শিরোনাম
বাণিজ্য সম্ভাবনায় ‘সেভেন সিস্টার্স’ দুবাইয়ে বিপু-কাজলের ২০০ কোটির দুই ভিলা পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে,প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে তাকিয়ে সবাই শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হবে কি এবার মারা গেলেন পরীমণির প্রথম সিনেমার পরিচালক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ, বদিউল বললেন, ‘বিবেচনায় রয়েছে’ বান্দরবানে নৌকা বাইচ দিয়ে ক্রীড়া মেলা শুরু রাঙ্গামাটিতে সাফজয়ী পাহাড়ের তিন কন্যাকে উষ্ণ সংবর্ধনা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়ি-তেলে আমলাদের আয়েশ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০২৪
  • ১৩৫ দেখা হয়েছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩১টি গাড়ি ব্যবহৃত হয় মন্ত্রণালয়ে।
মন্ত্রী ও সচিবের পিএসও নিয়েছেন অধিদপ্তরের গাড়ি।
বছরে জ্বালানি কিনতেই ব্যয় দুই কোটি টাকার বেশি।
চালক, রক্ষণাবেক্ষণের খরচও দিতে হয় অধিদপ্তরকে।

ডেস্ক রির্পোট:- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩১ গাড়ি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁদের মধ্যে মন্ত্রী-সচিবের পিএস, মন্ত্রীর এপিএস, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (স্বাস্থ্য) এবং তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারীও রয়েছেন। এসব গাড়ির জ্বালানি তেলের পেছনেই অধিদপ্তরের বছরে খরচ প্রায় দুই কোটি টাকা। চালকের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণসহ গাড়ির অন্য সব খরচও অধিদপ্তরের। বিপুল এই অর্থ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর অধিদপ্তরের গাড়ি ব্যবহারের এখতিয়ার নেই। অথচ তাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে গাড়ি ব্যবহার করছেন, জ্বালানি নিচ্ছেন। এসব গাড়ি ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি কিনতে সুদমুক্ত ঋণসুবিধাও নিয়েছেন।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই ৩১টি গাড়ির মধ্যে ২৮টি ব্যবহার করেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী। গাড়িগুলোর বেশির ভাগই পাজেরো (এসইউভি)। এর মধ্যে টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) একটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-০২০২) স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রীর এপিএস, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার একটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৫৮৯৮) মন্ত্রীর পিএস এবং একটি ক্যারিবয় (ঢাকা মেট্রো ঠ-১১-৮৬৬১) মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার (পিও) ব্যবহার করেন। রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার আরেকটি ক্যারিবয় (ঢাকা মেট্রো ঠ-১১-৩৬৩৫), স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর একটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৩৫২২) এবং অধিদপ্তরের টিওঅ্যান্ডই-বহির্ভূত একটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৪৮১৩) মন্ত্রীর দপ্তরে ব্যবহৃত হয়। ইপিআই কর্মসূচির একটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৮০২৫) বিএমআরসির চেয়ারম্যান, আরেকটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৮০২৩) স্বাস্থ্য সেবা সচিবের দপ্তর, আরেকটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৮০২২) মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য), রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৫৮৯৪) স্বাস্থ্যসচিবের একান্ত সচিব এবং একটি ক্যারিবয় (ঢাকা মেট্রো ঠ-১১-৭৪৯৯) মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য) ব্যবহার করেন।

রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার দুটি পাজেরোর একটি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-২৫৯৯) যুগ্ম সচিব (প্রকল্প বাস্তবায়ন) এবং অন্যটি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-২৫৯৩) যুগ্ম সচিব (পার) ব্যবহার করেন। এনসিডিসি শাখার একটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৬৭৭৪), এমআইএস শাখার একটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-০৮১২), হাসপাতাল শাখার তিনটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-২৯০৮, ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-০৪৪০ ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৬০৫৪) এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর দুটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-২৭৮৫, ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৩৫১০) ব্যবহার করেন যথাক্রমে যুগ্ম সচিব (পার-২), উপসচিব (পার-৩), যুগ্ম সচিব (প্রশাসন), অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) এবং বগুড়া মেডিকেল কলেজের পরিচালক। স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর দুটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-২৭৮৫, ঢাকা মেট্রো স্বাস্থ্য ঘ-১৩-৩৫১০) ব্যবহার করেন উপসচিব সংসদীয় কমিটি এবং সচিবের একান্ত সচিব। এমডিসি (মাইক্রোবিয়াল ডিজিজ কন্ট্রোল) কর্মসূচির দুটি ডাবল কেবিন পিকআপ (ঢাকা মেট্রো ঠ-১৩-২৭৭৬, ঢাকা মেট্রো ঠ-১৩-২৭৭৭) এবং দুটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৬৬৬৮, ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৯৪০৩) ব্যবহার করেন উপসচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য-২), উপসচিব (প্রশাসন-১), পরিচালক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং অতিরিক্ত সচিব, হাসপাতাল, ক্লিনিকসমূহ।
চিকিৎসা শিক্ষা শাখার একটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-২৯৭৪) ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব (চিকিৎসা শিক্ষা)। স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর চারটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৩৫২৬, ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-২৭৮৮, ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৩৫২২ ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৩৫১৪) ব্যবহার করেন যথাক্রমে বিএমআরসি, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (স্বাস্থ্য), গাজীপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং জামালপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ। রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার একটি অ্যাম্বুলেন্স (ঢাকা মেট্রো ক-৭১-০৭৪৪) সংসদ সচিবালয়ের মেডিকেল সেন্টারে এবং ইএসডি শাখার একটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-২৯১২) ‘পঙ্গু হাসপাতালের সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক ব্যবহার করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়ি-তেলে আমলাদের আয়েশ

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাতটি, এমএনসিঅ্যান্ডএইচ কর্মসূচির (ইপিআই) চারটি, জাতীয় পুষ্টি সেবার দুটি এবং এমআইএসের একটি গাড়ির জন্য মাসে জ্বালানি বাবদ অধিদপ্তরের খরচ ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৬ টাকা। এই ১৪টি গাড়ির জ্বালানি খরচ বছরে ৯৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। সে হিসাবে ওই ৩১টি গাড়ির জ্বালানি বাবদ অধিদপ্তরের ব্যয় দুই কোটি টাকার বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে অপারগতা জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয়ের উপসচিব থেকে শুরু করে যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ক্ষমতার অপব্যবহার করে অধিদপ্তরের গাড়ি ব্যবহার করছেন। মন্ত্রী ও সচিবের দপ্তরের নবম ও দশম গ্রেডের কর্মকর্তারা, এমনকি তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীও দীর্ঘদিন ধরে এসব গাড়ি ব্যবহার করছেন। সচিবালয়ের দু-একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অধিদপ্তরের গাড়ি উবারে ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছিল।

সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সব মন্ত্রণালয় মিলে সরকারি গাড়ি রয়েছে ১ হাজার ৭৫০টি। তবে প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। মন্ত্রীরাও বাদ যান না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়ি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, অধিদপ্তরের সব পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টরদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০২০ (সংশোধিত) অনুযায়ী, প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর থেকে গাড়ি সুবিধা গ্রহণ ও গাড়ি সেবা নগদায়ন করতে পারবেন। কিন্তু সুদমুক্ত ঋণ (৪০ লাখ টাকা) নিয়ে গাড়ি কিনলে যানবাহন অধিদপ্তরের গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না। সুদমুক্ত ঋণে কেনা গাড়ির পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাসে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। নীতিমালায় বলা হয়েছে, গাড়ির জন্য সুদমুক্ত ঋণ নেওয়া কোনো কর্মকর্তা সাধারণভাবে তাঁর দপ্তর থেকে রিক্যুইজিশন ভিত্তিতে কোনো গাড়ি সরকারি বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন না।

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা মূলত ক্ষমতার অপব্যবহার। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট না হলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কোনোভাবেই এসব গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। এখানে আরও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এ ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, যাঁরা এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।আজকের পত্রিকা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions