ডেস্ক রির্পোট:- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সারা দেশে অননুমোদিত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আজ বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে ১১টি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সিলগালা ও সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
অভিযানে জরিমানা ও বন্ধ করে দেওয়া প্রতিষ্ঠানের কোনোটির লাইসেন্স ছিল না, কোনোটির ল্যাবের ফ্রিজে ওষুধের সঙ্গে রাখা ছিল মাছ-মাংস। কোনোটির অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই, আবার কোনোটির পরিবেশ নোংরা। সংশ্লিষ্ট এলাকার সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এ অভিযান চালায়।
ঢাকার ধামরাই উপজেলার ধামরাই বাজার ও ইসলামপুর এলাকার বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে অভিযান চালান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তারা। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিচালিত অভিযানে দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, একটি সিলগালা করে বন্ধ ও একটি বেসরকারি হাসপাতালকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নূর রিফফাত আরা বলেন, হালনাগাদ লাইসেন্স না থাকা ও টেকনোলজিস্টকে চিকিৎসক দেখিয়ে ল্যাব পরিচালনা করায় ধামরাই বাজারের আবির ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৫ হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ইসলামপুর এলাকায় ইসলামপুর জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে নোংরা পরিবেশ, ইমার্জেন্সি ট্রলি ও ওষুধ না থাকা, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকাসহ নানা কারণে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া আইকন ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সিলগালা করে দেওয়া হয়।
সিরাজগঞ্জ শহরে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তিনটি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে জরিমানা করা হয়েছে। লাইসেন্সের মেয়াদ নবায়ন না করায় শহরের পলি ক্লিনিক অ্যান্ড নিউ শমরিতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ২৫ হাজার; বিভিন্ন পরীক্ষার চার্ট না লাগানো ও চার্টের সঙ্গে ভাউচারের মিল না থাকায় ফজলুল হক সড়কের মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ১০ হাজার ও মুজিব সড়ক এলাকায় ১০ বেডের হাসপাতালকে ১৭ বেডে রূপান্তর, সার্বক্ষণিক চিকিৎসক না থাকায় কমিউনিটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরাগ সাহা বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালানো হচ্ছে। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় তিন প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের জীবননগর উপজেলায় তিনটি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীকে দিয়ে ল্যাব পরিচালনা, ল্যাবের ফ্রিজে মাছ-মাংস রাখা ও গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে তাঁদের জরিমানা করা হয়। দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো অংকন ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল সেন্টার; মেসার্স আল হেরা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেসার্স লাইফ কেয়ার ডক্টরস চেম্বার। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত অভিযান চলে। অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়লে বেশির ভাগ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক তালা ঝুলিয়ে সটকে পড়েন।
বেলা ১১টার দিকে অংকন ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল সেন্টারে অভিযানে যান জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সজল আহমেদ ও জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. মুস্তাফিজুর রহমান। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক আবু হেনাকে সঙ্গে তাঁরা ল্যাবে ঢোকেন। সেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, রিএজেন্ট ও কিট পাওয়া যায়। ফ্রিজে পাওয়া যায় মাছ ও মাংস। ব্যবস্থাপক স্বীকার করেন, ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের দিয়ে আলট্রাসনোগ্রাফি ও সাধারণ কর্মীরাই এক্স-রে করে থাকেন। পরে হাসপাতালের মালিককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানের বিষয়ে সজল আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা প্রতিপালিত হচ্ছে কি না, সেবাগ্রহীতা প্রতারিত হচ্ছেন কি না, যাঁরা ল্যাবে কাজ করছেন, তাঁরা প্রশিক্ষিত কি না, লাইসেন্স আছে কি না, সব বিষয় অভিযানে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অনুমোদন না থাকায় আটটি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশিদ। বৃহস্পতিবার সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে অনিয়ম দেখতে পেয়ে তিনি ক্লিনিকগুলো বন্ধের নির্দেশ দেন। এর কোনোটির লাইসেন্স নেই, কোনোটির লাইসেন্স হালনাগাদ করা নেই।
বন্ধের নির্দেশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আনোয়ারার বারশত ইউনিয়নের সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক ক্লিনিক; মহালখান বাজারের ডক্টরস পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার; চাতরী চৌমুহনী বাজারের আমিন বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং আনোয়ারা মা ও শিশু হাসপাতালের লাইসেন্স ছিল না। এ ছাড়া চাতরী চৌমুহনী বাজারের দি ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও স্টার ক্লিনিক্যাল ল্যাবের লাইসেন্সের মেয়াদ নেই। আর অভিযানের খবরে মহালখান বাজারের ছায়াপথ ক্লিনিক ও টাচ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজন পালিয়ে যান।
নোয়াখালী শহরের হাসপাতাল রোডে অনুমোদন না থাকায় মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে বন্ধ করে দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া জনতা জেনারেল হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় স্ক্যানু ও ইনডোর সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই সময় মাদারল্যান্ড হাসপাতালের অতিরিক্ত ১৮টি শয্যা, অস্ত্রোপচার কক্ষ, ইসিজি ও এক্স-রে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে সোনাইমুড়ী উপজেলার পপুলার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং আধুনিক শিশু হাসপাতালকে সেবার মানোন্নয়নের জন্য সতর্ক করা হয়।
নোয়াখালীর সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার বলেন, অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে দুটি হাসপাতালের কিছু কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটিকে সতর্ক করা হয়েছে। বৈধ কাগজপত্র ও প্রয়োজনীয় জনবল ছাড়া কেউ হাসপাতাল-ক্লিনিক পরিচালনা করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জামালপুরে স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের দেওয়ানপাড়া, পাঁচ রাস্তা ও গেটপাড় এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে অনুমোদন না থাকা ও অস্ত্রোপচার কক্ষ নোংরা থাকায় দেওয়ানপাড়া এলাকার অ্যাপোলো হাসপাতাল; শহরের পাঁচ রাস্তা এলাকার মা নার্সিং হোম অ্যান্ড হাসপাতাল; গেটপাড় এলাকার ইউনাইটেড জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জরিমানা ও অস্ত্রোপচার কক্ষ সিলগালা করে দেওয়া হয়।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উত্তম কুমার সরকার বলেন, অ্যাপোলো হাসপাতালকে ৫০ হাজার; মা নার্সিং হোম অ্যান্ড হাসপাতালকে ৩০ হাজার ও ইউনাইটেড জেনারেল হাসপাতালকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনটি প্রতিষ্ঠানের অস্ত্রোপচার কক্ষ সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।প্রথম আলো