ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশ থেকে অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের তাড়ানোর লক্ষ্যে ‘অবৈধ বিদেশি খেদাও’ আন্দোলনে যোগ দিতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এ আন্দোলনের নেতারা। অবৈধ বিদেশি খেদাও আন্দোলন (Movement Against Illegal Foreigners) কর্তৃক আয়োজিত তরুণদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং অবৈধ বিদেশীদের প্রভাব (Rising Unemployment in Youth and Impact of Illegal Foreigners) শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান তারা।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০. ৪৫টায় মেজর মুজিবুল হক (অবঃ) এর সভাপতিত্বে এবং ব্যারিস্টার মেজর অবসরপ্রাপ্ত এম সরোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের কনফারেন্স কক্ষে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এম সরোয়ার হোসেন বলেন, অবৈধ বিদেশি শ্রমিকরা বাংলাদেশে এসে ট্যাক্স না দিয়ে আমাদের টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। এর কারণ হলো দেশে বিরাজমান অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনের কথা আমাদের স্মরণ আছে। ব্রিটিশ ভারতে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন হয়েছিল। দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে এবং জনগণ ও জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষা করা অতীব জরুরী। বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখার প্রয়াসে এবং সরকারকে বাধ্য ও সাহায্য করার জন্য অবৈধ বিদেশী শ্রমিক খেদাও আন্দোলন দেশের স্বার্থে সময়ের দাবি। তিনি জনগণের স্বার্থে, জাতীয় স্বার্থে এদেশের নাগরিকদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার স্বার্থে দল, মত, জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে দেশপ্রেমিক নাগরিকদের এই আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
গবেষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক লে: কর্নেল ফেরদৌস আজিজ (অব:) বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ লাভের অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং অনুচ্ছেদ ১৯ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার লাভের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। গত দেড় দশকে বাংলাদেশে বেকার সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে বেকারত্বের হার ১২%, যাহা এ যাবত কালের সর্বোচ্চ। বেকারত্বের সমস্যা এমন চরম আকার ধারণ করেছে যে এদেশে নাগরিক কর্মসংস্থান খুঁজতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে ভূমধ্যসাগরে মৃত্যু বরণ করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে গত দেড় দশকে বহু অবৈধ বিদেশী বাংলাদেশে অবৈধভাবে কর্মক্ষেত্র দখল করে রেখেছে। পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে ১০ লক্ষের অধিক বিদেশী শ্রমিক ও কর্মচারী বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত রয়েছে। ফলশ্রুতিতে এদেশের নাগরিকগণ যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ লাভের অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
এডভোকেট মো. মহসিন রশিদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সন্নিকটস্থ স্থানে ফুলের ব্যবসা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারত থেকে আসা ব্যক্তিবর্গ ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া কাজ করছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতীয় আধিপত্যবাদের নগ্ন চেহারা এদেশের মানুষ দেখেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যক্তিবর্গ বিষয়গুলো জেনেও অজ্ঞাত কারণেই আজ নিশ্চুপ। দেশের এই পরিস্থিতিতে তরুণ সমাজকে সচেতন হতে হবে। নেপাল, মালদ্বীপ আমাদের সামনে বড় উদাহরণ রয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী তরুণ সমাজকেই বেকারত্ব দূরীকরণে তাদের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় নিজের দেশ থেকে অবৈধ বিদেশীদের খেদাতে হবে। পাশাপাশি চীনা অনেক নাগরিক রয়েছে যারা কিনা অবৈধভাবে বাংলাদেশে কাজ করছেন। বাংলাদেশের সরকারকে পরিশুদ্ধ হতে হবে। দেশের জনগণের স্বার্থে কেবলমাত্র ভারতমুখী না হয়ে সংবিধান অনুসারে জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এছাড়া ভারতের মতো বৃহৎ রাষ্ট্রকেও বুঝতে হবে বাংলাদেশের মানুষের তথা তরুণ সমাজকে বেকারত্বের অভিশাপে ডুবিয়ে, কেবলমাত্র একটি দলের স্বার্থে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নীতি নির্ধারণ করলে বাংলাদেশের মানুষও আরো বেশি ভারত বিমুখ হয়ে উঠবে।
সভাপতির বক্তব্যে মেজর মুজিবুল হক (অবঃ) বলেন, রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে কর্মরত অবৈধ বিদেশি শ্রমিকরা ২০১৭ সাল থেকে ১০.২ বিলিয়ন ডলারের বেশি সমপরিমাণ টাকা এ দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ ২০২০ সালে বাংলাদেশের রেমিটেন্স এসেছে ১৮.৫ বিলিয়ন ডলার, অপরদিকে অবৈধ বিদেশীরা নিয়ে গেছে ১০.২ বিলিয়ন। অর্থাৎ আমাদের বাংলাদেশের শ্রমিকদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্সে অর্ধেকের বেশি অবৈধ বিদেশী কর্মচারীর মাধ্যমে বিদেশে বিশেষ করে ভারতে চলে যাচ্ছে। অবৈধ হওয়ার কারণে তারা ট্যাক্স ও ভ্যাট প্রদান না করে, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা নিয়ে যাচ্ছে, ফলে একদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মানবাধিকার ও জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। অজানা কারণে সরকার সমস্ত অবৈধ শ্রমিক স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
গোলটেবিল আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ উপস্থিত ছিলেন জনাব আব্দুর রহিম, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, জনাব নুরুল হুদা চৌধুরী মিলু, মেজর মো: ইমরান (অব:) প্রমুখ।