বান্দরবান;- বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের দুই পাশে ২০১৯-২০ অর্থবছরে শোভাবর্ধনকারী বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করে বন বিভাগ। সম্প্রতি সাত প্রজাতির ৯৯টি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে (বিপিডিবি)। তবে বিপিডিবির ভাষ্য, বর্ষা মৌসুমে গাছগুলো ৩৩ কেভির একমাত্র বিদ্যুৎ লাইনে বিভ্রাট ঘটাতে পারে। এ আশঙ্কা থেকে গাছগুলো কাটা হয়েছে।
গাছ কাটার বিরুদ্ধে আইনে মামলা করার বিধান থাকলেও বিপিডিবির বান্দরবান নির্বাহী প্রকৌশলী ক্ষমা চাওয়ায় মামলার স্থলে সতর্ক করেছে বন বিভাগ।
বান্দরবান বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পরিচালন ব্যয় খাতের আওতায় বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের দুই পাশে ১৩ কিলোমিটার এলাকায় বনায়ন করা হয়। চারা রোপণের সময় বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন বা খুঁটি থেকে কয়েক ফুট ফাঁকা রাখা হয়। গত ৮ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি সড়কটির দুই স্থানে সাত প্রজাতির শোভাবর্ধনকারী ৯৯টি গাছ কেটে ফেলে বিপিডিপির বান্দরবান কার্যালয়। এর মধ্যে ৮ ফেব্রুয়ারি সড়কটির পর্যটন স্পট মেঘলা থেকে বান্দরবান কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পর্যন্ত ৭৭টি গাছ কাটা হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি গাছ কাটার সময় খবর পেয়ে সদর রেঞ্জ কর্মকর্তার নেতৃত্বে বন বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল বাধা দেয়। দুই ধাপে কেটে ফেলা হয়েছে ৬৪টি কৃষ্ণচূড়া, সাতটি সোনালু, চারটি জারুল, দুটি পলাশ, সাতটি কাঞ্চন ও ১৫টি রাধাচূড়া গাছ। গাছগুলো কাটা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। মাটি থেকে কোনোটি দুই ফুট, আবার কোনো কোনোটি ৩, ৪, ৫ ও ৬ ফুট পর্যন্ত গোড়া রেখে ওপরের অংশ কাটা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বান্দরবান বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেন সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা। প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বান্দরবান বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ হাওলাদার। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার বিপিডিপির বান্দরবান নির্বাহী প্রকৌশলীকে খবর দেয়া হয়। এরপর ডিএফওর কক্ষে প্রায় ২ ঘণ্টা বৈঠক হয়। বৈঠকে নির্বাহী প্রকৌশলী ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান ও মামলা না করতে বিশেষ অনুরোধ করেন। পরবর্তী সময়ে বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে গাছ কাটার অভিমতও ব্যক্ত করেন।
বান্দরবান বন বিভাগের ডিএফওর কক্ষে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিপিডিপি বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সৈয়দ আমীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘গাছ কাটার সময় বাধা দেন বন বিভাগের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীরা। তবে বর্ষা মৌসুমে দ্রুতবর্ধনশীল গাছগুলো ৩৩ কেভির একমাত্র বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন ছেয়ে ফেলতে পারে—এ আশঙ্কা থেকে গাছগুলো কাটা হয়েছে। কারণ গাছ ছেয়ে গেলে বিদ্যুৎ সংযোগে বিভ্রাট ঘটতে পারে ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। বৈঠকে বিষয়টির সমাধান হয়ে গেছে।’
বন বিভাগ বান্দরবানের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘বৈঠকে বিপিডিপির নির্বাহী প্রকৌশলী দুঃখ প্রকাশ করেছেন, ক্ষমা চেয়েছেন এবং সমন্বয়হীনতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সব শেষ মামলা না করতে অনুরোধ করেছেন। এজন্য বিশেষ বিবেচনায় মামলা করা থেকে বিরত রয়েছি। পরবর্তী সময়ে সমন্বয় ছাড়া এমন কাজ না করতে নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেয়া হবে।’বণিক বার্তা