শিরোনাম
শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হবে কি এবার মারা গেলেন পরীমণির প্রথম সিনেমার পরিচালক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ, বদিউল বললেন, ‘বিবেচনায় রয়েছে’ বান্দরবানে নৌকা বাইচ দিয়ে ক্রীড়া মেলা শুরু রাঙ্গামাটিতে সাফজয়ী পাহাড়ের তিন কন্যাকে উষ্ণ সংবর্ধনা পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, মামলার প্রস্তুতি শেখ মুজিব দেশে ফ্যাসিবাদের জনক : মির্জা ফখরুল অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীর হাতে পিটুনি

‘বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস’ পালিত,‘অকার্যকর’ ভোক্তা অধিকার আইন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৪
  • ১১৬ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- দেশে ১৫ মার্চ ‘বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস’ পালিত হয়েছে। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালনে নানান আয়োজন করে ভোক্তা অধিদপ্তর। দেশে ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার আইনও কার্যকর করা হয়। কিন্তু এ আইনের যেমন নেই কার্যকারিতা, তেমনি নেই প্রচারণা, ভোক্তা সচেতনতা। ফলে অসৎ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট একের পর এক পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। ভোক্তাদের বেশি টাকা দিয়ে সে পণ্য ক্রয় করতে হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু আদেশ নির্দেশ এবং কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দায় সারছে। মূলত ভোক্তা অধিকার আইন অকার্যকর। ভোক্তারা বলছেন, তাদের কেউ আইন সম্পর্কে জানেন না। যারা জানেন তারা আইনের আশ্রয় নেন না। তাদের ভাষ্য মামলা করে অভিযোগ জানিয়ে বিচার পাওয়া যায় না। তাই অহেতুক মামলা করেন না।
জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আমাদের ভোক্তারা অধিকার সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন নন। এখন যে আইনটা আছে তার ফলে মানুষের সচেতনতা কিছুটা বেড়েছে। তারপরও দেশে যে হারে ভোক্তার অধিকার লংঘন হয় তার তুলনায় এখন পর্যন্ত অভিযোগের সংখ্যা অনেক কম। জনসচেতনতা আরো বাড়াতে হবে। অভিযোগ করলে মানুষ বিচার পায় সে বিশ্বাস বাড়াতে হবে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯ সালে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৫ বছরে ভোক্তাদের কাছ থেকে অভিযোগ এসেছে এক লাখ ২৩ হাজার ৭৫৩টি। এর মধ্যে এক লাখ ২১ হাজার ৩৬০টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। কিন্তু সে হারে ভোক্তাদের ঠকানো হচ্ছে এ সময় এই অভিযোগ কয়েক কোটি আসার কথা।
জানতে চাইলে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে কিছু দুর্বলতা রয়েছে। পুরোনো আইনটি যুগোপযোগী করা হচ্ছে। আগের চেয়ে আমাদের কার্যক্রম অনেক গতিশীল হয়েছে। আমরা অভিযোগের অনেকটা নিষ্পত্তি করছি। অনেক সময় অভিযোগকারীরা ডকুমেন্ট (প্রয়োজনীয় কাগজপত্র) দেন না। এ কারণে তা নিষ্পত্তি করাও সম্ভব হয় না।
২০০৯ সালে কার্যকর ভোক্তা অধিকার আইনে দেখা যায় কোনো সেবাদানকারীর অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসতর্কতায় সেবাগ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য বা জীবনহানি ঘটলে অনূর্ধ্ব তিন বছরের কারাদÐেরও শাস্তি রাখা হয়েছে। এছাড়া দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দÐে দÐিতের বিধান আছে। ফৌজদারি ব্যবস্থায় (ধারা-৫৭) মামলার মাধ্যমে অপরাধীর সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদÐ ও দুই লাখ টাকা অর্থদÐ বা উভয় দÐ দেওয়া যাবে। অন্যদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন সংশোধনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এতে শাস্তির ব্যাপ্তি আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেখানে দÐ ও জরিমানা বাড়ানো ছাড়াও ই-কমার্সকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের অবহেলা, অযোগ্যতা, অনৈতিকতার কারণে আইনটি কার্যকর হচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা বলছেন, গত দুই বছরে চাল, ডাল, চিনি, তেল, ব্রয়লার মুরগি, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্য বিভিন্ন সময় এমন ভাবে দাম বেড়েছে যে এক একটি পণ্যে ভোক্তাদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, সিন্ডিকেট যারা করে তারা এতোই শক্তিশালী যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সরকারকে