শিরোনাম
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৮৬০ ‘জুমল্যান্ড’ প্রতিষ্ঠার বায়না ধরেছে একদল চতুর দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী পাহাড়ে সংঘটিত সহিংসতার তদন্ত শুরু কাল,তদন্ত কমিটি প্রত্যাখ্যান ইউপিডিএফের রাঙ্গামাটিতে জামায়াত-শিবিরকর্মীদের মিডিয়া বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা রাঙ্গামাটিতে কুকুরের কামড়ে আহত ৮০ জুলাই-আগস্ট গণহত্যা: আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে পারবে বাংলাদেশ খুলে দেওয়া হলো তিস্তার ৪৪ জলকপাট, নদীপাড়ে আতঙ্ক রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে বিএনপি নেতাকে অব্যাহতি

সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ: পাহাড়ে আবার অশান্তির পাঁয়তারা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৯২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতিতে জড়িত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সামরিক শাখায় চার শতাধিক সদস্য রয়েছে। এসএমজি, চায়নিজ রাইফেল, একে-৪৭, বার্মিজ একনলা বন্দুকসহ তাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে তিন শর বেশি। পার্বত্য চট্টগ্রামের রুমা, থানচি, রোয়াংছড়িসহ গহিন অরণ্যে তাদের বিচরণ। রাঙামাটির বিলাইছড়ির পাশাপাশি মিয়ানমার ও ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী এলাকায় রয়েছে তাদের শক্ত ঘাঁটি।
তাদের সঙ্গে সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সম্পর্ক রয়েছে।

এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া কেএনএফ সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশ।

গত ৫ আগস্ট কেএনএফ তাদের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে হুমকি দিয়েছে, সরকারি চাকরি বা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের আশ্বাস দিয়ে কেএনএফের সঙ্গে আর কোনো বৈঠক নয়। বৈঠক হবে কেএনএফের দাবি ও রাজনৈতিক সমাধানের উপায় নিয়ে।
অন্যথায় সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পাহাড়কে অচল করে দেওয়া হবে। এভাবে তারা সেখানে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বলছে, সশস্ত্র এই সংগঠনের সদস্যরা চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ, সশস্ত্র হামলাসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে পাহাড়কে অশান্ত করে তুলছে। সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে পার্বত্য জেলা বান্দরবানসহ আশপাশের এলাকায় পর্যটন ব্যবসাসহ সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও জনজীবন হুমকির মুখে।
বিচ্ছিন্নতাবাদী দলটি পার্বত্যাঞ্চলের ৯টি উপজেলা নিয়ে আলাদা প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করতে চায়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে কেএনএফ। সংগঠনটি নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়ার কথা জানিয়েছে। গত তিন দিনে বান্দরবানের পাহাড়ি সংগঠনটি তিনটি ব্যাংকে ডাকাতি করেছে এবং এক কর্মকর্তাকে অপহরণ করেছে। এর ফলে পাহাড় আবার অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ ঘটনায় যে নামটি বারবার উঠে আসছে, তিনি নাথান বম। পুরো নাম নাথান লনচেও বম। বলা হচ্ছে, তিনি কেএনএফের প্রধান।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সূত্র বলছে, পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র কেএনএফ ২০১৬ সাল থেকে সক্রিয়। ২০২০ সাল থেকে তারা পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপকভাবে অপতৎপরতা শুরু করে। ২০২২ সালে তারা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (সামরিক শাখা) গঠন করে। এ বছরের অক্টোবরে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই জঙ্গি সংগঠন কেএনএফের আস্তানায় প্রশিক্ষণ নেয়। গত বছর জঙ্গি ও কেএনফের অনেক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তবে গত দুই বছরে পাহাড়ি এলাকায় অন্তত ৯টি বড় ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে কেএনএফ। গত বছর কেএনএফের সন্ত্রাসীদের চারটি হামলার ঘটনায় পাঁচজন সেনা সদস্য নিহত হন।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, গত বছর জঙ্গিদের সঙ্গে কেএনএফের সম্পর্ক নিশ্চিত হয়ে রুমা, থানচিসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযানের সময় কার্যত কেএনএফ অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ওই সময় ওই সব অঞ্চলে পর্যটন বন্ধ হয়ে যায়। কেএনএফের সঙ্গে সম্পৃক্ত বমরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মিজোরামে চলে যায়।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ফেসবুকে পেজ খুলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে কেএনএফ সংগঠনটি গড়ে উঠেছে বান্দরবানের রুমা উপজেলায়। স্থানীয় বাসিন্দা নাথান বম এটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে ২০১২ সালে কুকি-চিন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনস (কেএনডিও) নামে সংগঠন করেন। পরে ২০১৬ সালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামের সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে, যদিও সংগঠনটির লোগোতে প্রতিষ্ঠাকাল উল্লেখ করা আছে ২০০৮ সাল। পাহাড়ের দুই জেলা নিয়ে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণা দেয় তারা।

একাধিক সূত্র বলছে, কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যের সংখ্যা শুরুতে ১৫ থেকে ২০ জনের মতো ছিল। তবে এখন তাদের সদস্যসংখ্যা চার শর বেশি।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘র‌্যাব এর আগেও সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে কেএনএফের কার্যকলাপ শনাক্ত করে। তারা পাহাড়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া নামের একটি সংগঠনকে টাকার বিনিময়ে অস্ত্র সরবরাহ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। সে সময় জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সব সদস্য এবং কেএনএফের কিছু সদস্যকে আমরা আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হই। আমাদের অব্যাহত অভিযানের কারণে কেএনএফ অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল। এরই মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনারও উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে শান্তি আলোচনা চলাকালে তারা আবারও রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়।’

তিনি বলেন, গত ২ এপ্রিল তারা (কেএনএফ) রুমায় মসজিদ, ব্যাংক ও উপজেলা পরিষদে হামলা চালায়। তারা পরিকল্পিতভাবেই এই হামলা চালায়।

জামাতুল আনসারের সঙ্গে নাথানের সম্পর্ক

গত বছর ২৪ জুলাই পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার আল ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার যোগাযোগের নতুন তথ্য সামনে আনে র‌্যাব। জামাতুল আনসারের কথিত আমির মো. আনিসুর রহমান মাহমুদকে গ্রেপ্তারের পর নাথান বমের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগের কথা জানায় র‌্যাব।

কমান্ডার আল মঈন বলেন, এই আনিসুরের মাধ্যমে ঢাকার বাসাবো এলাকার একটি ভাড়া বাসায় আট মাস ছিলেন কেএনএফ নেতা নাথান বম। আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ কুকি-চিনপ্রধানকে বাসাটি ভাড়া করে দেন। বাসাটি ২০ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয়েছিল। আর নাথান বমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল আমিরের।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) তথ্য অনুযায়ী, নাথান বম যখন চারুকলার ছাত্র, জামাতুল আনসারের নেতা শামিন মাহফুজ তখন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। সে সময় তাঁরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ২০২২ সালের আগস্টে কুমিল্লা ও ঢাকার সাত কলেজছাত্র বাসা থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হন। অক্টোবরে কয়েকজনকে উদ্ধারের পর নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসারের নাম প্রকাশ্যে আসে।

র‌্যাবের দাবি, এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য ঘর ছেড়েছিলেন তাঁরা। অন্যদিকে পাহাড়িদের কাছে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত কেএনএফ সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বেশ কয়েক মাস ধরেই ছিল আলেচনায়। পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য তারা ‘কুকি-চিন রাজ্য’ নামের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।

জামাতুল আনসারের ১২ জন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব সংগঠনটির ‘বম পার্টি’র সঙ্গে সংযোগের কথা জানায়। পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনটির পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গি সংগঠনটির সদস্যদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে বলে সে সময় র‌্যাবের ভাষ্যে উঠে আসে। এই দুই উগ্র সংগঠনের সম্পর্কের বিষয়টি জানার পরই অক্টোবরে পার্বত্য চট্টগ্রামে সমন্বিত অভিযানে নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানের সময়ই কুকি-চিন বা ‘বম পার্টি’ নেতা নাথান বম ঢাকায় ছিলেন বলে র‌্যাব জানায়।

সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, কেএনএফ সদস্যদের সঙ্গে ‘জামায়াতে আরাকান’ নামের একটি ইসলামী জঙ্গি সংগঠনের সশস্ত্র গোষ্ঠীরও যোগসূত্র রয়েছে। এই দুই সংগঠনকে ঢাকার এক বম তরুণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলো অর্থ পাঠায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

র‌্যাব বলছে, ২০২০ সালের শুরুর দিকে নাথান বমসহ কেএনএফের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আসলাম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে গহিন পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিতে যান আনিসুর। সেখানে আসলামের তত্ত্বাবধানে তিনি প্রশিক্ষণ নেন।

কেএনএফ প্রতিষ্ঠাতা নাথান বমের সঙ্গে ২০২১ সালে জামাতুল আনসারের আমিরের সমঝোতা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে কেএনএফের ছত্রচ্ছায়ায় জামাতুল আনসার সদস্যদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাঁদের মধ্যে চুক্তিও হয়।

যেভাবে নাথান বমের উত্থান

পাহাড়িদের একটি পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে নাথান বম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি। পরের বছর তিনি বিশেষ কোটায় ভর্তি হন। ২০০৮ সালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ওই সংগঠনের পক্ষে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন নাথান। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাঁর আর ভোট করা হয়নি।

নাথানের গড়ে তোলা কেএনডিও পরে নাম বদলে হয় কুকি-চিন ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স (কেএনভি)। আরো পরে ২০১৯ সালের দিকে হয়েছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এর সশস্ত্র শাখার নাম দেওয়া হয় কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, বম পার্টি নামেও পরিচিত কেএনএফ। এর প্রতিষ্ঠাতা নাথান বম বর্তমানে ভারতের মিজোরাম রাজ্যে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মিয়ানমারের চিচিং প্রদেশেও তিনি থাকতে পারেন। সেখানে বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যদের অবস্থান রয়েছে।কালের কণ্ঠ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions