বান্দরবান:- চার মাস পর বান্দরবানে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির দ্বিতীয় দফা মুখোমুখি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রুমা উপজেলার বেথেল পাড়া কমিউনিটি সেন্টারে এ সংলাপ হয়। সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে বৈঠককে ঘিরে রুমা উপজেলায় বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
সংলাপে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষে সভাপতি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈ হ্লা’র নেতৃত্বে অন্যদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা, কমিটির সদস্য সিঅং খুশী, সিংইয়ং ম্রো, মনিরুল ইসলাম মনু, উজ্জ্বল তঞ্চঙ্গ্যাসহ ১৩ সদস্য; কেএনএফের পক্ষে সংগঠনের মুখপাত্র লাল জং ময় বমের নেতৃত্বে কেএনএফের ৮ জন সদস্য বৈঠকে অংশ নেন। অন্যরা হলেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক লালসাংলম, উপদেষ্টা লালএংলিয়ান, এক্সেকিটিভ মেম্বার পাস্টর ভানলিয়ান, গ্রাহাম বম, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রুয়াললিন বম, সাংপাহ খুমি, আজৌ লুসাই প্রমুখ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, সকালে ১০টায় কেক কাটা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংলাপ শুরু হয়। প্রথম দফায় চার মাস আগে গত বছরের ৫ নভেম্বর প্রথম মুখোমুখি বৈঠক হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক
জীবনে ফিরিয়ে আনা এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে উভয়ের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। কেএনএফের দাবিগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। কেএনএফ সদস্যরা পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন।
রিপ্রেজেন্টেটিভ ফর পিস ডায়ালগের সাধারণ সম্পাদক লালজংময় বলেন, পাহাড়ে চলমান সংঘাত, পর্যটকদের জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়া এবং অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কেএনএফ জড়িত নয়। কেএনএফ বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার এবং বিদেশে অবস্থানকারীদের ফিরিয়ে আনা, কেএনএফ সদস্যদের পুনর্বাসন করাসহ ৭ দফা দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো পূরণ করা হলে কেএনএফ সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সম্মত আছেন।
শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সভাপতি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈ হ্লা বলেন, সংলাপে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। পাহাড়ের সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং কেএনএফের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কেএনএফ ৭টি দাবি তুলে ধরেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার আলোচনার বিষয়গুলো নিয়ে আগামী এপ্রিলের মাঝামাঝি আবার তাদের সাথে বৈঠক হবে।
বিডিনিউজ সূত্রে জানা যায়, বৈঠক শেষে কেএনএফ প্রতিনিধিদলের সদস্য লালসংলম বম বলেন, বৈঠকে অনেকগুলো পয়েন্ট উত্থাপন করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম শান্তি বৈঠকে যেসব পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল, স্বাক্ষর করা হয়েছিল, সেসব বিষয় থেকে যেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি সেগুলোর সঙ্গে নতুন কিছু পয়েন্ট আমরা যুক্ত করেছি। এবারও ছয়–সাতটির মতো বিষয়ে সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছে। আশা করছি, সেসব বিষয়ে উনারা (শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি) কাজ করবেন। একটা সুফল বয়ে আনবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
আলোচনার মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে কিনা–সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে লালসংলম বম বলেন, অবশ্যই শান্তি ফিরে আসবে। আমরা সবসময় বিশ্বাস করি, সেই শান্তির পথ দিয়েই যাচ্ছি। একদিনে তো শান্তি হবে না। পারস্পরিক আলোচনা এবার দ্বিতীয়বারের মতো হয়েছে। সামনে আরও হবে। পর্যায়ক্রমে শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।