চট্টগ্রাম:- আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। এরপর থেকে গত ২৮ বছরে এখানে ফ্লাইট পরিচালনা করতে এসেছে ১৭টি বিদেশি এয়ারলাইনস। এর মধ্যে ১৩টিই ইতিমধ্যে ব্যবসা বন্ধ করে চলে গেছে। আরও একটি যাচ্ছে আগামী মার্চেই। অথচ এই বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যাত্রী চলাচল বেড়েই চলেছে।
এয়ারলাইনস ও বিমানবন্দর-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাত্রীদের চাহিদা থাকলেও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো চলে যাচ্ছে। অথচ বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ৫৪০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প শেষের দিকে। রানওয়ে ট্যাক্সিওয়ে শক্তিশালীকরণসহ বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ এ প্রকল্পে রয়েছে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তসলিম আহমেদ অবশ্য দাবি করেন, বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে না। বরং তারা অন্য রুটে ভালো ব্যবসা পাচ্ছে, তাই সেই রুটে চলে যাচ্ছে।
সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করেছে দুটি বিদেশি এয়ারলাইনস। এরা হলো ভারতভিত্তিক স্পাইস জেট বিমান এবং কুয়েতভিত্তিক জাজিরা এয়ারওয়েজ। আর আগামী ৮ মার্চ থেকে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দেবে ওমান এয়ার। ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম-মাসকট রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু করেছিল তারা।
ওমান এয়ারওয়েজের চট্টগ্রাম স্টেশনপ্রধান মো. আসিফ চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৮ মার্চ চট্টগ্রাম থেকে ওমান এয়ারের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ থাকবে। তবে ঢাকা থেকে যথারীতি ফ্লাইট পরিচালিত হবে। শুধু নেটওয়ার্ক রি-রাউটিংয়ের কারণে এই রুটে ফ্লাইট সাময়িক বন্ধ হচ্ছে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এর আগে বিভিন্ন সময় বন্ধ হয়ে গেছে আরও ১১টি বিদেশি এয়ারলাইনসের আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট। এগুলো হলো থাই এয়ার, থাই স্মাইল এয়ার, কুয়েত এয়ার, ফুকেট এয়ার, ড্রাগন এয়ার, মালিন্দো এয়ার, রোটানা এয়ার, হিমালয়ান এয়ার, রাস আল কাইমা (আরএকে) এয়ার, টাইগার এয়ারওয়েজ, সিল্ক এয়ার।
বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক রুটে দুটি দেশিসহ মোট ছয়টি এয়ারলাইনস ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এগুলো হলো বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা, এয়ার অ্যারাবিয়া, ওমান এয়ার, সালাম এয়ার ও ফ্লাই দুবাই। এদের মধ্যে ওমান এয়ার আগামী ৮ মার্চ থেকে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দিচ্ছে।
বিমানবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, এখানে ১৯৯৬ সালে বিদেশি বিমান সরাসরি চালুর পর যাত্রীসংখ্যা বার্ষিক ৬ লাখ থেকে বেড়ে ১৬ লাখে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে ৯ লাখ ৬৮ হাজার যাত্রী আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গন্তব্যে গেছে। আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ।
বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনাকারী এয়ারলাইনস কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় এই রুটে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইট পরিচালনা গুটিয়ে নিচ্ছে।
চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইনস
স্পাইস জেট ও জাজিরা এয়ারওয়েজ চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের স্টেশন ম্যানেজার সুজিত বিশ্বাস বলেন, ‘এই বিমানবন্দরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অবকাঠামো। তার মধ্যে প্যাসেঞ্জার বিল্ডিংয়ের সক্ষমতা কম। ৬ লাখ যাত্রীর সক্ষমতা দিয়ে ১৬ লাখ হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে। ফলে অনেক ভোগান্তি তৈরি হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম বিমানবন্দর রানওয়ে দিয়ে এখন বাংলাদেশে আসা সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজ ‘বোয়িং ৭৭৭’ কিংবা ‘বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার’ এবং ‘এয়ারবাস এ ৩২০’ নামতে পারে। ফলে এখানে রানওয়ের সমস্যা নেই।
তবে একসঙ্গে তিন-চার শ যাত্রীর ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার জন্য পর্যাপ্ত কাউন্টার নেই বলে জানা গেছে। ব্যাগেজ বেল্টও পর্যাপ্ত নয়। বিমানবন্দরে থাকা দুটি লাগেজ বেল্ট একসঙ্গে কাজে লাগিয়েও যাত্রী সামাল দেওয়া যায় না। বেল্ট কক্ষেই যাত্রীদের জটলা লেগে যায়। আর যাত্রী বেশি হওয়ায় একেকটি লাগেজ পেতে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এয়ারলাইনস কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে এখন দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল করে না। সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ফ্লাইট চলে। কিন্তু আন্তর্জাতিক রুটের বেশির ভাগ বিমান সংস্থাই রাতের বেলায় ফ্লাইট চালাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বাসিন্দা কাতারপ্রবাসী মো. আনোয়ার বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে কাতারে সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় বাধ্য হয়ে ঢাকায় গিয়ে টিকিট কাটতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ দুটোই খরচ এবং ভোগান্তিও হচ্ছে।’
বিমানবন্দরের পরিচালক তসলিম আহমেদ বলেন, বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ৫৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে রানওয়ে ট্যাক্সিওয়ে শক্তিশালীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। একই প্রকল্পের আওতায় এখন লাইটিং সিস্টেম এবং ড্রেনেজ উন্নয়নকাজ চলছে, সেগুলো শেষ হতে ডিসেম্বর নাগাদ সময় লাগবে। তখন বিমানবন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়বে। আজকের পত্রিকা