চট্টগ্রাম:- চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার ইছাপুর এলাকায় এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, আগুন লাগার সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১০টায় প্রায় নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে রাত সাড়ে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত পুরোপুরি নির্বাপণ হয়নি।
আগুন লাগার ঘটনায় গোডাউনে থাকা ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ১ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি (র সুগার) পুড়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার বিকেল ৩টা ৫৩ মিনিটে এস আলম গ্রুপের এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের ১ নম্বর গুদামে এ আগুন লাগে। কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জারটেক সংলগ্ন ইছাপুর এলাকায় ১১ মেগাওয়াটের এস আলম পাওয়ার প্লান্টের পাশেই এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলটি অবস্থিত। পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ দিয়েই চিনি কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম চলে। সূত্র জানায়, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও থাইল্যান্ড থেকে চিনির কাঁচামাল এনে পরিশোধন করা হয় দুইটি প্লান্টে। এর মধ্যে প্লান্ট ১ এর উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ৯০০ টন, প্লান্ট ২ এর উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ টন। থাইল্যান্ড ও ফ্রান্সের প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তায় এ কারখানাটি পরিচালিত হচ্ছে।
বিকালে ৪টায় আগুন লাগার খবর পাওয়ার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশনের ১৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভানোর চেষ্টা করে। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দেয় নৌবাহিনীর ১২ সদস্যের ২টি টিম, বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড, র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য।
আগুন লাগার পর ভেতর থেকে কুণ্ডলি পাকিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। রাত সাড়ে ১০টায় গুদামের বাইরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও গুদামের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপ–সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, গোডাউন ভর্তি র সুগার ছিল। পাঁচতলা ভবনের মতো উঁচু গোডাউনটির আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগুনে কোনো হতাহত নেই দাবি করে তিনি বলেন, আশেপাশের স্থাপনাগুলোতে আগুন ছড়ানো ঠেকানো গেছে।
এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিক বলেন, মিল চালু থাকা অবস্থায় আগুন চারদিকে ছড়িয়ে যায়। ভেতরে কেউ আটকা পড়েছে কি না বা কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত এর কিছুই জানতে পারিনি। আগুন নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, গোডাউনে থাকা ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ১ লাখ মেট্রিক টন চিনির কাঁচামাল ছিল, যা পুড়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কর্ণফুলী মডার্ন ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর শোয়াইব হোসেন মুন্সি বলেন, আলম নামে একজন বেল অপারেটর আহত হয়েছেন। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে এখনো জানা যায়নি। তদন্ত রিপোর্টের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, ওই চিনিকলে আমদানি করা কাঁচা চিনি পরিশোধন করা হয়। সেখানকার একটি গুদামে এই এক লাখ মেট্রিকটন অপরিশোধিত চিনি ছিল। সেগুলো সবই পুড়ে গেছে। আসন্ন রোজার জন্য এসব চিনি আমদানি করা হয়েছিল। বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন : কর্ণফুলী উপজেলার এস আলম গ্রুপের এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সার্বিক ও ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা এ কমিটি গঠন করেছেন।