বিপদে পড়তে হবে। সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী এ নিয়ে কথাও বলেছেন। বর্তমান সংসদের গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা জিএম কাদের একাধিকবার বলেছেন, সরকারের ভিতরে থেকে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। সরকার নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছিলেন, কালাবাজারে মজুদদারদের গণপিটুনি দিতে হবে। তারপরও পণ্যের দাম কমছে না। অসৎ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে যেসব কাজ ‘ভোক্তা-অধিকারবিরোধী কাজ’ এবং ‘অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হবে সেগুলো হলো সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত আদায়, বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন না থাকা, নোংরা পরিবেশে মানহীন ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও পরিবেশন, পণ্যে ভেজাল, ওজনে কম দেওয়া, বেশি দাম নেওয়া, ত্রæটিপূর্ণ পণ্য, ক্রেতার সঙ্গে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ ও মজুতদারি। দেশে অহরহ এমন ঘটনা ঘটলেও এ আইনের আওতায় অভিযোগ করা হচ্ছে কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে যে হারে ভোক্তার অধিকার লংঘন হচ্ছে, সে তুলনায় এখন পর্যন্ত অভিযোগের সংখ্যা অনেক কম। আবার অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও আছে ধীরগতি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ব্যাপ্তিও এখন বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রম। এছাড়া প্রতারণা কমাতে জনসচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। ভোক্তাদের বক্তব্য সরকার আইন করে দিয়েই বসে থাকে কোনো কার্যকর করে না। ফলে মানুষ একদিকে পণ্য কিনে ঠকে প্রতারিত হচ্ছে; অন্যদিকে অভিযোগ দায়ের করে ভোগান্তিতে পড়তে চায় না। তবে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান মনে করেন ভোক্তারা অধিকার সম্পর্কে খুব বেশি মানুষ সচেতন নন। এখন যে আইনটা আছে তার ফলে মানুষের সচেতনতা কিছুটা বেড়েছে। তারপরেও দেশে যে হারে ভোক্তার অধিকার লংঘন হয় তার তুলনায় এখন পর্যন্ত অভিযোগের সংখ্যা অনেক কম। জনসচেতনতা আরও বাড়াতে হবে।
রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জের বাজারে ভোক্তারা যে অহরহ প্রতারণা হচ্ছে তার একটি প্রমাণ মেলে ২০০৯-১০ থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অধিদপ্তর ৭২ হাজার ৯৩৭টি বাজার তদারকির তথ্য বিশ্লেষণে। কারণ এসব অভিযানে এক লাখ ৭০ হাজার ৯০৮টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতিটি অভিযানে দুই বা ততোধিক অপরাধের প্রমাণ মিলেছে। এ সময়ে মোট ১২০ কোটি ২৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে অধিদপ্তর।
জানা যায়, আইন অনুযায়ী ভোক্তারা প্রতারিত হয়েছেন মনে করলে পণ্য বা সেবা কেনার ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগ দায়ের করতে হবে। সেটা অবশ্যই হতে হবে লিখিত। ভোক্তা অধিকারে ফ্যাক্স, ইমেইল, ওয়েবসাইট ইত্যাদি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে অভিযোগের সঙ্গে পণ্য বা সেবা কেনার রসিদ যুক্ত করতে হবে। অভিযোগ অনলাইন ও সরাসরি দু’ভাবেই করা যায়। এর ফরম অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটেই আছে। অভিযোগ যথাযথভাবে দায়ের করলে অধিদপ্তর থেকেই শুনানির তারিখ জানানো হয় দুই পক্ষকে। এরপর একজন কর্মকর্তার সামনে শুনানি হয়। এসব বিষয়ে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ব্যবস্থা নিতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযোগকারী জরিমানার ২৫ শতাংশ ক্ষতিপূরণ হিসেবে পান।
আইনে যাই থাকুক আইনটির কার্যকর তেমন দেখা যাচ্ছে না। দেশের ভোক্তারা প্রতিদিন প্রতারিত হচ্ছেন। রমজান মাসে প্রতিটি পণ্য ক্রয় করে ভোক্তারা ঠকছেন। সরকারের দায়িত্বশীলরা কিছু আইন করে এবং লোকদেখানো অভিযান চালিয়ে কিছু ব্যবসায়ীরা জরিমানা করে দায় সারছে। এদেশের যখন কোটি কোটি ভোক্তা প্রতিদিন প্রতারিত হচ্ছেন, রমজান মাসে বেশি দামে পণ্য ক্রয় করে ইফতার-সেহেরি করছেন তখন ‘বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস’ পালিত হচ্ছে। ভোক্তা অধিদপ্তর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি, ভোক্তার স্বার্থে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করি’ শ্লোগান নিয়ে বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions