ক্যাম্পাস থেকে ‘পালিয়ে’ এসেও তোপের মুখে ড. শিরীণ!

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০২৪
  • ৫৮ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের পাশাপাশি ছাত্রলীগ নেতাদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা মামলার ‘খড়গ’ রেখে ভিসির দায়িত্ব ছাড়তে হলো অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে। দায়িত্বের শেষ দিন ক্যাম্পাসের উত্তপ্ত পরিবেশ টের পেয়ে তিনি সবার ‘অগোচরেই’ শহরস্থ মেয়ের বাসায় চলে আসেন। আর সেখানে এসেও পড়েন তোপের মুখে। অনেকেই বলছেন—‘এতদিন যাদের চাকরি দেবেন বলে আশ্বস্ত করে গেছেন তারা শেষ মুহূর্তে এসে হিসেব বুঝে নিতে ভিড় করছেন। আবার কেউ কেউ—‘মায়ের সম্পত্তি ভাগাভাগি চলছে’ বলেও উপহাস করতে দ্বিধাবোধ করছেন না!

বিভিন্ন সূত্র এবং সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাংলোতে যান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি চাকুরিপ্রত্যাশীরা। সেখানে তাকে না পেয়ে সবাই ছুটে আসেন চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন লাভলেইনস্থ ড. শিরীণের মেয়ের বাসার নীচে। রাত ৮টার পর থেকে ছোট ছোট গ্রুপে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এসে জড়ো হন সেখানে। আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. নুরুল আজিম শিকদারও। ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকেই রাত সাড়ে ১২টায়ও ভিসির বাসার আশপাশে দেখা গেছে। রাত গভীর হওয়ায় সাড়ে ১২টার পর তারা বাসার নীচ থেকে সরে লাভলেইন তাবলীগ মসজিদের সামনে জটলা হয়ে অবস্থান নেয় অনেকে।

অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের মেয়ে যে কলোনীর ফ্ল্যাটে থাকেন সেই কলোনীর মালিক পক্ষ ও চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠিত এক শিল্পপতির সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয় রাত সাড়ে ১২টায়। তিনি নিশ্চিত করেন, তারাবির আগ থেকে প্রচুর ছাত্র ভিড় করেছিলো কলোনীতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারাও আসেন।

ড. নুরুল আজিম শিকদারকে সদ্য বিদায়ী ভিসি নিজে এবং তার পরিবারের সদস্য দ্বারা হেনস্তা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন একাধিক ছাত্রলীগ নেতা। গভীর রাতে তিনি অপমান-অপদস্ত হয়ে ড. শিরীণ আখতারের মেয়ের বাসা ত্যাগ করেছেন বলেও জানিয়েন তারা। যদিও এসব বিষয়ে জানতে চবির সদ্য সাবেক উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার এবং চবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. নুরুল আজিম শিকদারের সাথে বারবার যোগাযোগ করতে চেয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে ড. শিরীণ আখতার চবির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই লেগে ছিলো আলোচনা-সমালোচনা। তার আমলে বেশিরভাগ সমালোচনা হয়েছে নিয়োগ বাণিজ্যে নিয়ে। অভিযোগ উঠেছিল—তার কাছের লোক দিয়ে তিনি নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। সহকারীর ফোন কল রেকর্ড ফাঁস হলে তাদেরকে বদলী করেই তিনি রক্ষা করে গেছেন। এছাড়া নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেওয়া নিয়োগ বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।

নিয়োগ ছাড়াও আছে বিভিন্ন নির্মাণ কাজে অনিয়মসহ নানান অভিযোগ। গত বছর মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ অনুষদের একাডেমিক ভবন উদ্বোধনে ৪৪ লাখ টাকা ব্যায়ের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য চেয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মন্ত্রী পরিষদ গঠন করলে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান চবির সাবেক শিক্ষার্থী ড. হাছান মাহমুদ। শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। দুই মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন সদ্য বিধায়ী ভিসি অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে এমন বিজ্ঞাপন নজীরবিহীন হওয়ায় ইউজিসি ব্যাখ্যা চায়। তখন নিজের ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে খরচ বহনের কথা বলে পার পান নিজের পুরো মেয়াদে নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সমালোচিত ভিসি ড. শিরীণ আখতার।

এদিকে আগেরদিন রাতে ভিসির দরজায় কড়া নাড়লেও পরেরদিন রেজিস্ট্রারের দপ্তরে ভিড় জমিয়েছেন অনেকে। বুধবার (২০ মার্চ) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের ‘কম্পিউটার ল্যাব সহকারী’ পদে নিয়োগ করা ব্যক্তিকে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের ভেতরে আটকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এসময় তারা রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নূর আহমেদকে ‘ছাত্রলীগের বাইরে সব নিয়োগ ক্যান্সেল’ করতে শাসাতে থাকেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এক নূর আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমার অফিসে এসে তারা এরকম আচরণ করেছে। এটা আমার জন্য অপমানজনক! আমি তো তাদের নিয়োগ দিতে পারবো না। নিয়োগ দেবেন ভিসি। তবুও তারা আমার এখানে এসে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৩ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে রুটিন দায়িত্বের অংশ হিসেবে ভিসির চেয়ারে বসেন তৎকালীন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। পরে তিনি ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি কর্তৃক চবি ভিসির পূর্ণ দায়িত্ব পান। এরমধ্যে তার বিরুদ্ধে উঠে আসে নিয়োগ বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগ। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের একটি বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। একপর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেখানকার জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের নাম সংবলিত একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠায়। এরই ভিত্তিতে অধ্যাপক আবু তাহেরকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে গত সপ্তাহে ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সেকান্দার চৌধুরীকে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions