ডেস্ক রির্পোট:- টানা প্রায় ১৭ সাড়ে বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে, এর মধ্যে দু’টি জাতীয় নির্বাচনে পরাজয়, একটি প্রতিহত এবং একটি জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। দীর্ঘ এই সময়ে দলটির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মী পর্যন্ত সকলের ওপরই নেমে এসেছে হামলা-মামলা, জেল-জুলুম, নির্যাতন-নিপীড়ন। হাজার হাজার নেতা বছরের পর বছর ধরে ঘরছাড়া, জেল-জুলুম এড়াতে পলাতক জীবনযাপন করছেন। অনেকে সংসার খুইয়েছেন, কেউ কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়েছেন। আবার শত শত নেতা শত শত মামলা মাথায় নিয়ে আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরছেন। বছরের পর বছর ধরে জীবনের ওপর দিয়ে রাজনৈতিক সুনামির পরও এখন পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ রয়েছে জাতীয়তাবাদী ধারা ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলটির নেতা-কর্মীরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনেক প্রলোভন ছিল। ছিল মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব, ভীতি-আতঙ্ক সবকিছু। তারপরও নেতারা থেকেছেন অবিচল। হাতেগোনা দু-চারজন (লোভাতুর) ছাড়া দল ছেড়ে যাননি প্রভাবশালী ও ডাকসাইটের কোনো নেতাই। শত নির্যাতন-নিপীড়ন, হামলা-মামলা, প্রলোভনের মধ্যে দলের এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থাকেই বড় অর্জন ও সফলতা হিসেবে দেখছেন নীতিনির্ধারণী নেতারা। তবে এই দীর্ঘ সময়েও সরকারবিরোধী বড় আন্দোলন, কৌশল নির্ধারণ, জনগণের মনোভাব বুঝে কর্মসূচি ও বক্তব্য-বিবৃতি প্রদানে ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে পড়েছেন নেতা-কর্মীদের অনেকেই। এই অবস্থা থেকে দ্রুত দলকে কার্যকর আন্দোলন ও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে কর্মসূচি দিতে না পারলে আগামী দিনে এই ঐক্য ধরে রাখা বিএনপির জন্য কঠিন হয়ে পড়বে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপি যে সমাবেশগুলো করেছে তাতে দলটির প্রতি দেশের ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ মানুষের সমর্থন দেখা গেছে। কিন্তু ২৮ অক্টোবর লাখো জনতার সমাবেশে এক কর্নারে ‘মারামারি’কে কেন্দ্র করে দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতার বক্তৃতার মাঝপথে মঞ্চ ছেড়ে চলে যাওয়া ‘নেতৃত্বের দুর্বলতা’ প্রকাশ ঘটেছে। এই দুর্বলতা বুঝতে পেরে ক্ষমতাসীনরা শক্ত অবস্থান নেয়। তাছাড়া কর্র্র্মীদের চেয়ে নীতিনির্ধারক নেতারা পিছিয়ে থাকার বিপুল জনসমর্থনকে কাজে লাগাতে পারেনি দলটি। তবে বিএনপি বলছে, বর্তমান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ দেশে যেভাবে ফ্যাসিস্ট শাসন কায়েম করেছে, তাতে এই আন্দোলন কবে কখন সফল হবে তা সুনির্দিষ্ট দিন তারিখ বলা সম্ভব নয়। কিন্তু খুব শিগগিরই এই সরকারকে বিদায় করার ব্যাপারে আশাবাদী তারা।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, গত ১৬ বছর ধরে আমরা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে আছি। আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি না, এগিয়ে যাচ্ছি। হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের পাশ থেকে অনেক নেতা-কর্মী। অনেকে গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন। অনেকে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তাদের ফেরত পাব না। তারপরও আমাদের যে চলার গতি, যে গণতন্ত্র উদ্ধারের গতি, সেই গতি থেমে নেই। এটাই সংগ্রাম।
বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, যুদ্ধে কৌশলের অংশ হিসেবে কখনো কখনো পিছু হটতে হয়। কিন্তু পিছু হটা মানেই সব সময় হেরে যাওয়া নয়। এতে হতাশ হওয়ারও কিছু নেই। দ্বাদশ সংসদ বাতিল ও এক দফা দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে। আন্দোলন ক্রমেই বেগবান হবে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা জানান, ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পর বিএনপি প্রথম চাপে পড়ে ১/১১ এর সময়। সে সময় বিএনপি চেয়ারপাারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান ও বেগম জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। সে সময় ভয়াবহ নিপীড়ন নেমে আসে তাদের ওপর। পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ নেতা-কর্মীরা মুক্তি পেলেও সে থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপির ওপর নিপীড়ন থেমে নেই। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ২০০৯ সালে তারা ক্ষমতায় বসে। এরপর ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচন ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে টানা চতুর্থ বারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। টানা এ ১৭ বছরের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অসংখ্য নেতা-কর্মীকে সাজা দেওয়া হয়েছে। গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন বহুসংখ্যক নেতা-কর্মী। মিথ্যা গায়েবি মামলায় তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জর্জরিত।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধরী, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, লায়ন আসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিশ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে অনেকে জামিনে মুক্ত হলেও এখনো অসংখ্য নেতা-কর্মী কারান্তরীণ রয়েছেন।
এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মেজন (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ শাহজাহান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, হাবিব-উন নবী সোহেল, হাবিবুল ইসলাম, মীর শরাফত আলী সপু, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শামীমুর রহমান শামীমসহ ১৭শ’র অধিক নেতা-কর্মীকে গত কয়েক মাসে সাজা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীসহ সিনিয়র এমন কোনো নেতা নেই যাদের বিরুদ্ধে ২শ’ থেকে তিনশ’ মামলা নেই। তবে এত নিপীড়নের মধ্যেও বিএনপি নেতা-কর্মীরা দল ছেড়ে যায়নি এটিকেই সফলতা হিসেবে দেখছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
রাজনীতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বয়কট করলেও এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলটির ঐক্য ও মনোবল আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ, সরকারের ক্রমাগত চাপে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে অল্প কিছু নেতা ভোটে গেলেও বাকিরা বিশেষ করে সিনিয়র নেতারা হাইকমান্ডের প্রতি ছিলেন পুরো অনুগত। অথচ নির্বাচনের আগে দল ও রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন ছিল, বিএনপি ভোট বর্জন করলেও দলটির সিনিয়র অনেক নেতা স্বতন্ত্র কিংবা অন্য দল থেকে নির্বাচন করবেন। এতে করে ভোটকে ঘিরে দলে ভাঙন স্পষ্ট হতে পারে। নির্বাচনের আগে মহাসচিবসহ সিনিয়র ও গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা গ্রেফতার হলেও দলের সঙ্গে বেঈমানি করেননি, ভোটেও যাননি।
তবে এটা ঠিক, বিএনপি মিটিং-মিছিল ডাকলেই লাখো জনতা রাস্তায় নেমে এলেও দলটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির আন্দোলনকে ‘জন আন্দোলনে’ রূপলাভ করাতে পারেনি। মূলত দলটি যে দাবি ও দফাগুলো দিয়েছে তার প্রায় সবগুলোই নিজেদের স্বার্থে, জনস্বার্থ ছিল উপেক্ষিত। যে জনস্বার্থের কথা উল্লেখ ছিল তা কার্যত লোক দেখানো। জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মসূচি গ্রহণ এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মসূচি গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় দলটির প্রতি মানুষ তেমন আস্থাশীল হয়ে ওঠেনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জুলুম-নির্যাতন, লুটপাট, অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষ বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েছে। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া আর দলের একজন নেতাকে ‘রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা’ করার বাইরে তেমন কিছু করেনি। এমনকি নির্বাচনের সময় ‘ভারত নীরব থাকবে’ সে প্রত্যাশায় সীমান্তে হত্যা, মুসলমানদের ওপর বিজেপি সরকারের জুলুম, মুসলিম হত্যা, ভারতের বিভিন্ন ব্যক্তিদের বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি। ভারত আওয়ামী লীগের মতো দিল্লির তাঁবেদার দলকে বাদ দিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় আসার সুযোগ করে দেবে এমন ভাবনা ছিল রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার নামান্তর।
নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন ছিল, বিএনপি নির্বাচন বয়কট করলেও দলটির অনেক নেতা স্বতন্ত্র কিংবা অন্য দল থেকে নির্বাচন করবেন। বিশেষ করে নির্বাচন ঘিরে নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এবং তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে বিএনপির এক থেকে দেড়শ’ নেতা ভোট করবেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সফল হননি। বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপি থেকে ১১ জন সাবেক এমপি ভোট করেন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন বিএনপির। তবে তারা কেউ ডাকসাইটের নেতা নন। উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীকে এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এ কে একরামুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করেন। নাশকতার মামলায় গ্রেফতার হয়ে নির্বাচনের আগে জামিনে কারামুক্ত হয়েই আওয়ামী লীগে যোগ দেন শাহজাহান ওমর।
