ডেস্ক রির্পোট:- মাদকদ্রব্য বিক্রির টাকায় অস্ত্র সংগ্রহ করছে বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় জড়িত বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র পাহাড়ি সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এসব অস্ত্রের মাধ্যমে ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ, হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনায় লিপ্ত তারা।
সাম্প্রতিক সময়ে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেপ্তার অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এসব সন্ত্রাসী ধরতে বর্তমানে পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান চলছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের বান্দরবান, ভারতের মিজোরাম এবং মিয়ানমারের কেচিং প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী এই সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর বিচরণ। এসব এলাকায় কয়েক দশক ধরে মাদকের রমরমা ব্যবসা চলছে। একটি আন্তর্জাতিক চক্র এই ত্রিদেশীয় সীমান্তে শক্ত ঘাঁটি গেড়ে মাদকের টাকায় অস্ত্রের বাণিজ্যও করছে।
আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারী বেশ কিছু চক্র এখানে জড়িত।
সেখানে কেএনএফও রয়েছে। তারা মাদক বিক্রি করে নেতাদের হাতে অর্থ দেয়। সেই টাকায় নেতারা অস্ত্র কিনে তাদের হাতে দেন। এভাবে পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তার করতে চায় তারা।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গোয়েন্দা বিশ্লেষকরা বলছেন, মাদক বিক্রি, অপহরণ ও ব্যাংক লুটের টাকা দিয়ে কেএনএফ এসএমজি, চায়নিজ রাইফেল, একে-৪৭সহ আরো অনেক আগ্নেয়াস্ত্র কিনছে। বর্তমানে কেএনএফের চার শতাধিক সদস্যের কাছে এ ধরনের তিন শতাধিক অস্ত্র রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের রুমা, থানচি, রোয়াংছড়িসহ গহিন অরণ্যে তাদের বিচরণ। রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির পাশাপাশি মিয়ানমার এবং ভারতের মিজোরাম সিমান্তবর্তী এলাকায় রয়েছে শক্ত ঘাঁটি।
তাদের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে এসব এলাকায় নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। অস্ত্র কিনতে এই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরাও মাদক ব্যবসায় জড়িত।
র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন অরণ্যসহ কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় গোপনে অস্ত্র সংগ্রহ করছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা। এসব অস্ত্রের মাধ্যমে পাহাড়ে অপহরণসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত তারা। তাই কেএনএফসহ অন্যান্য গোষ্ঠী বা সংগঠনের কাছে অস্ত্র বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
র্যাব বলছে, কেএনএফসহ বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা এখন এক অপরাধের ঘটনা থেকে পাওয়া টাকা আরেকটা অপরাধের পেছনে খরচ করছে। এভাবে মাদক বিক্রির টাকা অবৈধ অস্ত্র কেনার কাজে ব্যবহার করছে তারা।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছেন তাঁরা। একই সঙ্গে মাদক বিক্রির টাকায় তারা অস্ত্র কিনছে। মাদকের টাকায় কেএনএফ অস্ত্র কিনছে বলে তথ্য পেয়ে যাচাই করছেন তাঁরা।
পাহাড়ে আফিম———-
২০২১ সালে বান্দরবানের থানচিতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে প্রায় চার কোটি টাকার নিষিদ্ধ আফিমসহ এক পাহাড়ি মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর সঙ্গে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের ঘনিষ্ঠতার তথ্য পেয়ে যাচাই করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সূত্র জানায়, থানচি উপজেলার সদর ইউনিয়নের হেডম্যানপাড়া সাঙ্গু ব্রিকফিল্ডসংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব ও বিজিবির যৌথ বাহিনী। এ সময় আফিমসহ মউসিং ত্রিপুরা (৩২) নামের একজন পাহাড়ি মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে তারা।
সূত্র জানায়, মউসিং ত্রিপুরার কাছ থেকে পলিথিন ব্যাগে মোড়ানো তিন কেজি ৮৫০ গ্রাম আফিম উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা আফিমের বাজারমূল্য আনুমানিক প্রায় চার কোটি টাকা। এ ঘটনায় থানচি থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করা হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সে সময় চট্টগ্রাম র্যাব-৭-এর কর্মকর্তা মেজর মুসফিকুর রহমান জানান, মাদকের একটি বড় চালান হাতবদলের খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয় থানচিতে। অভিযানে তিন কেজি ৮৫০ গ্রাম আফিম উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়া সম্প্রতি চট্টগ্রামের পাহাড়ি মাদকচক্রের শতাধিক ব্যবসায়ীর তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তারা ভিন্ন বেশে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) নূরে আলম মিনা বলেন, পাহাড়ে মাদক ব্যবসার তথ্য তাঁদের কাছে রয়েছে। কেএনএফসহ সন্ত্রাসী কিছু সংগঠন এসব মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। মাদকের টাকায় তাদের অস্ত্র কেনার তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।কালেরকন্ঠ