশের কিছু জায়গায় ইতোমধ্যে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এসব জায়গা হচ্ছে – রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গা।
আবহাওয়া অধিদফতর বলেছে, মৃদু তাপপ্রবাহে তাপমাত্রা থাকে ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবং মাঝারি তাপপ্রবাহে তাপমাত্রা থাকে ৩৮ ডিগ্রি থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপ প্রবাহের তেমন কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছে না আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেছেন, কয়েকদিন পরে ময়মনসিংহ, সিলেট এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিছু জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। তবে সে সম্ভাবনা কম বলে তিনি উল্লেখ করেন।
‘যে বৃষ্টিপাত হবে তাতে গরমের তীব্রতা কমবে না। গরমের তীব্রতা কমে আসার জন্য যে ধরনের বৃষ্টিপাত প্রয়োজন সেটির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না,’ বলেন তিনি।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগ বলেছে, গত বছরের এই দিনে অর্থাৎ ১৬ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। তখন তাপমাত্রা ছাড়িয়েছিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী সপ্তাহ নাগাদ ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁতে পারে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কেমন থাকবে?
বিদ্যুৎ বিভাগের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, সোমবার সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট। এতে ২৪৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় কোনো লোডশেডিং ছিল না।
বিদ্যুৎ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, মঙ্গলবার সর্বোচ্চ চাহিদা হবে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। অন্যদিকে সর্বোচ্চ উৎপাদন হবে ১৫ হাজার ৮৯০ মেগাওয়াট। সে হিসেবে লোডশেডিং হওয়ার কথা নয় বলে দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগের পরিসংখ্যানে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বিবিসি বাংলাকে বলেন, প্রতি বছর এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে। একদিকে গরম এবং অন্যদিকে সেচের চাহিদা। এবারো আমরা মনে করছি যে এপ্রিল মাসটাই হবে সর্বোচ্চ চাহিদা মাস।
তিনি বলেন, এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ চাহিদা হবে ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট।
‘গতবার আমরা ১৬ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন করেছি। এবার হয়তো ১৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন করতে পারবো। যদি লোডশেডিং হয়ও তাহলে ৫০০ থেকে এক হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করা লাগতে পারে,’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, জ্বালানি সংকটের কারণে হয়তো লোডশেডিং করতে হতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এক হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং খুব বেশি নয় বলে উল্লেখ করেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, এক হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি হলে হয়তো গড়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হতে পারে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা তাদের রয়েছে। কিন্তু জ্বালানি সংকটের কারণে সেটি কিছুটা ব্যহত হতে পারে।
রমজান মাসে দেশের গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক লোডশেডিং লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, গ্রামের বিদ্যুৎ না দিয়ে শহরাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা হয়েছে।
‘এই বক্তব্যটাকে ডিনাই করার কোনো সুযোগ নাই। কিছুটা এরকম ছিল। বিষয়টা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে। তিনি বলেছেন যে লোডশেডিং করার ক্ষেত্রে সব জায়গায় সমানভাবে হতে হবে,’ বলেন মোহাম্মদ হোসাইন। বিবিসি