এ ছাড়া বিএনপির আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে বহিষ্কৃত নেতা মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামান, বহিষ্কার হওয়া ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, সাবেক এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা মোহাম্মদ শোকরানা নির্বাচন করেন। এদিকে নির্বাচনের আগে তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করে ভোট করেন বিএনপির বহিষ্কৃত সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বহিষ্কার হওয়া অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। অন্যদিকে নির্বাচনের আগে বিএনএমে যোগদান করে ভোট করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও দলের সাবেক এমপি শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। তবে তাদের মধ্যে কেবল শাহজাহান ওমর ও একরামুজ্জামান বিজয়ী হন। ভোটের আগে দল ও রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন ছিল, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ দল ছেড়ে বিএনএমের চেয়ারম্যান হয়ে ভোট করবেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি বিএনপির সঙ্গেই থেকেছেন।
এ বিষয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি বলেছি, এগুলো সরকারি প্রোপাগান্ডা, আমি বিএনপি ছেড়ে কোথাও যাব না। এই বয়সে তো আমার কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই। দুইবার মন্ত্রী হয়েছি আর কত? ৬ বার এমপি হয়েছি জনগণের ভোটে, গুড এনাফ। আমার তো নতুন দলে যোগদানের দরকার নেই, আমার কিংস পার্টি খোঁজার দরকার নেই। তিনি বলেন, ৩২ বছর দল করার পর দল ছাড়া কি এত সোজা নাকি? কেন ছাড়ব? একটা অজানা, অচেনা দলে কেন যাব? আমি দুই নম্বরি লোক না, দুই নম্বরি কথাও বলিনি।
বিএনএমে যোগদানের বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমি আগেও বলেছি, কেন আমি বিএনএমে যোগদান করিনি, কেন বিএনপি ছাড়িনি। আমাকে অ্যাপ্রোচ করেছেন তারা (বিএনএম ও সরকারের কিছু লোক), আমি প্রস্তাব গ্রহণ করিনি, বিএনপিতে রয়েছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, সরকার এদেশে বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছে। তারা বিএনপিকে ভেঙে নির্বাচনে আনার জন্য অনেক প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। মেজর (অব.) হাফিজ সাহেবকে দিয়েও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাকে শহীদ জিয়ার আদর্শ থেকে দূরে সরাতে পারেনি।
এদিকে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে যাওয়ায় নেতাদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে চিহ্নিত করে সঙ্গে সঙ্গেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি। তাদের দলে ফিরিয়ে নেওয়ার ন্যূনতম কোনো আগ্রহও নেই। যদিও নির্বাচন ঘিরে বহিষ্কৃতরা দলে ফিরতে চান, এমন কোনো কথা তারা এখনো বলেননি। তবে ভবিষ্যতে ভুল স্বীকার করে দলে ফিরতে আবেদন করলেও তাদের জন্য বিএনপির দরজা সহসাই খুলবে না। দলটির নেতারা বলছেন, তারা জেনে-শুনে-বুঝে বিএনপির সঙ্গে বেঈমানি করেছেন। বেঈমানির ফলও তারা পেয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রফেসর ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, অনেকে মনে করেছিল, সিনিয়র নেতারা তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি তেমন আস্থাশীল না। এমন অবস্থায় এবার ভোটে না গেলে বিএনপি হয়তো ভেঙে যাবে; কিন্তু আন্দোলন সামনে রেখে তারেক রহমান এবার খুব সুন্দর স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেন। দলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়ান তিনি। ফলে একেবারে তৃণমূল থেকে দলটাকে একটা সফল রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন। সে কারণে আমরা দেখেছি, আন্দোলনে সিনিয়র নেতাদের যত না সক্রিয় ভূমিকা ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ভূমিকা ছিল তৃণমূল থেকে উঠে আসা মধ্যম পর্যায়ের নেতাদের। তবে এটা সত্য, নানা কারণে বিএনপির আন্দোলন চূড়ান্ত সফলতা পায়নি। পাশাপাশি এটাও সত্য যে, সরকারি নানা চাপ ও প্রলোভন সত্ত্বেও একমাত্র শাহজাহান ওমর ছাড়া পদধারী উল্লেখযোগ্য কেউ ভোটে যাননি। এখানেই বিএনপির সফলতা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, হাজারো নেতা-কর্মীকে গুম করে, খুন করে, সাজা দিয়ে, লাখ লাখ নেতা-কর্মীকে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল ভাঙতে পারেনি সরকার। বরং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার অধীনে যেসব নির্বাচন হচ্ছে তাকে নির্বাচনই কেউ বলে না। সে কারণে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও ভোটে যায়নি। এ ধরনের নির্বাচন করে অতীতে প্রভুদের সহায়তায় পার পেলেও এবার আর পার পাবে না।
যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এত অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নের পরও বিএনপি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ আছে তা উপমহাদেশীয় রাজনীতিতে এর আগে কখনো দেখা যায়নি। তবে এখন এই আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে হবে না যে, বছরের পর বছর এটি থাকবে। সকলের কথা শুনে, কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে বিকল্প কর্মপন্থা চিন্তা করা উচিত। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন যেহেতু কাউন্সিল হচ্ছে না সেজন্য সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় পুনর্বিন্যাস করা উচিত।ইনকিলাব