বান্দরবান:- বান্দরবানরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বাইশফাঁড়ি-তুইঙ্গা ঝিরি সীমান্ত এলাকার বিপরীতে ওপারে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সেখানে নারায়ণ সং সেনা ক্যাম্পটি দখলে নিতে আজ সোমবার ব্যাপক গোলাগুলির শব্দে কেঁপে উঠছে সীমান্ত সড়কের আশপাশ এলাকা। এ ঘটনা ওপরের সাহেব বাজার ও ফকিরা বাজার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। প্রচণ্ড গোলাগুলির এই শব্দে পুরো বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী সড়ক কেঁপে উঠে আজ সোমবার বিকেলে।
মর্টার শেল ও বিমান হামলায় শব্দ শুনে পালিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে ৩৯ নম্বর পিলার এলাকায় সড়কে কাজ করা শ্রমিকেরাও। তারা দীর্ঘ দিন এ সড়কে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। তাদের মাঝি গুরা মিয়া বলেন, ‘গোলাগুলি বন্ধ হলে ২-১ দিন পর আবার কাজে ফিরব।’
অপর শ্রমিক আবদুল কাদের বলেন, ‘এত বড় গোলার টানা আওয়াজ আর কখনো শুনিনি। ২৫ মিনিটে ২৫টি মর্টার শেলের আওয়াজ শোনা গেছে। এ ছাড়া সন্ধ্যার পর এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত ভারি অস্ত্রের গোলার আওয়াজ শুনা যাচ্ছিল এ পয়েন্টে।’
একাধিক সূত্র দাবি, সীমান্তের কাছাকাছি সেনাদের এই নারায়ণ সং ক্যাম্পটি উঁচু টিলার ওপর। এখানে জান্তা বাহিনীর ৮০ জন সেনাসহ ১৩০ জন জান্তা সদস্য অবস্থান করছিল। যেটি মন্ডু শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে-আর ফকিরাবাজারের একটু দূরে এই নারায়ণ সং ক্যাম্প। যেটি বিদ্রোহী আরকান আর্মির সশস্ত্র গোষ্ঠী আজ সোমবার দুপুর থেকে দখলে নিতে হামলা শুরু করে। তবে এ গোলাগুলিতে ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের সংখ্যা জানা যায়নি।
লাশেরগন্ধ:
সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি ও সাপমারাঝিরি সীমান্তের ওপারে লাশের গন্ধ আসছে সীমান্ত এলাকায়। মাঝে মধ্যে গ্রামের ভেতরেও এ গন্ধ পাওয়া যায়। জামছড়ি গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান, মো. জহির ও ছৈয়দ হোসেনসহ অনেকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন বলেন, ‘সীমান্তের যে সমস্যা তা নিয়ে সকলে তটস্থ। এ গন্ধ ওপারের। এপারের নয়। সুতরাং আমাদের করার কিছু নেই। সীমান্তে বিজিবি রয়েছে। সব দেখভাল করছে। সীমান্তের লোকালয়ে পরিষদের অধীনস্থ মেম্বার, চৌকিদার ও দফাদারদের নির্দেশ দিয়েছি সব বিষয়ে সজাগ থাকতে।’
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, সীমান্তের বিষয় নিয়ে প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। ১৭ মার্চ বিকেলে সীমান্তের কাছাকাছি কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখেছেন। মানুষ কিছুটা তটস্থ থাকলেও তাদের স্বাভাবিক চলাচলে পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের ওপারে যাই হোক সেটি তাদের বিষয়। বাংলাদেশ সীমান্ত পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। অনুপ্রবেশসহ সব ধরনের বিষয়ে বিজিবি-প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।’
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মো. মুজাহিদ উদ্দিন পালিয়ে আসা ১৭৭ জান্তা বাহিনীর সদস্যদের বিষয়ে বলেন, ‘তাদের বায়োডাটার কাজ রিভিউসহ সবকিছু যাচাই-বাঁচাই করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অল্প দিনের মধ্যে হয়তো তাদের বিষয়ে নির্দেশনা আসবে, তখন তাদের ফেরত দেওয়ার কাজ শুরু হরু হবে।’
সীমান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গন্ধ আসুক বা আওয়াজ আসুক তা বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি কঠোর অবস্থানে আছে। অপর দিকে জেলা প্রশাসন সীমান্ত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে সরকার। বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’
জানা গেছে, গত ১১ মার্চ বাংলাদেশে ঢোকে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর ১৭৭ জন সদস্য। তারা নাইক্ষ্যংছড়ির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৪৫ এবং ৪৬ নম্বর সীমান্ত পিলার জামছড়ি এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে। তাদেরকে বতর্মানে নাইক্ষ্যংছড়ি জোন সদরের ১১ বিজিবি সংলগ্ন বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।